যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তীব্র ভাঙনে অর্ধশত বাড়ি-ঘর ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীরপাড়ের প্রায় শত শত পরিবার। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ছাপড়া তুলে বাস করছে।
ভাঙন এলাকার ১০০ থেকে ১২০ গজ দূরে ডাম্পিংয়ের জন্য জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা থেকেই বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার মেশিন বসিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদার। এতে জিও ব্যাগ ফেলার দুই-একদিন পরেই আবার সেখানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এভাবে নদীর ভাঙনরোধ সম্ভব না অভিযোগ করছে স্থানীয়রা।
বুধবার (৭ জুন) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়। তবে জিও ব্যাগ ভরাট করতে ভাঙন এলাকার কাছ থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙনরোধে নদীর পাড়ে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করলে ও তা কাজে আসছে না। কারণ, যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুদিন না যেতেই সেখানেই আবার ভাঙন দেখা দিচ্ছে। যমুনায় বিলীন হওয়া এলাকার ১০০ থেকে ১২০ গজের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই আবার ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও ভাঙন রোধ হচ্ছে না।
ভাঙন কবলিত ব্রাহ্মণ গ্রামের শহীদুল, হাসেম মিয়া, কালাচান, আয়শা খাতুন, আব্দুল রহিমসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি হলে বস্তা ফেলা শুরু করে। ২ থেকে ৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না।
তারা আরও বলেন, ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার প্রভাবশালীরা প্রতিদিন ১৫/২০টি ট্রলারে করে বালু বিক্রি করায় এ ভাঙ্গণের তান্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে ভাঙনের তাণ্ডব আরও বাড়ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বস্তায় ভরে নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। কোথাও বালু বিক্রি করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের ফোনে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। একারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শাহজাদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ভাঙন এলাকা থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নেওয়া জন্য বলা হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন বলেন, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। এতে দ্রুতই ভাঙন দূর হবে। তবে ওই এলাকা থেকে যদি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ভাঙন এলাকার পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে তা ডাম্পিং করা হলে আবার ভাঙন দেখা দেবে। ঠিকাদার এমন কাজ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।