সূর্যমুখীর হাসি



আরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
সূর্যমুখী

সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

চারদিকে নজর কাড়া হলুদ ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। এ যেনো অপরূপ দৃশ্য। মৌমাছির গুণগুণ শব্দে মুখরিত সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। হলুদ রঙের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সূর্যের দিকে। সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যের হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের বাসাইলের চাষিরা।

গ্রাম-বাংলার চাষিদের মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপ মেলেছে সূর্যমুখী ফুলে। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। দেখে মনে হয় সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে খুশি কৃষক, তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রেমী মানুষকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখী ফুলের মাঠে।

সূর্যমুখী চাষি সোরহাব মিয়া বলেন, আমি সৌদি আরব ফুলের বাগানে কাজ করেছি। ওখানে অনেক ধরনের ফুল গাছের চারা রোপণ করেছি। সৌদ আরব সূর্যমুখীর আবাদ বেশি হয় চাহিদাও অনেক। তখন আমি চিন্তা করি দেশে যেয়ে কিছু করবো। করোনার মধ্যে দেশে চলে আসি আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। পরে চিন্তা করলাম বসে না থেকে কিছু একটা করি। তারপর বাসাইল কৃষি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করি। তাদের পরার্মশে গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করি। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছি ৬-৭ হাজার টাকা। সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। এবছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে আশা করছি ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিন-চারগুণ বেশি আবাদ হয় খরচ প্রায় সমান হয়। সূর্যমূখী চাষ করতে চার- সাড়ে চার মাস সময় লাগে ও দুইটা সেচ দিতে হয়। চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি। আমার বাজারে বিক্রি করতে যেতে হয় না। বাড়ি থেকে এসে ক্রেতারা নিয়ে যায়। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (অনলাইন) বিক্রি করছি। সূর্যমুখী চাষে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে সৌন্দর্য বাড়ছে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর দু’শত ৩০ হেক্টর সূর্যমুখীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত অর্জন করা হয় দু’শত ৪২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় ১৪ হেক্টর বেশি আবাদ হয়। যে আবাদ হয়েছে তা থেকে ৪’শত ৪২ মে.টন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে। জেলায় এ বছর ৬২৫ জন কৃষককে সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এওপি সার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান গ্রামের অর্ণব আল আমিন বলেন, গত বছর সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখী ক্ষেত ঘুরতে এসে অনেক ভালো লাগে। এবছর আমিও আমার বাড়ির উঠানে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এক দিকে সৌন্দর্য বাড়ছে আরেক দিকে তেলের চাষিদা পূরণ হবে।

টাঙ্গাইল থেকে ঘুরতে আসা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজীব মিয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখেছি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসলাম। সূর্যমুখী ফুলের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।

রাজন সাহা বলেন, তেল উৎপাদনের জন্য বাজারে সূর্যমুখী বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারবো।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সরিষার আবাদ যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেভাবে সূর্যমূখীর আবাদও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখীর বড় ধরনের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। সূর্যমুখী বীজ থেকে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদেরকে সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধির জন্য যেমন উৎসাহ দিচ্ছি। তেমনি তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছি প্রতিনিয়তই। সূর্যমুখীর আবাদ কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে ধারণা দিচ্ছি। রোগ-বালাই থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের পাশে থেকে উৎসাহ প্রদান করছি। এজন্য টাঙ্গাইলে দিনদিন সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ছাত্রলীগের ক‌মি‌টি নি‌য়ে নোয়াখালীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নোয়াখালী
ছাত্রলীগের ক‌মি‌টি নি‌য়ে নোয়াখালীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

ছাত্রলীগের ক‌মি‌টি নি‌য়ে নোয়াখালীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার সোনাইমুড়ী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ীতে উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমানে দুটি কমিটি রয়েছে। তারা আলাদা আলাদা ভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুরনো কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল উদ্দিন। গত বছর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়। ওই দিনই নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করে।

কমিটিতে আরিফ হোসেনকে সভাপতি ও রাসেল মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ছাত্রলীগের বিবদমান অপর গ্রুপ অভিযোগ করে, জেলা ছাত্রলীগ টাকা নিয়ে এই কমিটি দেয়। যেহেতু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জেলা কমিটি ভেঙে দিছে। সেক্ষেত্রে জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটি দিতে পারে না। এরপর আরিফ-রাসেলের নতুন এই কমিটিকে কেন্দ্রীয় কমিটি বৈধ ঘোষণা করেছে বলে দাবি করে তারা। এই বৈধতার আলোকে উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সোনাইমুড়ী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের ও সাধারণ সম্পাদক আফম বাবু ও জেলা পরিষদের সদস্য বাহার প্রমুখ। সেখানে ভিডিও কনফারেন্সে নতুন উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা বৈধ ঘোষণা করে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। এমন খবর পেয়ে সেখানে উপজেলা ছাত্রলীগের পুরনো কমিটির সভাপতি সুজন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল তাদের অনুসারীদের নিয়ে সভাস্থলে গিয়ে সভা পণ্ড করে দেয়। ওই সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। তবে তাৎক্ষণিক আহতদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের পুরনো কমিটির সাধারাণ শ্যামল উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আমাদের ৩-৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত শিবির থেকে আগত নেতারা আজকে ছাত্রলীগের নামে সভা করতে চেয়েছিল। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি টের পেয়ে সভা বন্ধ করে দেয়। এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের সংঘর্ষের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এখানে কেন্দ্র একটি কমিটি দিয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের পুরনো কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছিল। আজকের সভায় ভিডিও কনফারেন্সে কেন্দ্রীয় কমিটি সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে বৈধ কমিটি হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। উপজেলা ছাত্রলীগের বিবদমান অপর গ্রুপ বলতেছে তারা এ সভা করতে দেবে না।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

;

পোলট্রি খাতে ৫২ দিনে হরিলুট ৯৩৬ কোটি টাকা!



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি না থাকার সুযোগে পোল্ট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) সংগঠনটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, মুরগির উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রান্তিক খামারিদের সরিয়ে গত ৫২ দিনে পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র ৯৩৬ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে।

সংগঠনটির দাবি, এ খাতের করপোরেট গোষ্ঠী ইচ্ছে মতো ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়, আর সেই দাম মেনে নিয়ে প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করলে বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে লোকসানে ফেলা হয়। তাতে করে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়ছে। আবার খামারিরা উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে দেয় ওইসব বড় কোম্পানি।

বিপিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন ১ কেজি উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, আর করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।

খামারিদের সংগঠনটি বলছে, প্রতিদিন যদি ২ হাজার টন সরবরাহ ধরে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকাও অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়, তবে একদিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। ৩১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫২ দিনে সেই অতি মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২৪ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। প্রতি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় হয়েছে। আর ৩১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেই বাচ্চা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়। তাহলে ৫২ দিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা।

এ সময় প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে না থাকার সুযোগে মুরগি ও বাচ্চা থেকে পোল্ট্রি শিল্পের পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা।

;

শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করবেন এবং সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সারাদেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সকল সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।

এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহন করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি।

এছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হল আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়: ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।

ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়।

সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

;

খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আনসার আলী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুর ২ টার দিকে নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি এলাকার একটি ক্লিনিকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি এলাকার লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। নিহত শেখ আনসার আলী দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক।

পুলিশ জানায়, তিনি জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে পৌঁছালে কয়েকজন তার গতিরোধ করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তার শরীরে পরপর তিনটি গুলি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, নিহত আনসার দীঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হত্যা মামলার আসামি। তিনি দীর্ঘদিন খানজাহান আলী থানার শিরোমনি এলাকায় বসবাস করতেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

;