পদ্মা-গড়াইয়ের মোহনায় দর্শনার্থীদের ভিড়



এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পদ্মা-গড়াইয়ের মোহনায় দর্শনার্থীদের ভিড়

পদ্মা-গড়াইয়ের মোহনায় দর্শনার্থীদের ভিড়

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়া শহর থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে হরিপুর ব্রিজ। ব্রিজ থেকে দুই পাশে গড়াই নদের উপচেপড়া সৌন্দর্য দেখতে দেখতে হাট হরিপুর পৌঁছে গেলাম। বাঁধ ধরে হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম একেবারে পদ্মার সংযোগস্থানে। এখানে গড়াই ও পদ্মা নদীর যুগলবন্দি।

গড়াই এসে মিশেছে পদ্মার সঙ্গে। ভারত থেকে গঙ্গা রাজশাহীতে ঢুকেছে। তারপর পদ্মা হয়ে মিলিত হয়েছে মেঘনায়। গড়াই এখানে মিলিত হওয়ায় তিনটি নদীপথ। পদ্মার একদিকে কলকাতা, অন্যদিকে বাংলাদেশ। কুষ্টিয়ার এখান থেকে গোয়ালন্দ। গড়াই গেছে শিলাইদহ হয়ে রাজবাড়ীতে। ফলে অপরূপ এক মোহনা সৃষ্টি হয়েছে কুষ্টিয়া শহরের কাছে, হরিপুরে। নয়নাভিরাম এই স্থানকে স্থানীয়রা বলেন ত্রিমোহনা। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ে এক মনোরম আবেশ সৃষ্টি হয় এখানে। বিকেলে সময় কাটাতে কুষ্টিয়া শহরসহ অন্যান্য এলাকার ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসেন প্রতিদিন। বিস্তীর্ণ জলরাশির গড়াই-পদ্মার এই মোহনাকে সাগর বলে আপনার কাছে ভুল হতে পারে।


দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সৌন্দর্যের জাল আরো জোরালোভাবে বিছিয়ে দিল ত্রিমোহনা। সূর্যের রক্তিম আভা পানিতে আছড়ে পড়ছে। সূর্যাস্তের লাল আভা গিলে খাচ্ছে নদীর স্রোত। এই সৌন্দর্য না দেখলে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। এখান দিয়েই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা-শিলাইদহ যাতায়াত করতেন। পদ্মা ও গড়াই নদীর স্মৃতি নিয়ে অনেক কবিতা-গান লিখেছেন কবি। গড়াইকে তিনি বলতেন গোড়াই। এমনটা উল্লেখ আছে তাঁর কবিতায়—‘গোড়াই নদীর চর/নূতন ধানের আঁচল জড়ায়ে ভাসিছে জলের পর/একখানা যেন সবুজ স্বপন একখানা যেন মেঘ/আকাশ হইতে ধরায় নামিয়া ভুলিয়াছে গতিবেগ/দুপুরের রোদে আগুন জ্বালিয়া খেলায় নদীর চর/দমকা বাতাসে বালুর ধূম্র উড়িছে নিরন্তর/রাতের বেলায় আঁধারের কোলে ঘুমায় নদীর চর/জোনাকি মেয়েরা স্বপনের দীপ দোলায় বুকের পর। ’


পদ্মার ওপারে পাবনা, পারমাণবিক কেন্দ্র রূপপুর। আরো আছে বিস্তীর্ণ বালুচর। সবুজের সমারোহ। নৌকার চলাচল আর ছোট ছোট লঞ্চে মাঝিদের জীবনের গল্প। আপনি চাইলে নৌকা কিংবা লঞ্চ ভাড়া করে নেমে পড়তে পারেন নদীতেও। নদীতে নেমে গেলে মনে হয় সাগর। কী বিশালতা। চারদিকে শুধু থইথই পানি আর পানি। এর মাঝে নৌকা ভাসছে, দুলছে। আমাদেরও ভাসতে ইচ্ছা হলো। দুই সঙ্গী লুত্ফর ও মালেককে নিয়ে মাঝারি আকৃতির একটি নৌকা ভাড়া করলাম। তাদের নিয়ে নাও ভাসালাম মাঝ দরিয়ায়। কিছুদূর যেতেই ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা এই ডোবে এই ভাসে অবস্থা। নৌকার এমন নাচুনিতে ভয়ই পেয়ে গেলাম।

আমলা মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে পদ্মা গড়াইয়ের মোহনায় বেড়াতে আসা একজন দর্শনার্থী গোলাম কিবরিয়া মাসুম জানান, দুই মেয়ে আর পরিবারের সকলকে নিয়ে ছুটির দিনে প্রায়ই বেড়াতে আসি এখানে। এতো সুন্দর অপরুপ সৌন্দর্য পরিবারের সকলকে নিয়ে উপভোগ করার মতো। পদ্মা গড়াই মোহনার কোল ঘেষে নদী রক্ষা বাঁধ করা হলেও রাস্তা না থাকায় চলাচলের খুব সমস্যা হচ্ছে। এই সৌন্দর্য দেখতে আসা দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য রাস্তার ব্যবস্থা করা না হলে এই সৌন্দর্য দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমতে থাকবে।


গড়াই-পদ্মার মিলনস্থলে নৌকাভ্রমণ দারুণ রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। জেলেদের মাছ ধরা, নৌকায় মালামাল পরিবহন, রঙিন নৌকায় ঝলমলে রোদের ঝিলিক অপূর্ব সৌন্দর্যের অবতারণা করে। ওপারের সবুজ গাছগাছালি ও চরাঞ্চলের সবুজ ক্ষেতের মনোরম দৃশ্যও দুচোখ ভরে দেখার মতো। সন্ধ্যাবেলায় নৌকাগুলো যেন পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির। পাশ থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভুটভুট শব্দে এ যেন মাতোয়ারা এক ত্রিমোহনা।

পদ্মার প্রধান শাখা নদ গড়াই। গড়াই নদের আর এক প্রান্ত গিয়ে মিশেছে মধুমতীতে। এই মিলন স্থান থেকে কিছুদূর গেলেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। এটি দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। তার আগেই পড়বে লালন শাহ সেতু। আর এক তীরে দেশের বৃহত্তম ডিজেলচালিত তাপবিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র। একটু সময় করে নৌকাভ্রমণে দেখা মিলবে এতগুলো বিখ্যাত স্থাপনার।

নৌকাভ্রমণ শেষে বাঁধে বসলাম। বিনোদনপিপাসুদের ভিড় হয় বিকেলবেলা। প্রেমিকযুগলেরও দেখা মেলে সারি সারি। বাদাম আর পটেটো চিপস খেতে খেতে ভুলে গেলাম সারা দিনের ছোটাছুটির ক্লান্তি। নদীর স্রোতের শব্দে হিমেল মৃদু হাওয়ায় গেয়ে উঠলাম, সাগরের তীর হতে, মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে, তোমার কপালে পরাব বলে ভাবি এ বিরলে।

কিভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কুষ্টিয়ার মজমপুর। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে পোড়াদহ বা ভেড়ামারা নামতে হবে। এরপর অটো কিংবা লোকাল বাসে কুষ্টিয়া। রাজশাহী বা খুলনার কিছু ট্রেন কুষ্টিয়ায়ও আসে। রাজবাড়ী বা গোপালগঞ্জ থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন। কুষ্টিয়া শহর থেকেই অটোতে তিন-চার কি.মি. দূরে হরিপুর ব্রিজ।

থাকা ও খাওয়া: থাকা ও খাওয়ার জন্য কুষ্টিয়া শহরে জায়গার অভাব নেই। বাজেটের মধ্যেই বিভিন্ন দাম ও মানের আবাসিক ও খাবার হোটেল পাবেন।

আরো যা কিছু

কুষ্টিয়ায় বেড়াতে এলে এখানকার বিখ্যাত তিলের খাজার স্বাদ নিতে ভুলবেন না। কুষ্টিয়ার কুলফি মালাইর স্বাদে মাদকতা আছে। একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে। শহরের কাছেই ছেঁউড়িয়া। মানে লালন সাঁইজির আখড়া। এখানেই লালন একাডেমি। বিখ্যাত বাউলসাধক লালন সাঁইজির মাজারের কাছেই তাঁর অনেক ভক্তের কবর। লালন একাডেমির ক্যাম্পাসও দেখার মতো! অপরূপ রঙ্গন ফুটে আছে ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রতিবছর লালনের জন্ম ও মৃত্যুদিনে (কার্তিক মাসে) মেলা হয়। তখন প্রচুর লোক-সমাগম হয়। যে কেউ গেলেই লালনের গান গেয়ে শোনান ভক্তরা। ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা। লালন গানের সুরে নিজেকে হারাতে চাইলে চলে আসতে পারেন।

   

সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য বন্ধে নীতিমালা হবে: প্রতিমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য বন্ধে একটি নীতিমালা তৈরি করার চিন্তা করছে সরকার বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে যেসব অনুমোদনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে, সেগুলো শিগগিরই বন্ধ করা হবে। পরবর্তীতে আবেদনের মাধ্যমে অনুমোদন পেলে তা পরিচালনা করতে পারবে।

গণমাধ্যমে অবাধ তথ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও মহলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীরা সঠিক নিয়মে কোন তথ্য চাইলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবারাহ করতে। কারণ সঠিক তথ্য নিশ্চিত না হলে মিথ্যা তথ্য প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

;

পাটগ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় আব্দুর রাজ্জাক (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে উপজেলার ঘুন্টি বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত আব্দুর রাজ্জাক রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে ট্রেনে করে লালমনিরহাটে আসেন বন্ধুর বাড়িতে বিয়ের দাওয়াত খেতে। তিনি দওয়াত খেয়ে পাটগ্রাম উপজেলার ঘুন্টি বাজার এলাকায় রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলার সময় লালমনিরহাটগামী একটি কম্পিউটার ট্রেন তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল-মমিন বার্তা২৪ কমকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

;

তিনদিন বন্ধের পর চালু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পঞ্চগড়
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি আসনের লোকসভা নির্বাচনের কারণে টানা তিনদিন বন্ধ থাকার পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক হয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকেই উভয় দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রী ও বিভিন্ন পণ্য বহনকারী গাড়ি উভয় দেশে প্রবেশ করেছে।

দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ ও পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের কারণে গত বুধবার থেকে শুক্রবার (১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত টানা তিন দিন পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন।

;

গতবারের চেয়ে এবারের ঈদে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের চেয়ে এবারের ঈদুল ফিতরে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ।

বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩শ ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩শ ২৮ জন নিহত এবং ৫শ ৬৫ জন আহত হয়েছিলেন। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১.২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪.০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪শ ৭ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩শ ৯৮ জন আহত হয়েছেন।

একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নৌপথে ২টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪শ ১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪শ ৩৮ জন এবং ১ হাজার ৪শ ২৪ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এবারও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষ বেশি যাতায়াত করেছেন। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনের গতি বেড়েছে। দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর ৭.৫ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিম্নবিত্তের লোকজনদের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩শ ৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪শ ৭ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩শ ৯৮ জন আহত হয়েছেন।

বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩শ ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩শ ২৮ জন নিহত এবং ৫শ ৬৫ জন আহত হয়েছিলেন। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১.২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪.০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১শ ৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১শ ৬৫ জন নিহত, ২শ ৪০ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ প্রায়।

এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৮৭ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪০ জন পথচারী, ৭৫ জন নারী, ৪৭ জন শিশু, ২৭ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন শিক্ষক, ১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) সড়ক দুঘটনায় আহত ৬শ ৫৮ জনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৬শ ৮ জন আহত রোগীর তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৪০.৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.২৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৬.৫০ শতাংশ কার, মাইক্রো জিপ, ৫.৯৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৬.১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২.১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ও ১৪.৪৬ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৬.৩১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ০.৫০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে, ০.৫০ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে ও ৩ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৫৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১০.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৫০.৬২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬.০১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে গত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে অবকাঠামো ভালো হওয়ায় যানবাহনের গতি বেড়েছে। গতিকে নিরাপদ করার মতো আইনি কাঠামো, দক্ষচালক, মানসম্মত যানবাহনের অভাব রয়েছে।

আইন প্রয়োগে দুর্নীতির কারণে জাতীয় মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নিষিদ্ধ ত্রি-হুইলার, ইজিবাইকের মতো যানবাহন অবাধে চলছে।

এছাড়াও ছোট ছোট যানবাহন মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকের অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনাও।

তিনি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধ করে দেশব্যাপী উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন ঠেকানো, আইন প্রয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে গণপরিবহনগুলোতে নগদ অর্থ বন্ধ করে ডিজিটাল লেনদেন চালুর দাবি জানান তিনি।

এতে সংবাদ সম্মেলনেন আরো উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুরন্নেছা খান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম-মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, মো. মহসিন প্রমুখ।

দুর্ঘটনার কারণ:
১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল।
২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো।
৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালক এসব সড়কে দুঘটনায় পতিত হয়েছে।
৪. মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশ:
১. জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা;
২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা;
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।
৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা;
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা;
৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা;
৭. সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা;
৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা;
৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা;
১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।

;