সক্ষম সকলকে কর প্রদানের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে তাদের কর প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তিনি বলেন, শুধু রাজধানী বা শহরে নয়, সারা দেশে কর দিতে সক্ষম যারা, দয়া করে আপনার কর পরিশোধ করুন। সরকার আপনার পরিষেবা এবং কল্যাণে আপনার অর্থ ব্যবহার করবে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রথম দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমাদের সেগুলোর (অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার) মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করবো, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে এবং জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সারা দেশে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

সরকার প্রধান বলেন, এটা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই আমি সবাইকে বলবো— যারা কর দেবার সামর্থ্য রাখেন, আপনারা দয়া করে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে।

তিনি বলেন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্ত্বেও এগুলো অধিক মূল্যে কিনে নিয়ে আসছে। সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার। আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কমমূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি।’ এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সবখানে ভর্তুকি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষিতে তার সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে, করোনাকালীন ব্যবসায়ীদের শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য তার সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এভাবেই সরকার সবাইকে দুঃসময়ে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, এখন সরকার যাতে রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, ভর্তুকি আমরা আর কতো দিতে পারবো। তাছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও দেখতে হবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরের সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন। এখন আর কেউ কুঁড়েঘরে বাস করে না, ভূমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে তার সরকার বিনে পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর্থিক সহায়তা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেওয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের তৃণমূল পর্যায়েরও উন্নয়ন নীতির কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অর্থনীতির গতিশীলতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি, গত ১৪ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচার-প্রচারণা ভালোভাবে চালাই, তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। কারণ, তারা তো সেবা পাচ্ছে। এই সেবাটা পাওয়ার জন্যই তারা করবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত ১২ তলা রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন। ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনও করেন।

বড় প্রকল্পে বড় চুরি, প্রকৌশলীদের পোয়াবারো! 



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বড় প্রকল্পে বড় চুরি,  প্রকৌশলীদের পোয়াবারো! 

বড় প্রকল্পে বড় চুরি, প্রকৌশলীদের পোয়াবারো! 

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণসহ সংস্কার কাজ চলছে প্রায় দুই মাস ধরে। জেলার সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাচ্ছেতাই ভাবে কাজ সম্পাদন করলেও অজ্ঞাত কারণে সড়কে অনুপস্থিত কর্তাব্যীক্তরা। নিম্নমানের ইট ও বালুর ব্যবহার এবং সড়কের পাশের মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। কালভার্ট নির্মাণে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার লোকাল রড। এত কিছুর পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন প্রকৌশলী থাকেন না কাজের পাশে। ফলে  এই বড় প্রকল্পে বড় চুরি আর প্রকৌশলীদের পোয়াবারো বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

জানা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণ ও সংস্কার প্রকল্পের আওতায় গাংনীর তেরাইল ডিগ্রি কলেজ থেকে খলিশাকুন্ডি ব্রিজের পূর্বপাশ পর্যন্ত একটি প্যাকেজ। এ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিং, মেসার্স রিমি নির্মাণ সংস্থা। এ প্যাকেজটির প্রাক্কলিত মূল্য ৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বামন্দী বাজারের অদূরে অস্থায়ী কার্যালয় ও ফিল্ড স্থাপন করেছে। সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে নিম্নমানের ইট ভেঙ্গে বানানো হচ্ছে খোয়া। এই খোয়া ও নিম্নমানের বালু দিয়েই সম্প্রসারিত অংশের ডাব্লিউবিএম সম্পন্ন হচ্ছে। সঠিকভাবে কমপ্কেশন করা হচ্ছে না মর্মে এলাকার লোকজান বারবার অভিযোগ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের পাশে দেখা মিলছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছেমাফিক নিন্মমানের কাজ করলেও নালিশ করার জায়গা নেই এলাকার মানুষের।


নিয়ামানুযায়ী বাইরে থেকে মাটি এনে রাস্তার দুপাশ ভরাট করার শর্ত থাকলেও তা অগ্রাহ্য। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাস্তার পাশে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করেছে। এতে জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তাছাড়া একটু ভারি বৃষ্টি হলেই রাস্তার পাশে দেওয়া ওই মাটি ধ্বসে রাস্তা বিনষ্ট হওয়ার আশংকাও দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, সড়কটিতে রয়েছে কয়েকটি কালভার্ট। কালভার্ট নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, খোয়া আর ঢাকার লোকাল রড। স্থানীয়রা এ বিষয়টিতে বাধা দিলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকিতে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, এ সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপুর্ণ। জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মে. টন খাদ্য শস্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহি বাস ও স্থানীয় হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বড় প্রকল্পের আওতাভুক্ত করেছে। কয়েকশ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি সরকারের সুনাম অর্জন হওয়ার কথা। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রকৌশলীদের আতাতের কারনে তা ভেস্তে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এ প্যাকেজ আওতাধীন সড়কে কয়েকটি  কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে। এতে নিম্নমানের ইট,  বালু আর ঢাকার লোকাল রড ব্যবহার করা হচ্ছে দেদারসে। ফলে নতুন নির্মিত এসব কালভার্ট জীবনঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এ সড়কে চলাচলকারীদের।

অভিযোগের বিষয়ে মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেন, আমার পরিষদের সামনে দিয়ে কাজ হচ্ছে। নিম্নমানের ইট, বালু দিয়ে রাস্তা করা হলেও প্রকৌশলীদের কাছে পাইনি। তাছাড়া রাস্তার পাশের মাটি কেটে রাস্তায় দেওয়ায় রাস্তা ভেঙ্গে পড়ার আংশকা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে শত কোটি টাকার কাজে পুকুর চুরি করছে। জনস্বার্থে সড়কটির কাজ ভাল করা দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কয়েকদিন আগে কল দেওয়া হয় মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি মোবাইল নম্বর। তিনি কল রিসিভ করে অপর একজন প্রকৌশলীর নম্বরে কর দিতে বলেন। সেই নম্বরে কয়েকদিন যাবত কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি। অপরদিকে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের সময় কাজের পাশে পাওয়া যায়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন প্রকৌশলীর। যার ফলে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর বিষয়ে কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে।

;

পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে ৪ এপ্রিল



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৪ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে রেল মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য জানান রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তাই আগামী ৪ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে ট্রাককারে মূল সেতুর রেলের ট্র্যাক প্যানেল (লোহার পাত) আর মালামাল নেওয়া হচ্ছে। বিশাল আকৃতির ট্র্যাক প্যানেল বোঝাই ট্রাককারটি ভায়াডাক্ট পেরিয়ে মূল সেতুতে চলছে পাথরবিহীন রেললাইনের ওপর দিয়ে। সেখানে ভায়াডাক্ট ও মূল সেতুর রেল কাজের প্রকৌশলীরাও আছেন। সেতুর রেললাইন নির্মাণে চলছে শত শত শ্রমিকের কর্মযজ্ঞ।

ক্রেনের সাহায্যে রেলের ট্র্যাক প্যানেল বসানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত স্থানে। এরপর ধীরে ধীরে বসিয়ে দেওয়া হয় সেতুর ওপর। যন্ত্রের সাহায্যে তা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ওয়ার্কশপ থেকে নিয়ে মূল সেতুতে তৈরি করা হচ্ছে পাথরবিহীন রেলের ট্র্যাক স্ল্যাব।

;

রাজশাহীতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে হলুদ চাষ



মোঃ আব্দুল হাকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মসলা জাতীয় শস্য হলুদ চাষ। খরচের তুলনায় লাভ দ্বিগুণ, চাষ করা যায় অন্য ফসলের সঙ্গে। হলুদ ক্ষেতে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না। শুধুমাত্র উঁচু জমি, পতিত জমি কিংবা বাড়ির আঙিনাই নয়; বাঁশ গাছ, কলা বাগান ও আমসহ অন্যান্য বাগানেও সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে হলুদ। মানে ও গুণে ভালো হওয়ায় বিভিন্ন জেলায় সুনাম কুড়িয়ে চলছে ফসলটি। এ ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকরা। এদিকে ভালো মানের হলুদ চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত মৌসুমে উপজেলায় হলুদের আবাদ হয়েছিল ৪৭০ হেক্টর জমিতে। যেখানে শুকনা হলুদ পাওয়া যায় ২ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৫৭৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয় হলুদ। তবে বৃষ্টিপাতের অপেক্ষায় শেষ পর্যন্ত কিছুটা কমেছে হলুদ উৎপাদন। এবছর ১ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন শুকনা হলুদ পাওয়া গেছে। সেই অনুযায়ী হলুদের বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি টাকায়। ইতোমধ্যে হলুদ মজুদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, উপজেলায় প্রায় এক হাজার লোকের জীবিকা জড়িয়েছে হলুদ চাষ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রিতে। কাঁচা হলুদকে বিক্রির উপযোগী করতে গড়ে উঠেছে শতাধিক চাতাল। কাঁচা হলুদ বাছাই থেকে শুরু করে হলুদ সেদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। বিগত কয়েক বছরে হলুদ ব্যবসায় নেমে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

হলুদ চাষিরা বলছেন, হলুদের বীজ জমিতে বপনের পর পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগে হলুদ পরিপক্ক হতে। তখন বিঘাপ্রতি কাঁচা হলুদ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ। এরপর সেই কাঁচা হলুদ গরম পানিতে সেদ্ধ করে সমতল জমিতে চাতাল করে শুকাতে হয়। ২০ থেকে ২৫ দিন রোদে শুকানোর পর শুকনো হলুদ পাওয়া যায়। প্রকারভেদে শুকনা হলুদ বিক্রি হয় কেজি প্রতি ১৬০ থেকে ২২০ টাকা দরে। আর কাঁচা হলুদ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। চার থেকে পাঁচ মণ কাঁচা হলুদ শুকানোর পর পাওয়া যায় এক মণ শুকনা হলুদ।

তাদের দাবি, কৃষকরা আগে মাঠ ভর্তি হলুদ চাষ করতেন। তখন উৎপাদনও ভালো হতো, দামও বেশি পাওয়া যেত। এখন বেশিরভাগ চাষিই আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ করেন। ফলে হলুদের উৎপাদন ফলন কিছুটা কম হচ্ছে। আগে যেখানে বিঘা প্রতি ১০০ মণ পর্যন্ত কাঁচা হলুদ পাওয়া যেত, সেখানে ৭০ থেকে ৮০ মণ হলুদ পাওয়া যাচ্ছে। তবে হলুদ উত্তোলনে ও সেদ্ধ কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই।

বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন শাহাজাহান আলী। শিক্ষকতার পাশাপাশি চাষাবাদও করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি। সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনোই হলুদের চাষবাদ করেননি। কিন্তু গত বছর হলুদ চাষ করে বাম্পার ফলন পান তিনি। ব্যাপক দাম পাওয়ায় হলুদ চাষে আবারও আগ্রহী হয়েছেন। এবার উচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন তিনি।

পৌর এলাকার জোতরঘু গ্রামের কৃষক সুজাত আহম্মেদ তুফান বলেন, প্রথম কয়েক দফা জমি চাষাবাদ করে সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করার পর বীজ বপন করতে হয়। আগে হলুদ চাষে তেমন কীটনাশক ব্যবহার করা লাগতো না। এবছর হলুদে রোগ দেখা দেওয়ায় কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করতে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

আড়ানী পৌর এলাকার গোচর গ্রামের শিক্ষক আমানুল হক আমান বলেন, আগে ফাঁকা জমিতে হলুদ চাষ করতাম। এখন আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছি। পাঁচ হাজার টাকার বীজ কিনে হলুদ রোপণ করেছি। হলুদের গাছ গজানোর সময় দুইবার সেচ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য রাসায়নিক সার ও কিটনাশক দিয়েছি। এতে যে পরিমাণ হলুদ উৎপাদন হয়েছে, তাতে খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি টাকা আয় হবে।

আড়ানী পৌর এলাকার হলুদ ব্যবসায়ী আসরাফ আলী বলেন, আগে আড়ানী এলাকার কৃষকরা হলুদ বেচাবিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতাম। উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুইদিন হলুদের হাট বসে। সেখানে প্রতি হাটে ১০০ থেকে ৩০০ মণ হলুদ বেচাকেনা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুকনো হলুদ ও হলুদের গুড়া সরবারহ করি বলেও জানান তিনি।

আড়ানী পৌর বাজারের মোল্লা ট্রেডার্সের একটি কারখানায় শুকনা হলুদের পরিচর্যাও বাছাই করছিলেন শ্রমিকরা। সেখানে মোল্লা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ হাজার মণ শুকনা হলুদ বিভিন্ন কৃষকদের কাছ থেকে কিনি। তারপর সেই হলুদ কারখানায় বাছাই করা হয়। বাছাইয়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। বাছাই শেষে আকৃতিভেদে প্যাকেটজাত করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। আবার সরাসরি হলুদের গুঁড়া তৈরির কোম্পানির কাছেও হলুদ বিক্রি করা হয়।

আড়ানী পৌরসভার কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক জানান, সরকার বাজারে হলুদের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দেশে কখনোই হলুদের সঙ্কট পড়বে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আগের চেয়ে আবাদের পরিমাণ কমলেও হেক্টর প্রতি হলুদের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরাও হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আগে যেখানে কৃষকরা হলুদ লাগিয়ে পরিচর্যা না করে ফেলে রাখতেন, এখন সেখানে সার, সেচ ও কীটনাশক দেওয়ায় হলুদের উৎপাদন বেশি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হাইব্রিড, বারি ও উফসী জাতের কিছু হলুদের উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে হলুদ চাষে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, স্থানীয় জাত বাদ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ উদ্ভাবিত বেশি ফলনের হলুদ যাতে চাষীরা চাষাবাদ করেন সেই বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

;

দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে একথা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়- ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহী সদরে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এদিকে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

;