খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজির বস্তায় ২৭ কেজি চাল!

৩০ কেজির বস্তায় ২৭ কেজি চাল
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজি দরের চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে ওজনে কম দেওয়ার দায় নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার চরপুটিমারী ও চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৮টি ডিলার পয়েন্ট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩০ কেজির প্রতিবস্তায় ২৫ থেকে ২৭ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। সুবিধাভোগীরা চাল নিতে এসে প্রতিবাদ করেও কোন সুফল পাচ্ছে না। তাই তারা বাধ্য হয়েই ৪৫০ টাকা দিয়ে ২৫ কেজির চালের বস্তা নিচ্ছেন।
চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের ২৭১নং কার্ডধারী জাদু সেক ও ১৬৭৩ নং কার্ডধারী করফুলি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তারা ওজনে কম দিচ্ছেন আমাদের কিছুই করার নেই। ওজন কম দেওয়ার বিষয়টি ডিলারকে বললে তিনি জানায় গোডাউন থেকে আমরা যেমন বস্তা আনছি তেমনই দিতেছি।
চরপুটিমারী ইউনিয়নের ১৪৬ নং কার্ডধারী শফিকুল ইসলামসহ একাধিক কার্ডধারীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের কাছ থেকে ৩০ কেজির দাম ৪৫০ টাকাই নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বস্তাপ্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি করে চাল কম দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নেতাদের জানালেও কোন লাভ হয় নাই। আমরা গরিব মানুষ আমাদের কথা কে শুনে। বাধ্য হয়ে ঘাটতি বস্তা নিতেছি।
জানা গেছে, এ উপজেলায় ৫৩টি নিয়োগকৃত ডিলারের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৩৯৯ জন কার্ডধারী এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকার আওতায় রয়েছেন।
চরপুটিমারী ইউনিয়নের বেনুয়ারচর বাজারের ডিলার ইমরান মিয়া বলেন, আমি কেনো ওজনে কম দেবো। গোডাউন থেকেই বস্তাপ্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি করে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। আমরাও এর প্রতিকার চাই। তবে আমাদের ভুল হয়েছে গোডাউন থেকে সবগুলো বস্তা মেপে আনা উচিত ছিল।
ওই ইউনিয়নের ডিলার আব্দুস সামাদ বলেন, আমার মোট কার্ডের সংখ্যা হলো ৩৯৫ জন। প্রতিটি বস্তায় ২ থেকে ৩ কেজি করে চাল ওজনে কম ছিল। এ বিষয়টি গোডাউন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি, তারা এখানে এসেছিল তাদের সামনেই ওজনে কম দিয়ে বিক্রি করেছি।
চরগোয়ালিনীর শফিকুল ইসলাম ও চরপুটিমারী ইউনিয়নের আরাকানুজ্জামান, আবু রায়হানসহ একাধিক ডিলারের একই অভিযোগ করে বলেন, গুদাম থেকেই ২৫-২৬ কেজি ওজনের এমন বস্তা দেওয়া হয়েছে। আমরা কি করবো? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সমাধান হচ্ছে না। আমরাও চাই কার্ডধারীরা সঠিক ওজনে চাল পাক।
ইসলামপুর উপজেলার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, কিসের জন্য ওজনে কম দিবো, ডিলাররাই চাল ওজনে কম দিয়ে গোডাউনের অজুহাত দিচ্ছেন। আর তারা এমনটা কি কারণে করছে সেটা আমি জানি না। আমরা যখন চাল দেই তখন ডিলারদের ওজন করে সঠিকভাবে দেখিয়ে দেই। তারা মিথ্যা অভিযোগ তুললে আমার কিছুই করার নেই।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো ছেঁড়া ফাটা বা অন্য কোনও ভাবে ছিদ্র হওয়ার কারণে দুই চারটি বস্তায় কম হতে পারে, সংখ্যায় এত বেশি কম হওয়ার কথা না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হাসান রুমানকে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।