ভয়ংকর হয়ে উঠছে সড়ক, একমাসে নিহত ৪
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন সড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদ। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইটভাটার অবৈধ মাটি টানা ট্রাক্টর। গ্রামীণ সড়কে চলা এসব শত শত ট্রাক্টর পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি ঝুঁকিতে ফেলছে সাধারণ মানুষের। এছাড়াও এসব অবৈধ ট্রাক্টরে অরক্ষিতভাবে মাটি-বালু পরিবহনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে কোমলমতি শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা।
গত ২১ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ২১ তারিখ পর্যন্ত অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চারজন। এরপরেও থেমে নেই এ সকল অবৈধ যান চলাচল। অবৈধ যান চলাচল বন্ধে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতেও থামছে না এ সকল পরিবহন চলাচল। ফলে দিনদিন সড়কগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
অবৈধ ট্রাক্টর বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে অকালেই ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। কাউকে আবার সারা জীবনের মতো বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। এছাড়া এগুলোর বিকট শব্দে ঘটছে শব্দদূষণও। ফলে পথচারীসহ জন সাধারণকে সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। কিন্তু চোখের সামনে অবৈধ এই যানের অবাধ চলাচল দেখেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২১ ডিসেম্বর নারুয়া মধুপুরের মোড়ে অবৈধ ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় আব্দুল মজিদ মোল্যা (৫০) নামে একজন নিহত হয়। তার দুদিন পরেই ২৩ ডিসেম্বর গাড়াকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফ (৭) ট্রাক্টরের নিচে পড়ে নিহত হয়। রাস্তায় মাটিপড়ে এবড়োথেবড়ো সড়কে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গত ১০ জানুয়ারি সদর ইউনিয়নের ইরশালবাড়ী গ্রামের সুনীল বিশ্বাস মারা যান। সবশেষ ২১ জানুয়ারি নবাবপুর ইউনিয়নের বকশিয়াবাড়ীতে সানজিদা (৫) নামের এক শিশু ট্রাক্টর চাপায় নিহত হয়।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) জামালপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাহাতিমোহন থেকে নলিয়া যাবার পথে একটি ভ্যানের ওপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় অবৈধ গাড়ি পটাং (স্থানীয় ভাষায়)। এতে ৪ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। যার মাঝে ২ জনের হাড় ভেঙে গিয়েছে এবং বাকি দুজন মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় শিশু কিংবা কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। উপজেলায় প্রতিদিন কয়েকশত ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক বিভিন্ন ধরনের মালামাল, বিশেষ করে মাটি ও বালু নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। এধরনের যানবাহন নিয়ম মোতাবেক কৃষি জমিতে চাষাবাদের কাজে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ মোটরযান আইনে পাকা রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের তালিকায় এর কোনো অস্তিত্ব নেই।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও সংগঠক মুন্সী আমীর আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। দিনকে দিন যেভাবে রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ভটভটি, নসিমন, অটোভ্যান, ড্রাম ট্রাক্টর ইটবালি মাটিবহন করছে এবং রাস্তাঘাটে বেপরোয়া গতিতে জীবন বিপর্যস্ত করে চলেছে তাতে সুষ্ঠু সুন্দর জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে।বালিয়াকান্দিতে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে কয়েকজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে যার প্রতিক্রিয়া খুবই দুঃখজনক। যা প্রতিরোধে প্রশাসনের কড়া নজরদারি দরকার। সাময়িক জরিমানায় কোন ফল আসবে না। প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশাজীবি সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনকে একত্রিত করে বালিয়াকান্দি প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে এসব দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করি।
বালিয়াকান্দি থানা অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান বলেন, এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমাদের এখনো কয়েকটি গাড়ি জব্দ রাখা আছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সত্যিই দিন দিন এ সকল অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বালিয়াকান্দিবাসী। গত কয়েক মাসে কয়েকটি তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছে এই সকল অবৈধ যানবাহনের মাধ্যমে। প্রশাসনের উচিত এ সকল অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়া।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, অদক্ষ ড্রাইভার ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। যা আগের তুলনায় বেশি। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এই যানবাহন যাতে দ্বিতীয়বার যাতে রাস্তায় না নামতে পারে সেজন্য আমরা পদক্ষেপ নিব।