সূর্যমুখীর হাসি

সূর্যমুখী
চারদিকে নজর কাড়া হলুদ ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। এ যেনো অপরূপ দৃশ্য। মৌমাছির গুণগুণ শব্দে মুখরিত সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। হলুদ রঙের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সূর্যের দিকে। সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যের হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের বাসাইলের চাষিরা।
গ্রাম-বাংলার চাষিদের মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপ মেলেছে সূর্যমুখী ফুলে। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। দেখে মনে হয় সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে খুশি কৃষক, তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রেমী মানুষকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখী ফুলের মাঠে।
সূর্যমুখী চাষি সোরহাব মিয়া বলেন, আমি সৌদি আরব ফুলের বাগানে কাজ করেছি। ওখানে অনেক ধরনের ফুল গাছের চারা রোপণ করেছি। সৌদ আরব সূর্যমুখীর আবাদ বেশি হয় চাহিদাও অনেক। তখন আমি চিন্তা করি দেশে যেয়ে কিছু করবো। করোনার মধ্যে দেশে চলে আসি আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। পরে চিন্তা করলাম বসে না থেকে কিছু একটা করি। তারপর বাসাইল কৃষি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করি। তাদের পরার্মশে গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করি। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছি ৬-৭ হাজার টাকা। সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। এবছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে আশা করছি ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিন-চারগুণ বেশি আবাদ হয় খরচ প্রায় সমান হয়। সূর্যমূখী চাষ করতে চার- সাড়ে চার মাস সময় লাগে ও দুইটা সেচ দিতে হয়। চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি। আমার বাজারে বিক্রি করতে যেতে হয় না। বাড়ি থেকে এসে ক্রেতারা নিয়ে যায়। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (অনলাইন) বিক্রি করছি। সূর্যমুখী চাষে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে সৌন্দর্য বাড়ছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর দু’শত ৩০ হেক্টর সূর্যমুখীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত অর্জন করা হয় দু’শত ৪২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় ১৪ হেক্টর বেশি আবাদ হয়। যে আবাদ হয়েছে তা থেকে ৪’শত ৪২ মে.টন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে। জেলায় এ বছর ৬২৫ জন কৃষককে সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এওপি সার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান গ্রামের অর্ণব আল আমিন বলেন, গত বছর সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখী ক্ষেত ঘুরতে এসে অনেক ভালো লাগে। এবছর আমিও আমার বাড়ির উঠানে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এক দিকে সৌন্দর্য বাড়ছে আরেক দিকে তেলের চাষিদা পূরণ হবে।
টাঙ্গাইল থেকে ঘুরতে আসা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজীব মিয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখেছি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসলাম। সূর্যমুখী ফুলের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।
রাজন সাহা বলেন, তেল উৎপাদনের জন্য বাজারে সূর্যমুখী বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারবো।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সরিষার আবাদ যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেভাবে সূর্যমূখীর আবাদও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখীর বড় ধরনের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। সূর্যমুখী বীজ থেকে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদেরকে সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধির জন্য যেমন উৎসাহ দিচ্ছি। তেমনি তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছি প্রতিনিয়তই। সূর্যমুখীর আবাদ কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে ধারণা দিচ্ছি। রোগ-বালাই থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের পাশে থেকে উৎসাহ প্রদান করছি। এজন্য টাঙ্গাইলে দিনদিন সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।