সব রেকর্ড ভেঙে ভয়ঙ্কর ছিল আগস্ট

ছবি: বার্তা২৪.কম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে— এমন আশঙ্কা ছিল বছরের শুরু থেকেই। সেই আশঙ্কাকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ভয়ঙ্কর আগস্ট। রেকর্ড ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে এডিস মশাবাহিত এ রোগে। হাসপাতালেও ৭০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন এই মাসে, যা সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, মে থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। আগস্টে তা তীব্র আকার ধারণ করে। এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে ৭১ হাজার ৯৭৬ জনকে। এর মধ্যে ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে ২০১৯ সালের আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই ডেঙ্গু সেরোটাইপ-২ বা ডেন-২ দ্বারা আক্রান্ত বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগী বাড়লেই মৃত্যু বাড়বে। আর এতে ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে নারী, বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী এবং শিশুরা। আর ডেঙ্গুর এই সময়ে স্থানীয় সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ তাদের।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে যেখানে ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। আগস্টে তা আরও বেড়েছে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মেতে ১ হাজার ৩৬ ও জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। জুনে সারা দেশে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জুলাইয়ে সংখ্যাটি একলাফে ২০৪ জনে উঠে যায়। এর আগে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ২, মেতে ২ এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে।
চলতি বছর যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে তা গত মার্চ মাস থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সাবধান করে দিয়েছিল জরিপ করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবধানতাকে তেমন পাত্তা দেয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর কারণে হাসপাতালে সাধারণ রোগী সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবং এই রোগের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরও সেদিকে নজর না দেয়ায় চলতি বছর ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন।
তারা বলছেন, এক সময় বাংলাদেশে ডেঙ্গু মৌসুমি রোগ বলে মনে করা হলেও কয়েক বছর ধরে বছরজুড়েই এর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে এই রোগের চার ধরনের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং এটি দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।