মায়ের স্বর্ণ বন্ধক রেখে কোচিং সেন্টার দিয়েছিলেন সজীব!

নিহত সজীব
‘প্রায় ছয় মাস আগে আমার মায়ের স্বর্ণের কানের দুল আর গলার চেইন বন্ধ রেখে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে দিয়েছিলেন কোচিং সেন্টার। ভাইয়ের সঙ্গে ছিল তার বন্ধু জিসান, রিদুয়ান, রাকিব।’
শুক্রবার বিলাপের সুরে মিরসরাই দুর্ঘটনায় নিহত জিয়াউল হক সজীবের বড় বোন রিমা আক্তার কথাগুলো বলছিলেন। রাত আটটার দিকে হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়ের যুগিরহাট এলাকায় নিহত সজীবের বাড়িতে গেলে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়।
শোকে পাথর বড় বোন রিমা বলেন, এখানে এত মানুষ কেন আসছে। ওরা কি আমার ভাইক। এসে দিতে পারবে! আমার ভাই সারাদিন টিউশনি করতো। কোচিং করাতো। বন্ধু রাকিব, জিসান, রিদুয়ান মিলে আর এন্ড জে প্রাইভেট কোচিং কেয়ার নামের কোচিং সেন্টারটি দিয়েছে। মায়ের স্বর্ণ বন্ধ রেখে। মাকে বলতো- মা আমি তোমার টাকা দিয়ে ফেলবো। কিছুদিন পর মোবাইল কেনার জন্য আর কোচিং সেন্টারের জন্য কিস্তি ঋণ নিয়ে দিয়েছিল আমার মা।

অন্যদিকে ছোট বোন বলেন, আমার ভাইয়া কোচিং এর পাশাপাশি ৬ টিউশনি করতো। অনেক কষ্ট করতো। আজকে ঝরনায় ঘুরতে যাবার জন্য ৩-৪ দিন আগে থেকে প্লান করেছে সবাই মিলে। কাল রাতে ঘরে কিছু শুকনো খাবার এনেও রাখে।
আজকে সকালে যাওয়ার সময় আমার মা জড়িয়ে ধরে বিদায় দিয়েছিল। এসময় ভাইয়া মাকে আল্লাহ হাফেজও বলেছিল। মা ওদের গাড়িটা যতক্ষণ রাস্তা থেকে যায়নি ততক্ষণ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রাস্তা দাড়িয়ে থাকেন।
এদিকে মা শাহনাজ আক্তারের অবস্থা পাগল প্রায়। চোখ বড় করে চিৎকার দিয়ে বলে বিলাপ করছেন। বলছেন ছেলের জন্য নিজের স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে আর কিস্তি ঋণ করে টাকা নিয়ে দেওয়ার কথা।
জিউল হক সজীব চট্টগ্রাম শহরের ওরম গনি এমইএস কলেজের গনিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষকও ছিলেন। বন্ধু রিদুয়ান চৌধূরী, ওয়াহিদুল আলম জিসান ও মোস্তফা মাসুদ রাকিব মিলে দেন কোচিং সেন্টারটি।