সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: মাথার খুলি ও বুকের হাড়গোড় উদ্ধার
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
জাতীয়
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের এক মাস দুইদিন পর মাথার খুলি ও বুকের কিছুর হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (৬ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে ডিপুর ভেতরে ধ্বংসস্তুপ শেডের মধ্য থেকে এসব দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বনিক বার্তা২৪.কমকে বলেন,বুধবার সকালে শেড পরিষ্কার করতে গিয়ে ওখানের কর্মীরা কিছু দেহাবশেষ দেখে আমাদের জানায়। আমরা গিয়ে দুপুর ২টার একটু আগে দেহাবশেষগুলো উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছি। দেহাবশেষ বলতে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে মাথার খুলি ও বুকের দিকের হাড়গোড়।
আজকে এবং পরশু সোমবার উদ্ধার দেহাবশেষ গুলোকে একটি করে দেহ ধরেই হিসাব করছি। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ জন।
এরআগে সোমবার বিকেল পৌণে চারটার দিকে ডিপোর টিনশেডের নিচ থেকে কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সিলেটে ন্যায্যমূল্যের দোকানে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য কিনতে ভিড় করছেন ভোক্তা সাধারণ। প্রথম রমজান থেকে শুরু হওয়া সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সকাল ১১টা থেকে ন্যায্যমূল্যের দোকোনের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় ক্রেতাদের। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্যের মজুত শেষ হওয়ায় অনেকে ফিরেছেন খালি হাতে।
ভোক্তা সাধারণের সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রথম রমজানে জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে আলিয়া মাদরাসা মাঠে দোকানটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সরেজমিনে নগরীর চৌহাট্টাস্থ সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ৬৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ, ২৫ টাকায় আলু ও ডাল ৯৫, ছোলা ৯০ টাকা, তেল ১২৫ টাকা, আদা ১৫০ টাকা ও রসুন ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে পণ্য পেয়ে খুশি ক্রেতারাও।
সিলেট নগরীর কুয়ারপাড় থেকে বাজার করতে এসেছেন হিরন মিয়া। তিনি বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে সবকিছুর দাম অনেকটা কম। বাজারে ছোলা ১১০ টাকা, এখানে ৯০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এমন উদ্যোগ আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।
পেঁয়াজ ও রসুন কিনে মিরের ময়দানের বাসিন্দা আমিনা আফরোজ বলেন, আমাদের মতো গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই উদ্যোগ খুবই ভালো।বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি।
দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক শান্ত দেব বলেন, পুরো রমজান মাস আমাদের এই কার্যক্রম চলবে। আমরা চেষ্টা করছি ভোক্তাদের জন্য যতটুকু সহনীয় পর্যায়ে দাম রাখা যায়। সেই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ন্যায্যমূল্যের বাজার চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সব শ্রেণি পেশার লোকজন এখানে বাজার করছেন। প্রতিটি পণ্যে কমপক্ষে ১০-১৫ টাকা কম রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ট্রাক পণ্য বিক্রি করা হয়। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ভোক্তা সাধারণের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা যৌথভাবে ‘রমজান বাজার’ চালু করেছি। এই বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। এতে নগরবাসীর কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
নীলফামারীর ডোমারে এক নববধূকে ধর্ষণের অভিযোগে অনিল চন্দ্র রায় (৫০) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অনিল চন্দ্র রায় উপজেলার চিকনমাটি দোলাপাড়া এলাকার হলহলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অনিল চন্দ্র রায়ের ছেলে রনি চন্দ্র রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ভুক্তভোগীর। পরে তার ছেলে কাজে বাইরে গেলে। অভিযুক্ত কৌশলে ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন।
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাঈদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল ওহাবের সঙ্গে ২০১৯ সালের ৪ মার্চ একই গ্রামের স্কুল-শিক্ষক নুরুল আমিনের মেয়ে আসমাউল হুসনার বিয়ে হয়। বিয়েতে দেন-মোহরানা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটান স্বামী আব্দুল ওহাব। এ ঘটনায় গৃহবধূ আসমাউল হুসনা বিয়ের নকলসহ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মেয়ে পক্ষকে দেওয়া নকলে ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী এনকেএম লিটন মোল্লা দেনমোহর লিখেছেন ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। একই নিকাহ রেজিস্ট্রারে ছেলে পক্ষের নকলে দেনমোহর লিখেছেন ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। একই নিকাহ রেজিস্ট্রার একই বিয়ের নকলে দেনমোহর জালিয়াতি করায় উভয় পক্ষই নিজেদের দেনমোহর প্রতিষ্ঠা করতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলায় নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গ্রেফতার এড়াতে এতদিন উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন নিকাহ রেজিস্ট্রার এনকেএম লিটন মোল্লা। অবশেষে, উচ্চ আদালতের মেয়াদ শেষে সোমবার নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক জামিন না-মঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরাণপুর ইউনিয়নের চককেশব গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় ছিলেন লাইনম্যান। এক সময় দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। ২০০৫ সালের সে দুর্ঘটনায় তিনি তার দুটি হাত হারিয়ে ফেলেন।
চিকিৎসার খরচ পল্লীবিদ্যুৎ নিলেও নেয়নি তার ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব। তাই নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরছেন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ ৮ বছর। হাত নেই, পঙ্গু হয়েছে দুই পা। তবে কী হয়েছে তাতে! তবুও মুখ দিয়ে এঁকে চলেছেন একমনে বিভিন্ন রকমের ছবি।
ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম জানান, প্রথমদিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরতো। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারতাম। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। আমি বর্তমানে নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে বসে মুখের সাহায্যে পেন্সিল ও রঙ-তুলি দিয়ে ছবি আঁকি।
উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার চককেশব নিজ গ্রামে এক বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করছেন মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। গত ৪ বছর যাবত তিনি তার বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার কারণে নিজ বাড়ি চককেশব বালুবাজারে আছেন। তিনি ভালোবাসেন গ্রামবাংলা ও প্রকৃতির ছবি আঁকতে। নিজ বাড়িতে থেকে তার মুখ দিয়ে অঙ্কনকৃত ছবি প্রদর্শনী অসম্ভব। তবে তিনি যদি সুযোগ পান তাহলে তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চান।
তিনি বেশ গর্ব নিয়ে জানালেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় তার আঁকা ছবি দিয়ে অনেকগুলো প্রদর্শনী হয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল নিয়মিত। তাদের মাধ্যমেই ছবিগুলো আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। ছবির দাম নিয়ে দর দাম তেমন একটা করা হয় না। বেশিরভাগ সময়ই তারা খুশি হয়ে যা দেন, তাই নেন। বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোনোরকমে চলছে তার সংসার।
ইব্রাহিম’র বোন ছালেহা বলেন, ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় আঁকতে পারছেন না ছবিও। বিভিন্ন অসুস্থতায় রাজশাহীসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল এ যাতায়াত ও টেস্টসহ ইউরিন থলিতে জমা পানি নিয়ে চলছে জীবন।
মান্দা পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজর রহমান (উজ্জ্বল) বলেন, ‘মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও মাসিক ৩০ কেজি চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় আরো ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, যদি বড় পর্যায়ে কখনো তার প্রতিভাকে দেখানোর সুযোগ পান, তবে তিনি একদিন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবেন।
মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘দুই হাত নেই, তবুও তিনি মুখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন বিভিন্নরকমের ছবি। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা যে তার একটি বিশেষ গুন, তা তার ছবিগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। তবুও মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিমের স্বপ্ন একদিন তিনি মুখ দিয়ে ছবি এঁকে পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করবেন।’ এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে তার ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা এবং সরকার কর্তৃক সার্বিক সহযোগিতা আশ্বাস দেন তিনি।