রাজশাহীতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে হলুদ চাষ



মোঃ আব্দুল হাকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মসলা জাতীয় শস্য হলুদ চাষ। খরচের তুলনায় লাভ দ্বিগুণ, চাষ করা যায় অন্য ফসলের সঙ্গে। হলুদ ক্ষেতে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না। শুধুমাত্র উঁচু জমি, পতিত জমি কিংবা বাড়ির আঙিনাই নয়; বাঁশ গাছ, কলা বাগান ও আমসহ অন্যান্য বাগানেও সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে হলুদ। মানে ও গুণে ভালো হওয়ায় বিভিন্ন জেলায় সুনাম কুড়িয়ে চলছে ফসলটি। এ ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকরা। এদিকে ভালো মানের হলুদ চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত মৌসুমে উপজেলায় হলুদের আবাদ হয়েছিল ৪৭০ হেক্টর জমিতে। যেখানে শুকনা হলুদ পাওয়া যায় ২ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৫৭৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয় হলুদ। তবে বৃষ্টিপাতের অপেক্ষায় শেষ পর্যন্ত কিছুটা কমেছে হলুদ উৎপাদন। এবছর ১ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন শুকনা হলুদ পাওয়া গেছে। সেই অনুযায়ী হলুদের বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি টাকায়। ইতোমধ্যে হলুদ মজুদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, উপজেলায় প্রায় এক হাজার লোকের জীবিকা জড়িয়েছে হলুদ চাষ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রিতে। কাঁচা হলুদকে বিক্রির উপযোগী করতে গড়ে উঠেছে শতাধিক চাতাল। কাঁচা হলুদ বাছাই থেকে শুরু করে হলুদ সেদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। বিগত কয়েক বছরে হলুদ ব্যবসায় নেমে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

হলুদ চাষিরা বলছেন, হলুদের বীজ জমিতে বপনের পর পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগে হলুদ পরিপক্ক হতে। তখন বিঘাপ্রতি কাঁচা হলুদ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ। এরপর সেই কাঁচা হলুদ গরম পানিতে সেদ্ধ করে সমতল জমিতে চাতাল করে শুকাতে হয়। ২০ থেকে ২৫ দিন রোদে শুকানোর পর শুকনো হলুদ পাওয়া যায়। প্রকারভেদে শুকনা হলুদ বিক্রি হয় কেজি প্রতি ১৬০ থেকে ২২০ টাকা দরে। আর কাঁচা হলুদ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। চার থেকে পাঁচ মণ কাঁচা হলুদ শুকানোর পর পাওয়া যায় এক মণ শুকনা হলুদ।

তাদের দাবি, কৃষকরা আগে মাঠ ভর্তি হলুদ চাষ করতেন। তখন উৎপাদনও ভালো হতো, দামও বেশি পাওয়া যেত। এখন বেশিরভাগ চাষিই আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ করেন। ফলে হলুদের উৎপাদন ফলন কিছুটা কম হচ্ছে। আগে যেখানে বিঘা প্রতি ১০০ মণ পর্যন্ত কাঁচা হলুদ পাওয়া যেত, সেখানে ৭০ থেকে ৮০ মণ হলুদ পাওয়া যাচ্ছে। তবে হলুদ উত্তোলনে ও সেদ্ধ কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই।

বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন শাহাজাহান আলী। শিক্ষকতার পাশাপাশি চাষাবাদও করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি। সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনোই হলুদের চাষবাদ করেননি। কিন্তু গত বছর হলুদ চাষ করে বাম্পার ফলন পান তিনি। ব্যাপক দাম পাওয়ায় হলুদ চাষে আবারও আগ্রহী হয়েছেন। এবার উচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন তিনি।

পৌর এলাকার জোতরঘু গ্রামের কৃষক সুজাত আহম্মেদ তুফান বলেন, প্রথম কয়েক দফা জমি চাষাবাদ করে সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করার পর বীজ বপন করতে হয়। আগে হলুদ চাষে তেমন কীটনাশক ব্যবহার করা লাগতো না। এবছর হলুদে রোগ দেখা দেওয়ায় কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করতে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

আড়ানী পৌর এলাকার গোচর গ্রামের শিক্ষক আমানুল হক আমান বলেন, আগে ফাঁকা জমিতে হলুদ চাষ করতাম। এখন আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছি। পাঁচ হাজার টাকার বীজ কিনে হলুদ রোপণ করেছি। হলুদের গাছ গজানোর সময় দুইবার সেচ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য রাসায়নিক সার ও কিটনাশক দিয়েছি। এতে যে পরিমাণ হলুদ উৎপাদন হয়েছে, তাতে খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি টাকা আয় হবে।

আড়ানী পৌর এলাকার হলুদ ব্যবসায়ী আসরাফ আলী বলেন, আগে আড়ানী এলাকার কৃষকরা হলুদ বেচাবিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতাম। উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুইদিন হলুদের হাট বসে। সেখানে প্রতি হাটে ১০০ থেকে ৩০০ মণ হলুদ বেচাকেনা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুকনো হলুদ ও হলুদের গুড়া সরবারহ করি বলেও জানান তিনি।

আড়ানী পৌর বাজারের মোল্লা ট্রেডার্সের একটি কারখানায় শুকনা হলুদের পরিচর্যাও বাছাই করছিলেন শ্রমিকরা। সেখানে মোল্লা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ হাজার মণ শুকনা হলুদ বিভিন্ন কৃষকদের কাছ থেকে কিনি। তারপর সেই হলুদ কারখানায় বাছাই করা হয়। বাছাইয়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। বাছাই শেষে আকৃতিভেদে প্যাকেটজাত করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। আবার সরাসরি হলুদের গুঁড়া তৈরির কোম্পানির কাছেও হলুদ বিক্রি করা হয়।

আড়ানী পৌরসভার কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক জানান, সরকার বাজারে হলুদের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দেশে কখনোই হলুদের সঙ্কট পড়বে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আগের চেয়ে আবাদের পরিমাণ কমলেও হেক্টর প্রতি হলুদের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরাও হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আগে যেখানে কৃষকরা হলুদ লাগিয়ে পরিচর্যা না করে ফেলে রাখতেন, এখন সেখানে সার, সেচ ও কীটনাশক দেওয়ায় হলুদের উৎপাদন বেশি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হাইব্রিড, বারি ও উফসী জাতের কিছু হলুদের উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে হলুদ চাষে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, স্থানীয় জাত বাদ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ উদ্ভাবিত বেশি ফলনের হলুদ যাতে চাষীরা চাষাবাদ করেন সেই বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ফেনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীসহ নিহত ৩



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনীর কাজিরদিঘি এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) ভোরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কুমিল্লার হোমনা উপজেলার সুবারামপুর এলাকার মো. শিমুল (৩০), তার স্ত্রী ইয়াসমিন (২০) ও কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পিকআপ ভ্যানচালক আবু সাঈদ (২৯)।

ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ওসি রাশেদ খান চৌধুরী জানান, ভোরে চট্টগ্রাম থেকে এক দম্পতি বাসার মালামাল নিয়ে কুমিল্লায় যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার কাজিরদিঘীতে পৌঁছালে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী লরিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় তাদের মালামাল বহনকারী পিকআপটি। এতে পিকআপ ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে তিন জন নিহত হন।

এদিকে আহত ব্যক্তিদের পুলিশ উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন ও আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

মরদেহ ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আহত দুজন ২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

;

মোল্যা নজরুল আর্মড পুলিশে বদলি, গাজীপুরে নতুন কমিশনার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি মো. মাহবুব আলম।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, জননিরাপত্তা বিভাগের ২৫ এপ্রিল স্মারকের আলোকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ৮ মে স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাদ্বয়কে বর্ণিত পদে বদলি ও পদায়ন করা হলো। এতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বর্তমান কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামকে আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিনের (এপিবিএন) ডিআইজি এবং এপিবিএনের ডিআইজি মো. মাহবুব আলমকে জিএমপির কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হলো। এ আদেশ ৩১ মে থেকে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

;

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরদোয়ানের ফোন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

বুধবার (৩১ মে) দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে টেলিফোনে আলাপকালে এরদোয়ান পুনরায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানিয়েছে, আলাপকালে এই দুই নেতা কুশল বিনিময় করেন এবং পরস্পরের সঙ্গে প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেন।

ভোটে তুরস্কের জনগণ সঠিক প্রার্থী বেছে নেবেন, এমন আস্থা ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আস্থা প্রমাণিত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশের জনগণ চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের মতো যেকোনো প্রয়োজনে তুরস্কের ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণের পাশে দাঁড়াতে অবিচল থাকবে।

এরদোয়ানে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ে তুরস্কের উচ্ছ্বসিত জনগণের সঙ্গে মানসিকভাবে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণ একাত্ম ছিল উল্লেখ করে এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করার কামনা করেন।

তিনি বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

কথোপকথনের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও তার পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তার মাধ্যমে যেন তুরস্কের জনগণের জন্য শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন।

;

দেশে দুধের ঘাটতি ৮৯২১ মেট্রিক টন



তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পুষ্টিমান ও পুষ্টিহীনতা রোধে দুধই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু সরকারের নানা উদ্যোগে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও বিশাল ঘাটতি রয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৯৩.৩৮ মিলিলিটার। ঘাটতি থাকছে ৫৪ গ্রাম। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা হিসেবে (১ কোটি ৫২ লাখ) এ ঘাটতি ৮ হাজার ৯২১ মেট্রিক টনে এসে পৌছেছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ। বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহৎ অংশ তরল দুধ পান থেকে বঞ্চিত। গরুর দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রণ, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুধের মূল উৎস গরু। ৯০ শতাংশ দুধ আসে গরু থেকে, আট শতাংশ আসে ছাগল থেকে এবং দুই শতাংশ আসে মহিষ থেকে। ১৯৮৯-৯০ থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২.৪ শতাংশ, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৬.৪৪ শতাংশ। বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৯৩.৩৮ মিলিলিটার।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি না করে পারকেপিটা উৎপাদন বৃদ্ধির চিন্তা করতে হবে। এজন্য জাত উন্নয়নের বিকল্প নেই। দেশি গরু থেকে দুধের উৎপাদন ৫-৭ কেজি হলেও উন্নত জাতের একটি গরু ২০- ৪০ কেজি পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে জাত উন্নত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাত উন্নয়নের মাধ্যমে মহিষের দুধের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য ভারতীয় গীর বা অন্যকোনো জাত এনে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের দিকে যেতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। খামারিদের আধুনিক শেড, সাইলেজ করা, ভ্যাকসিন দেওয়াসহ নানান পরামর্শ দিতে হবে। সর্বোপরি উৎপাদিত দুধ যাতে খামারিরা নিশ্চিন্তে বিক্রি করতে পারে সরকারকে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই আমাদের দুধের ঘাটতি পূরণ হবে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। বরাবরের মতোই এ বছরও এ দিনকে কেন্দ্র করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়াধীন প্রাণিসম্পদ অধিদফতর দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন (কওই) অডিটোরিয়ামে ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন’ ও ‘ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’ এ আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করছে।

ঢাকার বাইরেও এলডিডিপি প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলায় বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে নেওয়া হয় নানামুখী কর্মসূচি। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়/এতিমখানার শিশুদের দুধ খাওয়ানো, কুইজ কম্পিটিশন, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র‌্যালি ও সভা আয়োজন এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চারটি ক্যাটাগরিতে দেশের দুগ্ধ খাতের ৪১ জন সফল খামারি ও উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ পুরস্কারের খাতভিত্তিক নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হলো- ডেইরি খামার ক্যাটাগরিতে ২০টি, পশুখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৮টি, দুধ/মাংস প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৯টি এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ ক্যাটাগরিতে ৪টি। প্রতিটি পুরষ্কারের মূল্যমান এক লক্ষ টাকা। সেই সাথে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে ক্রেস্ট ও সনদ। এর আগের বছর ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৪টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নির্বাচিত ডেইরি আইকনদের হাতে পুরস্কার তুলে দিবেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

;