দিনবদলের অগ্রযাত্রার নায়ক শেখ হাসিনা



প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • Font increase
  • Font Decrease

বাঙলা ও বাঙালির পরম আপনজন শেখ হাসিনা। অসাম্প্রদায়িক, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে দিয়েছে এক আধুনিক ও অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কের স্বীকৃতি। অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এনে দিয়েছেন গৌরব আর সাফল্যের বার্তা। ২৮ সেপ্টেম্বর একুশ শতকের অভিযাত্রায় দিনবদল ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাণ্ডারি শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন।

১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে তার জন্ম হয়। পিতা শেখ মুজিব তখন কলকাতায় ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দাঙ্গা প্রতিরোধ এবং লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। দাদা শেখ লূৎফর রহমান নাতনির নাম রাখেন ‘হাসিনা’। প্রথম সন্তান জন্মের খবর পেয়ে বাবা হঠাৎ একদিন বাড়ি এসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ডাকলেন, ‘হাচুমণি’। মেয়ে কোলে নিয়ে কপালে এঁকে দিলেন স্নেহের চুম্বন। কে জানতো- সেদিনের ছোট্ট পরী ‘হাচুমণি’ই হবেন বাংলাদেশের কাণ্ডারি; জনতার প্রিয় নেতা! বিশ্বনেতৃত্বে তিনি এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে টুঙ্গীপাড়ায়। প্রাথমিক শিক্ষা-জীবন শুরু সেখানেই।এরপর ঢাকায় এসে আজিমপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করে তিনি ভর্তি হন গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ; যা বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।ওই কলেজে পড়াকালে ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে কলেজছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে এর আগেই অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে তিনি প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে বারবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাই মা শেখ ফজিলাতুন্নেছার ছায়াসঙ্গী হয়েই কেটেছে শেখ হাসিনার।

এ সময় পিতার রাজনৈতিক জীবনকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখে দেখে নিজেকেও ওতপ্রোতভাবে রাজনীতিতে আদর্শ নেতা হিসেবে গড়ে তোলেন।শেখ হাসিনা একজন আত্মপ্রত্যয়ী, মানবতাবাদী, দূরদর্শী নেতৃত্বের অধিকারী। যার প্রকাশ ঘটেছিল সেই ছাত্রজীবনেই। তবে তারুণ্যের সেই দিনগুলো থেকে আজকের শেখ হাসিনা অভিজ্ঞতায় অনেক সমৃদ্ধ। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি খুবই ঋদ্ধ।

বুদ্ধিমত্তা আগের মতই প্রখর, সহনশীলতা ও দৃঢ়তা, ধৈর্য, যেন তার চরিত্রগত ধর্ম। ভালোবাসায় ও সহমর্মিতায় তিনি সবার কাছে প্রিয় এবং বাঙলার মানুষের অতি আপনজন। তাই আজ আমাদের কাছে গর্বের বিষয় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে জনগণের কাছে নন্দিত। জনমানুষের এই নেতা এখন বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনা শেখ হাসিনার জীবনে অনেক বড় বেদনাদায়ক ঘটনা, এক গভীরতম ট্রাজেডি।

এই শোক তাকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যেতে শক্তি দিয়েছে, করে তুলেছে আরও দায়িত্বশীল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১- দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল সংকটময়। সংশয় প্রতিহিংসা-দমনপীড়ন ও শোষণে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। কাণ্ডারিহীন ‘নৌকা’য় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে প্রবাসে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা স্বভাবতই শেখ হাসিনার জীবনে বেশ বড় একটি বেদনাদায়ক ও গভীরতম ট্র্যাজেডি। এই ঘটনার পর টানা ছয়বছর তাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। মুজিববিহীন বাংলাদেশে তাকে পেয়ে যেন মানুষ নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করলো। সেই দিক দিয়ে শেখ হাসিনার এই ফিরে আসা ছিল- গণতন্ত্রের ফিরে আসা, দেশের উন্নয়ন ও প্রগতি এবং আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবির ফেরা।

দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশের লাখ লাখ জনতা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আমি বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, আমি বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকতে এসেছি। বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। আপনারাই আমার পরম আত্মীয়। … আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে নামতে চাই। মৃত্যুকে ভয় পাই না। বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষের জন্যই জীবন দিয়েছেন। আমিও প্রয়োজনে বাবার মতো আপনাদের জন্য জীবন দিব।

তার এই বক্তব্যে তখন দিশেহারা বাঙালি জাতির মাঝে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চারিত হলো। তারা জেগে উঠলো নতুন আশায়, নতুন স্বপ্ন ও উদ্যমে। দৃপ্ত স্বপ্ন, আপসহীন প্রতিশ্রুতি আর অসহায় মানুষ গুলোকে নিয়ে জাতির পিতার দেখা অসমাপ্ত স্বপ্নের লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলেন শেখ হাসিনা। তার সেদিনের সেই প্রত্যয় আর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আজ এক সময়ের দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধির পথে সাবলীল গতিতে এগিয়ে চলেছে।

দেশ থেকে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় যেমন মঙ্গা দূর হয়েছে, তেমনই সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা তৈরিতেও তার রয়েছে নানা উদ্যোগ। তার ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। যার ফল আমরা এই বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে বেশ ভালোভাবে ভোগ করছি। এখন ঘরে বসেই অনলাইন প্লাটফর্মে অফিসিয়াল কাজও সম্পন্ন হচ্ছে।পাশাপাশি দক্ষ হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছেন। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত। কিন্তু তার এই দীর্ঘপথ মোটেই মসৃণ ছিলো না, ছিলো কণ্টকাকীর্ণ।আর এই সংগ্রামে শেখ হাসিনাকে কমপক্ষে ২১ বার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি ছিলো ২০০৪ এর ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ওইদিন প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি।

হত্যাচেষ্টাসহ ঘড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়ে থাকলেও দমে যাওয়ার মানুষ নন শেখ হাসিনা। তিনি আজ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, বুদ্ধিমত্তায় প্রখর; সহনশীলতা ও দৃঢ়তা এবং ধৈর্য যেন তাঁর চরিত্রগত ধর্ম। আজ তিনি বাংলাদেশের জনগণের হয়ে বিশ্বনন্দিত। বিশ্বের শীর্ষ নারী শাসকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে সরকারপ্রধান হিসেবে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার ও শ্রীলংকার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি।

বিরোধীদলের নেত্রী হিসেবেও শেখ হাসিনা ছিলেন আপোষহীন, সংগ্রামে ও আন্দোলনে একজন দূরদর্শী নেতা। দেশে ফেরার পর তৎকালীন সরকার তাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেতে দেয়নি। পিতা-মাতাসহ স্বজনদের হত্যার ঘটনায় মামলা পর্যন্ত করতে পারেননি তিনি। শত নির্যাতন ও মানসিক কষ্ট নিয়েও মানুষের দুঃখ লাঘবে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পযন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছেন শেখ হাসিনা। তার পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এরপর দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছেন, দলকে সংগঠিত করেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী। ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশশাসন করেন।এর মাঝেই শেখ হাসিনা প্রমাণ করেন শাসক হিসেবে তিনি যেমন দেশনন্দিত, তেমনি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ এবং অন্যান্য সহযোগিতা মানুষকে অসহায়ত্ব থেকে রক্ষা করেছিল।দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলে তিনি দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে ভাগ্যোন্নয়নের পথে দাঁড় করেন।

নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে সব ক্ষেত্রে পিতার পাশাপাশি মাতার নামের স্বীকৃতিও ছিল তার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকদের ঋণ প্রদান, কৃষি সামগ্রীর মূল্যহ্রাস এবং সহজ প্রাপ্যতাও ছিল বিরাট অবদান। ওই সময়-ই সম্পন্ন হয় পার্বত্য শান্তি চুক্তি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চলে নির্যাতন। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ওই সরকার দুই বছর দেশ শাসন করে। একপর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের কারারুদ্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা গ্রেফতার-রিমান্ড ও নির্যাতন চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও কারারুদ্ধ হন। নিঃসঙ্গ কারাগারে তার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন। এমনকি কারাগারেও স্লোপয়জনিং করে তাকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালানোর খবরও প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। তবে ভেঙে পড়ার মানুষ নন শেখ হাসিনা।

সাব জেলে কারাবন্দি অবস্থায় আদালতে মামলা চলে, সেখানেও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন। তার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলার অভিযোগের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন- তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে। এক পর্যায়ে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে নির্বাচন দেয়। সে সময় তার প্রিয় বাঙলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধেও চেতনার ধারক ও বাহক শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলো। যার প্রমাণ তারা দিয়েছে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে। বিপুল ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।

এরপরই শুরু হয় শেখ হাসিনার দিন বদলের পদক্ষেপ। তিনি জাতিকে নতুন ভিশন দিয়েছেন, যার নাম রূপকল্প-২০২১; বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করাই এর ভিশন। দিয়েছেন রূপকল্প-২০৪১, শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান।শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র স্বপ্ন দেখিয়েছেন; যেখানে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে। আর সেই কর্মসূচি নেয়া হয় একেবারে তৃণমূল থেকে। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় এই উদ্যোগের স্থপতি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও তার সুযোগ্যপত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ-এখন বাস্তব। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আজ মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। নারীর ক্ষমতায়নে নেওয়া নানা উদ্যোগও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। প্রায় ১১ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে দেশ ও দেশের মানুষ-ই হলো প্রধান কথা। এর বাইরে তিনি যেতে চান না, যেতে পারেন না এবং যানও না। এটাই তার বড় গুণ। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ দমনকালে তার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা আমরা জানি। রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য, জ্ঞান, আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে–এটা আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও নেওয়া পদক্ষেপে তার সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ছাপ রয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলেই অদৃশ্য ভাইরাস দেশে সেভাবে ছড়াতে পারেনি। তার পদক্ষেপ ও নেতৃত্বে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতি-ই নয়, বর্তমান বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত, দেশে দেশে মূল্যবৃদ্ধিসহ সমস্যা জটিল হচ্ছে তখন একজন শেখ হাসিনার হাত ধরেই শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। এখন তা নেমে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ করার উদ্যোগও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; যেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ছাড়াও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনা থাকবে। রাজনীতি ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এর মধ্যে- ইউনেস্কো’র হুফে বোয়নি শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮), মাদার টেরিজা পুরস্কার (১৯৯৮), মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার (১৯৯৮), বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সেরেস পদক (১৯৯৯), পার্ল এস বাক পুরস্কার (১৯৯৯), যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭), জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (জুলাই ১৯৯৭), যুক্তরাজ্যের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব ফিলোসফি ডিগ্রি (অক্টোবর ১৯৯৭), ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট সহ দেশিকোত্তম উপাধি (জানুয়ারি ১৯৯৯), অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (অক্টোবর ১৯৯৯) এবং ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (ফেব্রুয়ারি ২০০০)। বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সম্মানসূচক ডক্টর অব হিউমেন লেটারস প্রদান করে।

২০১০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটি’র ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। দেশের উন্নয়নে তার অব্যাহত অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এ পদক প্রদান করা হয়। উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তাকে এ পদক দেয়া হয়।এছাড়া নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ২০১১ ও ২০১৩ সালে দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে ওই সম্মাননা দেয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড (২০১১, ২০১২) ও নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭) পেয়েছেন শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে একটি সনদ প্রদান করে। খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তাকে ওই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।২০০৫ সালে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ওই সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ বৈশ্বিক পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দূরদর্শী পদক্ষেপে নেয়ায় তাকে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।২০১৬ সালে শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করা হয়।

নারী ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তাকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। ওই বছরই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতরে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইউএন উইমেন প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম তাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার প্রদান করেন। আমাদের বিশ্বাস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে শেখ হাসিনা তার সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে বিশ্বনেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন- তা বলাই যায়। তার নেতৃত্বেই উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। জন্মদিনে মানবতার নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। শুভ জন্মদিন।

লেখক: উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; জামালপুর।

   

কোম্পানীগঞ্জে দোকানে দেশীয় অস্ত্র হামলার ভিডিও ভাইরাল



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, নোয়াখালী
ছবি: ভাইরাল ভিডিও

ছবি: ভাইরাল ভিডিও

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়নের গাংচিল বাজারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একটি দোকানে হামলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় দোকানের মালিকসহ উভয় পক্ষের আটজন আহত হয়েছে।  

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার গাংচিল বাজারের রাজ গার্মেন্টেসে এই হামলার ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গাংচিল বাজারে ডাবের ব্যবসা করেন মুসলিম নামে এক ব্যক্তি। ছোট একটি ছেলে তার ব্যবসা পরিচালনা করে। গাংচিল বাজার কমিটির সেক্রেটারী রাজিব খানের আত্মীয় তারেক ওই ছোট ছেলে ডিপ টিউবয়েল বসানোর কাজে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।  এ নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে গাংচিল বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে গাংচিল বাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি রাজিব খানের মাথায় আঘাত করে মুসলিমের পরিবারের লোকজন। এতে তার মাথা ফেটে যায়। পরে রাজিবের স্বজনেরা মুসলিমের ভাতিজা মো.শাহরাজ উদ্দিনের দোকানে রামদা নিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এতে তাদের পরিবারের পাঁচজন আহত হয়।  

ভুক্তভোগী রাজ গার্মেন্টেসের মালিক মো.শাহরাজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, চাঁদা না পেয়ে গাংচিল বাজার কমিটির সেক্রেটারি রাজিব ও স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার (৪৫) সবুজ (২৮) তারেক (২৮) ও জাকের (২৯) রামদা নিয়ে এ হামলা চালায়। ইতিমধ্যে হামলার ২মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।  

চাঁদা দাবির অভিযোগ নাকচ করে দেয়ে রাজিব খান দাবি করেন তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে প্রথমে তারা তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে আরো তিনজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়।  

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি।  বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

;

ওপিসিডব্লিউ'র কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হল বাংলাদেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রিকরণ সংস্থার (ওপিসিডব্লিউ) ২৮তম বার্ষিক সম্মেলনে ২০২৪-২৬ মেয়াদে বাংলা‌দেশ কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।

শ‌নিবার (২ ডি‌সেম্বর) জা‌নি‌য়েছে দ্য হে‌গের বাংলা‌দেশ মিশন। 

বাংলা‌দেশ মিশন জানায়, সংস্থা‌টি‌তে একই মেয়াদে এশিয়া থেকে ইরান, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান নির্বাচিত হয়েছে। এশিয়া গ্রুপ থেকে কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যান্য বর্তমান দেশগুলো হচ্ছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সৌদি আরব এবং কাতার।

বাংলাদেশ দূতাবাস বল‌ছে, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে সদস্যপদ লাভের জন্য ওপিসিডব্লিউতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন দীর্ঘ সময় এশিয়া গ্রুপের নেগশিয়েশনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল, ওপিসিডব্লিউ-এর প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্তর। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে ওপিসিডব্লিউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ওপিসিডব্লিউ-কে ২০১৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র ৪১টি দেশ দুই বছর মেয়াদের জন্য এক্সিকিটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়।

;

আইএমও'র কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হল বাংলাদেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক সমুদ্রবিষয়ক সংস্থার (আইএমও) সি ক্যাটাগরিতে আগামী দুই বছরের (২০২৪-২০২৫) জন্য কাউন্সিল সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) লন্ডনে আইএমও সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ১২৮ ভোট পেয়ে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সংস্থা‌টির কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হ‌লো।

লন্ড‌নের বাংলাদেশ হাইক‌মিশন জানায়, আইএমওর ১৬৬ সদস্যের মধ্যে ১২৮ ভোট পে‌য়ে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জয়লাভ করল।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়। 

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং আইএমওতে স্থায়ী প্রতিনিধি সাইদা মুনা তাসনিম বলেছেন, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের ৪০ সদস্যের কাউন্সিলে বাংলাদেশের নির্বাচনে জয়লাভ সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম কমিউনিটি যে আস্থা রেখেছে এটা তার প্রমাণ। এই বিজয় একটি সামুদ্রিক জাতি হিসেবে বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রতিফলন।

হাইকমিশনার বাংলাদেশকে কাউন্সিল সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য আইএমও সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ২০২৩ সালে আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।

এর আগে, সাইদা মুনা তাসনীম আইএমও-এর ৩৩তম অ্যাসেম্বলিতে সর্বসম্মতিক্রমে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা’র (আইএমও) সদস্য দেশ ১৭৫ টি।

;

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকে পরিবহন স্ট্যান্ড, জনজীবনে দুর্ভোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘিরে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা। এর চারপাশে রয়েছে নিম্ন আদালত, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, রাজধানীর ৭টি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটক ও ক্লাসরুমের নিকটবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছে ঢাকা সিটির দশটি গণপরিবহন স্ট্যান্ড।

সার্বক্ষণিক শব্দ দূষণের মধ্যে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বাসগুলো পার্কিং করা থাকে যত্রতত্র। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। অতিরিক্ত শব্দদূষণ বিরূপ প্রভাব ফেলছে জনজীবনে। গণপরিবহণের ধোঁয়া বায়ুদূষণ করছে। জনবহুল এলাকা হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন।

বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ফটকের মধ্যে তিনটি ফটক ঘিরে রয়েছে দশটি পরিবহনের স্ট্যান্ড। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কবি নজরুল সরকারী কলেজ, গভঃমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল, বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহানগর মহিলা কলেজ, হীড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে একই অবস্থা।

দশটি কোম্পানির নামে এ বাসগুলো রেজিষ্ট্রেশন করা সদরঘাট থেকে ঢাকার বিভিন্ন রোডে। তার মধ্যে রয়েছে- সাভার পরিবহন, আজমেরী গ্লোরী, ভিক্টর ক্লাসিক, বিহঙ্গ পরিবহন, তানজিল পরিবহন, আকাশ পরিবহন, বাহাদুর শাহ্ পরিবহন, সাত নম্বর বাস সার্ভিস, পোস্তগোলাগামী জিপ সার্ভিস ও ঘোড়ার গাড়ি। সদরঘাট থেকে ঢাকার বিভিন্ন রোডে চলাচল করা এসব গাড়ি একেকটি কোম্পানির একাধিক মালিকানায় রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভিক্টোরিয়া পার্কের চারপাশে গণপরিবহনের স্ট্যান্ড ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। এতে করে দীর্ঘ যানযট লেগেই থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে। পাশাপাশি অহেতুক হর্ণ বাজিয়ে এসব এলাকার শব্দদূষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এসব গাড়িতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পথচারীদের আহত হওয়া ও নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও ঘটেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটা গেটেই গাড়ির অবাদ চলাচল ও এসব পরিবহনের স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব গাড়িগুলো যেখানে সেখানে পার্কিং, অহেতুক হর্ণ বাজানো ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো তাদের চলাচল থেকে শুরু করে পড়াশোনার পরিবেশকে বিঘ্ন সৃষ্টি করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, আমরা যখন রাস্তা পারাপার করি তখন আমাদের খুবই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয়।

তারা বলেন, বিশেষ করে বাহাদুরশাহ পরিবহন, ঘোড়ার গাড়িগুলোর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। রাস্তা পার হতে গিয়ে আমরা প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হই। আমাদের প্রধান ফটকের সামনে কোনো স্পিড বেকার নেই। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিরাপদ সড়কের কথা ভেবে শুধু আশ্বাস নয়, একটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বার্তা২৪-কে বলেন, ভিক্টোরিয়া পার্ক দিয়ে পার হওয়ার সময় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বুলিংয়ের শিকার হই। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ পরিবহণ শ্রমিক ও ভাসমান মানুষ। রাস্তায় ভীড়ের কারণে বেশিরভাগ সময় এদের আইডেন্টিফাই করা যায় না। ভীড়ের মধ্যে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করে এসবের বিচার দিতে সাহস হয় না। বাড়িতে জানাজানি হলে এখানে পড়তেও দিবে না। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা পড়তে আসি। প্রশাসনও যেন নারীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে নির্বিকার।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, কলেজের মেইন গেটের সামনে সবসময় জ্যাম লেগেই থাকে। রিক্সা, সিএনজি, প্রাইভেটকারের পাশাপাশি গণপরিবহনের বাসগুলো এখানেই পার্কের পাশ ধরে স্ট্যান্ড করে থাকে। কলেজে ঢুকতে বের হতে, চলাচল করা খুবই কষ্ট। আমাদের বিপরীত পাশেই গভঃ মুসলিম হাইস্কুল। একটু সামনে ২০গজ আগালেই সেন্ট ফ্রান্সিস, সেন্ট গ্রেগরি স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এই মোড় দিয়ে এত এত শিক্ষার্থীর যাতায়াত করা খুবই কষ্ট।

কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান বলেন, ‘স্কুলের সামনে সবসময় ঘোড়ার গাড়ী থাকে। ঘোড়ার মলমূত্রে সবসময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এখানে দাঁড়ানো যায়না বেশিক্ষণ। পাশাপাশি বাহাদুরশাহ পরিবহনের গাড়িগুলো খুব দ্রুত আসে। আমরা অনেক ভয়ের মধ্যে রাস্তা পারাপার করি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বার্তা২৪-কে বলেন, ভিক্টোরিয়া পার্কের চারপাশে বাস স্ট্যান্ড বহুবছর ধরে। এগুলো সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা মেট্টোপলিটন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমাদের ভর্তি পরীক্ষার সময়েও এই বাসগুলো সরাতে পারিনা। এসব বিষয়ে ডিএমপি ও সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে কোতয়ালী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) পিয্যুশ রায় বার্তা২৪-কে বলেন, যে কয়টি গণপরিবহন ঢাকার ভিতর থেকে এখানে আসে, সবাই পার্কের পাশ দিয়ে ঘুরে চলে যায়। এছাড়া বাস ঘুরানোর কোনো জায়গা নেই। এখানে বাস দাঁড়িয়ে থাকা নিষেধ। যদি কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে, ওখানে আমাদের ট্রাফিক আছে তারা সমাধান করবে।

;