একটি সেতু বদলে দিতে পারে হাজারো কৃষকের ভাগ্য



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

একটি সেতু বদলে দিতে পারে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির দুটি ইউনিয়নের হাজারো কৃষকের ভাগ্য। সেতু না থাকার কারণে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ও বহরপুর ইউনিয়নের এ সকল কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দফতরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট দফতর।

কয়েক বছর ধরে স্থানীয়দের অর্থায়নে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে উৎপাদিত কৃষিপণ্য,গবাদিপশু ও পাওয়ার ট্রাক্টর পারাপার করে আসছেন তারা। বর্তমানে বাঁশের সেই সাঁকোটিও ভেঙে যাবার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক।

সরেজমিন বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের খামারমাগুরা-হাতিমোহন খালে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক বছর আগে স্থানীয়দের তৈরি বাঁশ দিয়ে নির্মিত সেই সাঁকোটি ভেঙে গিয়েছে। খালের দুই কিলোমিটার এলাকার কৃষকদের কৃষিপণ্য পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের এই সাঁকোটি।

জামালপুর-কোলারহাট সড়ক থেকে নটাপাড়া বাজারের ইটের রাস্তা ধরে করিম শেখের বাড়ি। সেখান থেকেই শুরু বিস্তর মাঠ। সেখান থেকে সরু রাস্তা দিয়ে যেতে হয় হাতিমোন-খামারমাগুরা খালে। খালের পূর্ব পাশে জামালপুর ইউনিয়ন। খাল পার হয়ে পশ্চিমপাশে বহরপুর ইউনিয়ন।

২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই খাল খনন করে। সারা বছরই খালে পানি থাকে। দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের জমি রয়েছে খালটির উভয় পাশে। ফলে কৃষিপণ্য ও কৃষিযন্ত্র পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। সেতুর অভাবে জামালপুর ইউনিয়নের কৃষক তাদের পাওয়ার ট্রাক্টর নিয়ে বহরপুর ইউনিয়নে নিজ জমিতে যেতে পারছেন না। আবার খাল পাড়ি দিয়ে উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়া করতে চরম বিপাকের মধ্যে রয়েছে।

নটাপাড়া গ্রামের কৃষক মধু হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, খালের ওপাড়ে আমার অনেক জমি রয়েছে। সেতু না থাকার কারণে আমাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাঁশের যে সাঁকোটি আমরা দিয়েছিলাম সেটিও পচে ভেঙে গিয়েছে। যার কারণে এখন আমার মতো অনেক কৃষক রয়েছেন চরম দুঃচিন্তায়। খালটি অনেক গভীর বলেও তিনি জানান।

আরেক কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের ব্লক ছিল খালের ওপার। কত কষ্ট করে খাল পার হতে হয় শুধু আমরাই জানি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল খালের মাঝে গলাপানি দিয়ে এপার-ওপার করেন। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষকের ভাগ্য বদলে যাবে।

বহরপুর ইউনিয়নের কৃষক যতিশ মন্ডল বলেন, আমাদের একটিই সমস্যা। আর তা হলো সেতু। আসলে এখানে একটি সেতুর অনেক দরকার। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে একটি সেতুর খুব প্রয়োজন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষার সময় এখানে ফসল হয় না। শুস্ক মৌসুমে পেঁয়াজ, রসুন, গমসহ বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়। কৃষকদের খাল পার হতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়। সবাইকে খালের পানিতে ভিজে এপার-ওপার করতে হয়। এরপর ভেজা পোশাকে সরু পথ ধরে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল গন্তব্যে নিয়ে যায়।

দায়িত্বরত উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি এই ইউনিয়নের কৃষকদের নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশে কৃষকদের জন্য যদি একটি সেতুর প্রয়োজন হয়, সেটি হবে খামারমাগুরা-হাতিমোহন খালের সেতু। যত দ্রুত এখানে সেতু নির্মাণ করা হবে তত উপকৃত হবেন এখানকার কৃষকেরা।

এ ব্যাপারে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। কয়েক বছর আগে আমি সেখানে নিজেই গিয়েছিলাম। চেষ্টা করছি ওখানে একটি সেতু নির্মাণ করার। আশা করছি খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে পারব।

   

তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামী রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এরই মধ্যে দেশের তাপমাত্রা অসহ্য অবস্থায় পৌঁছানোয় কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, এ বছর শিখন ঘাটতি পূরণে মাধ্যমিকে ১৫ দিন ছুটি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রমজানের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন ক্লাস চালু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একইভাবে সব কলেজ ও মাদরাসায়ও ছুটি কমিয়ে রমজানের শুরুর দিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়। ছুটি শেষে রোববার থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

;

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসে নেই স্বস্তির খবর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। কয়েক দিনের তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাস আবারও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১২১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে মেগাসিটি ঢাকা। আজ ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ছিল।

এদিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৭৮ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি শহর। এ ছাড়া ১৭৩ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ১৬৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, এরপর নেপালের কাঠমান্ডু ১৬২ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। ১৫৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই শহর।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

 

;

শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা



খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলো এখন সবুজ সমারোহে ভরপুর। ধানের পাশাপাশি সবজি চাষাবাদে এখন ব্যস্ত কৃষক। জমিতে বপন করা প্রতিটি শসা গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে ছোট বড় শসা। ২/১ দিন পর পর জমি থেকে শসা সংগ্রহ করছে সবজি চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। জমিতে বপন করা শসা গাছের যত্ন নিতে ভর দুপুরেও শসা ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। জমিতে বপন করা গাছের ফলন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এর পাশাপাশি কীটনাশকসহ ভিটামিন প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।


আশানুরূপ ফলনের পরও বাজারদর নিয়ে হতাশায় জেলার সবজি চাষিরা। কয়েকদিন আগেও প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল প্রতি কেজি শসার দাম। তবে সপ্তাহ দু’য়েক সময় গড়ানোর আগেই শসার দাম নেমে এসেছে ৫০ টাকার নিচে। দ্রুত গতিতে শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের সবজি চাষিরা।

রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনুকূল আবহাওয়া আর বাম্পার ফলনের কারণে দিনকে দিন মানিকগঞ্জে বেড়ে চলেছে শসাসহ নানা প্রকারের সবজির চাষাবাদ। তবে সার, কীটনাশক, বীজসহ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবজির দাম বাড়েনি বলে অভিযোগ সবজি চাষিদের।

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই কম-বেশি আবাদ হয় সবজির। তবে জেলার সাটুরিয়া, সিংগাইর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাতে সবজি, বিশেষ করে শসার আবাদ হয়েছে বেশি এলাকায়। প্রথম দিকে শসার দাম বেশি হলেও আগামীর দিনগুলোতে শসার দর-দাম নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা।


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকার সবজি চাষি মো. নয়া মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে শসা আবাদের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি শসা পাইকারি হিসেবে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি শসা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। বাজারদর এই গতিতে কমতে থাকলে শসা চাষে নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক শসা চাষি বলেন, যারা আগাম শসার আবাদ করেছে তারা দামে শসা বিক্রি করতে পেরেছিল। এখনকার বাজারদর যা আছে তাতে কোনোরকমে চালানো যাবে। কিন্তু দরপতন আরও হলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

মোস্তফা হোসেন নামের এক বৃদ্ধ সবজি চাষি বলেন, বাজারে গেলে সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে মনে হয়। কিন্তু এই সবজি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শ্রমিকের বাজারদর যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।


মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১১৯১ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজির আবাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সবজি আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আলাদাভাবে শসা আবাদের জমির পরিমাণের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। তবে জেলায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে সহায়তার জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন কাজ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

;

‘প্রচণ্ড গরমেও আমরা আগুনের কাছে বন্দি’



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে, ঠিক তখন তাদের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে গরমকে উপেক্ষা করে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বয়স প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ছুঁই ছুঁই। কেউ কেউ পড়েছেন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত, আবার কেউ কেউ টেন-ফেল। শেষমেশ তাদের জায়গা হয়েছে মিষ্টির কারখানার আগুনের চুলার পাশে। সমস্যা একটাই অভাব। যার কারণে আজ তারা আগুনের কাছে বন্দি অনেকটাই!

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তালার পাটকেলঘাটা ভাগ্যকুল মিষ্টি কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে প্রথমে ঢুকতেই দেখা যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে বড়-বড় চুলা। চুলার ওপরে বসানো কড়াই আর তার মধ্যে আগুনের জ্বালের মধ্য দিয়ে ফুটছে দুধ। চুলার পাশে দাঁড়িয়ে সেই দুধ নাড়া দিচ্ছে অভিজিত গুড্ডুর মতো ছেলেরা।

চুলার পাশে একটু যেতেই মনে হলো আগুনের হলকা গায়ের ওপরে এসে পড়ল। মনে হচ্ছে আগুনের তাপে গায়ের লোমগুলো যেন পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ আর অন্যদিকে চুলার আগুন। যেখানে মানুষ এক তাপদাহ সহ্য করতে নাজেহাল আর সেখানে তারা একে একে দুই তাপদাহের সঙ্গে লড়াই করছে। প্রচণ্ড এই তাপে যখন মানুষ নাজেহাল তখন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে তারা ছোট গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাজ করছে।


তাদের একজন চুলায় দুধ জ্বাল দিতে থাকা অভিজিত মন্ডল গুড্ডু বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা আগুনের কাছে বন্দি। শুধু অভাবের কারণে। আমরা এখানে টাকার জন্য আগুনের সাথে লড়াই করছি। এই প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে আগুনের কাছে গেলে মনে হয় জীবন বের হয়ে গেল। এতো তাপ সহ্য করে আছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কারণ বাড়িতে বাবা প্যারালাইজড। অভাবের কারণে সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বাইরে বের হয়ে পড়েছি। সেই থেকে আগুনের সাথে লড়াই। আগুনের পাশে থেকে-থেকে বেঁচে থেকেও শরীরটা পুড়ে গেছে। পুড়তে-পুড়তে এই শরীরে আগুন দিলেও আর পুড়বে না।

পাশের চুলায় দুধ ঢালতে থাকা অপু মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিনেরাতে মিলে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম হয়। বাকি ১৮ ঘণ্টা চুলার আগুনের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। সকাল ১১টায় উঠে চুলা ধরিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে কাজ করতে করতে দুপুর ২টায় খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট, তারপর আবার কাজ শুরু করে রাতে খেয়ে একটানা কাজ করে শেষ ভোর ৫ টা। এভাবে ঝড়, বৃষ্টি, গরম, বন্যা সবকিছু কাটছে আগুনের সাথে।

মিষ্টি গোল করতে থাকা বাঁধন রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রায় ২০-৩০ জন ছেলে এখানে কাজ করি। প্রায় সবার বয়স ১৮, ১৯, ২০ বছর ছুঁই ছুঁই। টাকার জন্য আমরা সবাই এখানে কাজ করছি। এটাই সত্যি যে টাকা হলে মানুষ সব জায়গাতে আটকায়। আমরা যেমন টাকার জন্য আগুনের কাছে আটকে গেছি। এটাই কপাল। এ দেহ আগুনে পুড়ে ছাই।

;