পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘লার্নিং কর্মব্যাগ’

ছবি: বার্তা২৪.কম
সিরাজগঞ্জের দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জয়ফুল লার্নিং স্কুলের শিক্ষামূলক কর্মব্যাগ টোকাই ও পথশিশুদের পড়ালেখায় আলো ছড়াচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকা শিশুরা তাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্কুলে না গিয়েও কর্মব্যাগ দেখে দেখে পড়ালেখা শিখছে। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নিয়েছে পৌরসভার চর-মালসাপাড়ায় অবস্থিত জয়ফুল লার্নিং স্কুল। এই স্কুলের টোকাই ও পথশিশুরা শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়ফুল লার্নিং স্কুলের ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনই টোকাই ও পথশিশু। এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ঝুঁকিপুর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে। গ্লোবাল ফান্ড ফর চিল্ড্রেন এর সহযোগিতায় ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজএ্যাডভান্টেজড পিপল (ডিডিপি) পরিচালনায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।
জানা যায়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে কর্মব্যাগের গায়ে লাগানো অক্ষর দেখে পড়া মুখস্ত করে। ফলে তারা এখন আর পড়া ভুলে যায় না। এসব শিশুর পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় প্রতিদিন তাদের কাজে পাঠিয়ে থাকে। ফলে তাদের পক্ষে নিয়মিত স্কুলে যাওয়াও সম্ভব নয় না। তাই এই শিশুদের কিভাবে স্কুলের বাইরে পড়ালেখা শিখানো যায় সেই ভাবনা থেকে এই বিশেষ কর্মব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। ফলে এসব শিশুরা যখন বিভিন্ন পণ্য রাস্তা থেকে কুড়াতে যায় তখন তারা এই বর্নমালা যুক্ত বিশেষ ব্যাগের সাহায্যে ক্লাসে শিখানো বর্নমালা গুলো দেখে দেখে পড়া মুখস্ত করে থাকেন।
স্কুলের শিক্ষার্থী সোহান মোল্লা বলেন, স্কুল করলে টাকা আয় করা সম্ভব হয় না। টাকার অভাবে বাবা-মা আমাদের মারধর করে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে আমাদের কাজে যেতেই হয়। তাই এ স্কুলে আমরা সপ্তাহে ২ দিন ক্লাস করি। বাকি দিনগুলোতে জিনিসপত্র কুড়ানোর সময় ওই ব্যাগের গায়ের বর্ণমালা দেখে দেখে পড়া মুখস্ত করি। ফলে আর আমরা পড়া ভুলে যাই না। এতে ম্যাডাম আমাদের খুব আদর করে। আবার পরিবারের সদস্যরাও ভালোবাসে।
জয়ফুল লার্নিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক আমিনা খাতুন ও রোখ সানা খাতুন বলেন, আমরা অত্যন্ত গরিব মানুষ। তাই ছেলের টোকানো জিনিস বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। একদিন কাজে না গেলে আমাদের পেট চলে না। তাই ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাই। এ কারণে পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে জয়ফুল লার্নিং স্কুল ব্যতিক্রমী উদ্যোগে আমাদের শিশুরা কাজের ফাঁকে পড়ালেখা শিখছে। এতে আমরা খুবই খুশি।
স্কুলের শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন বলেন, ২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জন টোকাই ও পথশিশু। তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকেন। যেমন কাজ না করলে তাদের পেটে ভাত জোটে না। ফলে তারা নিয়মিত স্কুলে আসতে না পারলে সপ্তাহে দুইদিন স্কুলে এলেও পড়া মনে রাখতে পারে না। ফলে এদের পড়া মনে রাখার সুবিধার্থে ও স্কুলে না এসেও যাতে পড়া মনে রাখতে পারে সে জন্য এদের লার্নিং কর্মব্যাগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এতে তাদের কাজও হচ্ছে পড়াও হচ্ছে।
ডিডিপির নির্বাহী পরিচালক কাজী সোহেল রানা বলেন, কর্মজীবি শিশুদের জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি যাতে অন্যরা এটিকে অনুসরণ করে ঝড়ে পড়া পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে।