পানির অধিকার চায় বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রামের কোনো নলকূপেই পানি ওঠে না। ডোবার পানি দিয়ে ভাত-ডাল রান্না করা হচ্ছে। দুই কিলোমিটার দূরের একটি নলকূপ থেকে নিয়ে আসতে খাবার পানি। এভাবেই চলছে আমাদের জীবনযাপন। বুধবার রাজশাহীতে এক মানববন্ধনে জেলার তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষেরা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরা প্রবণ এলাকা। এলাকাটি দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে ভৌগোলিক ভাবে আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতসহ পানি সমস্যা। সেই প্রাকৃতিক উৎসগুলো দিনে দিনে দখল আর নষ্ট হওয়াসহ প্রভাবশালীদের লিজ নেয়ার কারণে সেখানে প্রান্তিক মানুষ আর আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। একসময় গ্রাম ও শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করতো। কিন্তু পানির অধিকার নিশ্চিত করতে পাচ্ছেনা।

তারা আরও বলেন, উন্নয়নের ভুল পদক্ষেপের কারনে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে নিচে নেমে গেছে। যার ফলে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পানির উৎস পাতকুয়া, কুয়া, সেবার নামে আর্থিক মূল্যে পানি বিক্রি করছে এখন। গ্রামগুলোতে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মাফিক পানির অভাব পুকুর, দীঘি, জলাশয়, টিউবওয়েল, নলকূপগুলোতে আর পানি পাওয়া যায়না। এর স্থলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানি দেখা দিয়েছে মারাত্বকভাবে।

বক্তরা বলেন, বারবার ধরনা দিয়েও অনেক সময় পানির অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছেনা। তেমন একটি গ্রাম তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়া। এখানে দীর্ঘযুগ থেকে প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী মাহালী সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঁশ বেতের কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই গ্রামে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পানির কোন উৎস না থাকায় প্রতিক্ষণে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জনগোষ্টীকে। অনেক দূর থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। অভাবের সংসারে পানি কিনে এনে খাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেক দূর থেকে পানি আনতে নারীদের নানা শারীরিক সমস্যা সহ অনেক সময় নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়।

বক্তরা আরও বলেন, স্থানীয় পুকুড় জলাশয়গুলো প্রভাবশালীরা লীজ নিয়ে তাতে রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ করে এবং সে সকল পুকুড় থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম ঘটনা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় গ্রামগুলোতেই কম বেশি দেখা যায়। এভাবে আর এই যুগে চলা যায় না। আমরা এই ডিজিটাল বাংলাদেশে পানি পাবো না এটা কি করে সম্ভব? আমরা পানির অধিকার চাই। বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ আর কতদিন পিছিয়ে থাকবে? প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এদিন সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দাবি জানানো হয়।

দাবিগুলো হলো- তানোর উপজেলার মুন্ডুমালার আদিবাসী মাহালী পাড়াতে দ্রুত পর্যাপ্ত ডিপ টিউবওয়েল-টিউবওয়েল-সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে খাবার পানির সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে।

রাজশাহী জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর-দীঘি এবং চলমান জলাভূমি লিজ প্রথা সংশোধন করে সত্যিকারে স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে।

গ্রামের ভিতরে বা কাছাকাছি পুকুরগুলো গ্রাম বাসির নামে-কমিউনিটির নামে বিনাশর্তে লিজ দিতে হবে যাতে কমিউনিটির মানুষগুলো এটি ব্যবহার করতে পারে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল পুকুর-দীঘিগুলো সংস্কার করে দিতে হবে। যাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারসহ কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। অতএব, আপনার প্রতি আমাদের আবেদন যে, উক্ত দাবিগুলো পূরণে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

এসময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, মাহালী পাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠনের চিচিলিয়া হেমব্রম, বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনিমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পোলট্রি খাতে ৫২ দিনে হরিলুট ৯৩৬ কোটি টাকা!



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি না থাকার সুযোগে পোল্ট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) সংগঠনটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, মুরগির উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রান্তিক খামারিদের সরিয়ে গত ৫২ দিনে পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র ৯৩৬ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে।

সংগঠনটির দাবি, এ খাতের করপোরেট গোষ্ঠী ইচ্ছে মতো ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়, আর সেই দাম মেনে নিয়ে প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করলে বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে লোকসানে ফেলা হয়। তাতে করে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়ছে। আবার খামারিরা উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে দেয় ওইসব বড় কোম্পানি।

বিপিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন ১ কেজি উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, আর করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।

খামারিদের সংগঠনটি বলছে, প্রতিদিন যদি ২ হাজার টন সরবরাহ ধরে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকাও অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়, তবে একদিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। ৩১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫২ দিনে সেই অতি মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২৪ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। প্রতি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় হয়েছে। আর ৩১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেই বাচ্চা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়। তাহলে ৫২ দিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা।

এ সময় প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে না থাকার সুযোগে মুরগি ও বাচ্চা থেকে পোল্ট্রি শিল্পের পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা।

;

শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করবেন এবং সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সারাদেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সকল সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।

এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহন করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি।

এছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হল আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়: ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।

ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়।

সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

;

খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আনসার আলী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুর ২ টার দিকে নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি এলাকার একটি ক্লিনিকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি এলাকার লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। নিহত শেখ আনসার আলী দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক।

পুলিশ জানায়, তিনি জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে পৌঁছালে কয়েকজন তার গতিরোধ করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তার শরীরে পরপর তিনটি গুলি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, নিহত আনসার দীঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হত্যা মামলার আসামি। তিনি দীর্ঘদিন খানজাহান আলী থানার শিরোমনি এলাকায় বসবাস করতেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

;

শনিবার রাতে এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে দেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিভীষিকাময় কালরাতের প্রথম প্রহর স্মরণ করে গণহত্যা দিবসে ২৫ মার্চ এক মিনিট অন্ধকারে (ব্ল্যাক আউট) থাকবে সারা দেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার স্মরণে ২৫ মার্চ রাত ১০টা ৩০ থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকার থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দেবেন এবং সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

এ ছাড়া স্কুল, কলেজ এবং মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর/সুবিধাজনক সময়ে দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনা করা হবে।

;