প্রকাশনা শিল্প বাঁচাতে কাগজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার চান প্রকাশকরা
প্রকাশনা শিল্প বাঁচাতে কাগজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। একইসঙ্গে কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রকাশকরা।
প্রকাশকরা বলছেন, সময়মতো পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করতে তারা অন্যান্য সব বই ও প্রকাশনা ছাপা বন্ধ রেখেছেন। অন্য বইয়ের জন্য কাগজ কেনাও হচ্ছে না। তারা আশা করছেন শিক্ষার্থীরা সব বই পাবেন। তবে, শিক্ষার্থীদের সব পেতে দুই তিনমাস সময় লাগতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রকাশক নেতারা।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সমিতি’র নেতারা।
এতে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, ২০২১ সালে যেখানে ৮০ গ্রাম ডিডি অফসেট কাগজের দাম ছিল এক হাজার ৫০০ টাকা রিম, এখন তার দাম তিন হাজার টাকার বেশি। ১০০ গ্রামের একই কাগজের যেখানে ২০২১ সালে দাম ছিল এক হাজার ৭৫০ টাকা রিম, এখন তার দাম চার হাজার ২০০ টাকা। অন্যদিকে, ২০২১ সালে যেখানে ২০বাই৩০ ইঞ্চি নিউজপ্রিন্ট ডিসি কাগজের রিম প্রতি দাম ছিল ৩৮০ টাকা, এখন তার দাম এক হাজার টাকা। একই কাগজের ডিডি এর দাম ২০২১ সালে যেখানে ছিল ৪৪৫ টাকা রিম, এখন তার দাম এক হাজার ১৮০ টাকা।
আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, একদিকে ভালো মানের কাগজের দাম বেড়েছে, অন্যদকে গত দুই-আড়াই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় রিসাইকেল করার জন্য বাতিল কাগজ পাওয়া যায়নি। সরকার আগামী এক মাসের মধ্যে দেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে ৩৫ কোটি বই তুলে দেবে। এছাড়া একুশে বইমেলায় বই প্রকাশনার জন্যও প্রচুর কাগজের ব্যবহার হবে। সহজ শর্তে বিনা শুল্কে অথবা স্বল্পশুল্কে কাগজ আমদানি করা না গেলে বই বিতরণ ও বইমেলায় চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা নেতারা বলেন, শতভাগ ভার্জিন পাল্প দিয়ে কাগজ উৎপাদন করলে তার দাম হবে এক লাখ ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। এখানে একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে।
আরিফ হোসেন ছোটন আরও বলেন, চাহিদার সঙ্গে অন্যান্য একাডেমিক ও সহায়ক বই, শিক্ষার্থীদের খাতাপত্র, শিক্ষাবোর্ডের খাতা ও নথিপত্র, প্যাকেজিং শিল্প, ব্যাগশিল্প, খাম, বিভিন্ন সংবাদপত্র, দাফতরিক কাজ, পোস্টার, ডেকোরেশন ইত্যাদি কাজে যে পরিমাণ কাগজের চাহিদা, তা বেড়েই চলেছে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে কাগজের আমদানি শুল্ক যদি কমানো না হয়, তাহলে খুব শিগগিরই কাগজের বাজারে ব্যাপক বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি হবে।
পাঠ্যবই ছাপার কাজের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, সময়মতো পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করতে অন্যান্য সব বই ও প্রকাশনা ছাপা বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য বইয়ের জন্য কাগজ কেনাও হচ্ছে না। এসব বিষয়ে আমরা বাইন্ডার্সদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি শিক্ষার্থীরা সব বই পাবেন। তবে, ধাপে ধাপে। শিক্ষার্থীদের সব পেতে দুই তিনমাস সময় লাগতে পারে।