বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকা আজ তৃতীয়। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় দেখা যায়, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৫৫ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল।
১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
অন্যদিকে ৩০১ থেকে ৪০০-এর এর মধ্যে থাকা একিউআইকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
এ তালিকায় ১৫৯ একিউআই স্কোর নিয়ে প্রথম অবস্থানে পাকিস্তানের লাহোর; ১৫৯ নিয়ে দ্বিতীয় ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা। এরপর চতুর্থ স্থানে থাকা উগান্ডার কাম্পালার স্কোর ১৫২ এবং পঞ্চম স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার স্কোর ১৩২।
মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে বায়ুদূষণে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর বাজারে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটি কালভার্ট। কালভার্টে দাঁড়িয়ে দেখা মেলে স্বচ্ছ মিষ্টি নদীর পানি। চারদিকের পরিবেশ দেখে মনে হয় এ যেনো এক টুকরো রাতারগুল।
কালভার্ট থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে দেখা মিলল স্বচ্ছ জলে নৌকা বাইতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের একটি দল। তারা মুরাদপুর ভদ্রাবতী নদী ও বগুড়ার বুকে এক টুকরো রাতারগুলের নাম শুনেছেন ইউটিউবে। সেখান থেকেই তাদের ইচ্ছে হয় এই ভদ্রাবতী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তাই শহর থেকে ছুটে আসেন মুরাদপুর গ্রামে। আরও খানিকটা এগোতেই চোখে পড়ল এই গ্রামের বাসিন্দারা কেউ মাছ ধরছেন, কেউ আবার স্বচ্ছ পানিতে ঝুপ করে নাইতে নেমেছেন।
দুই ধারে গাছপালা তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রাবতী নদী। নদীর দুই ধারের গাছগুলো বেশ ডালপালা ছড়িয়ে আছে। গাছগাছালির ভেতর দিয়ে নদীতে ঘুরতে মনে হচ্ছে এ যেনো রাতারগুল। আহ! রাতারগুল বগুড়ায়! সুন্দর সবুজ মনোরম পরিবেশে ভদ্রাবতী নদী যেনো সেজেছে তার অলৌকিক রূপে। নৌকার তলায় ঢেউয়ের শব্দে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হলো। নীরব প্রকৃতি আর মৃদুমন্দ বাতাসে এরই মধ্যে নিস্তব্ধতা ভাঙে গাছে বসে থাকা পাখির ডাকে, হঠাৎ ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয় একঝাঁক পাখি।
কোলাহলহীন শান্ত-স্নিগ্ধ ভদ্রাবতী ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করে চলে। এই ভদ্রাবতী নদীর উৎপত্তি নিয়ে কল্প কাহীনিও শোনা যায় এলাকাবাসীর মুখে। নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে রয়েছে ভদ্রাবতী নদী। বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুল বিল থেকে উৎপত্তি ভদ্রাবতী নদীর।
এই নদীর সঙ্গে সিংড়ার চলনবিল ও যমুনা নদীর সংযোগ রয়েছে। বুড়ইল ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর কুদ্দুসের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, দাদার মুখে শুনেছি রাজার শাসন আমলে শাবরুল দিঘীর বুক চিরে ভদ্রানদীর আবির্ভাব ঘটে। সেন বংশের অচিন্ত কুমার নামের শেষ রাজার আমলে তার কন্যা ভদ্রাবতীর নাম অনুসারে নদীর নামকরণ। আগে বর্ষা মৌসুমে ভরা পানিতে নদী থৈ থৈ করতো। এখন নদীতে পানি থাকেনা। এলাকার মানুষ হিসেবে কুদ্দুসের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভদ্রাবতী খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও একটি সুইচ গেট।
ভদ্রাবতীর সৌন্দর্য দেখতে এসেছেন শেরপুর উপজেলা থেকে শামিম নামের এক ছাত্র। শামিম বলেন, ইউটিউবে দেখলাম বগুড়ায় রাতারগুল, রাতারগুল সিলেটে অবস্থিত হওয়ার কারণে এবং অনেক খরচের জন্য আমি যেতে পারিনি তাই এলাকার পাশে হওয়ায় দেখতে চলে এলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। ইউটিউবে দেখেছি সিলেটের রাতারগুল, আর এখানে এসে দেখলাম অনেকটাই মিল আছে। এটা আমার কাছে গরিবের রাতারগুল বললে ভুল হবে না।
শামিম হোসেন নামের এক মাঝি বলেন, আমাদের এলাকায় এই ভদ্রাবতী নদী একটি দর্শনীয় স্থানের মত হয়ে গেছে।
বুড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জবায়ের আহমেদ বলেন জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ এই তিন মাস পানি থাকে তারপরে আর পানি থাকে না নদীতে। পানি কম হওয়ার কারণে বাকি সময় নৌকাও চলে না। ১৩ কিলেমিটার জুড়ে নদীটির দুই পাশে সবুজ গাছ পালা দিয়ে যে সুন্দর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেটি দেখতে ছুটে আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনাথীরা।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে যা বললেন আইনমন্ত্রী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী একথা জানান।
বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার দণ্ড শর্তযুক্তভাবে স্থগিত করা হয় উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, পরিবর্তন করতে হলে খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করে সহাবস্থান আনতে হবে। এরপর অন্য বিবেচনা করা যাবে। তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।
এর আগে, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন গত ৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে এখন তার পরিবারকে আদালতে যাওয়ার কথা বলা সরকার সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছু নয়।
তার আগে, গত শুক্রবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত তার কাছে কোনো আবেদন আসেনি। আবেদন করলে খালেদা জিয়ার বিষয়টি দেখা যাবে।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
মাছ কাটায় ফিরছে পরিবারের সচ্ছলতা, ঘুচছে বেকারত্ব
জাতীয়
কয়েকবছর আগেও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন লোকমান হোসেন। তবে তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চললেও সঞ্চয় ছিল না কিছুই।
তবে এখন লোকমানের দিন ভালোই যাচ্ছে। কাওরান বাজার এলাকায় মাছ কেটে প্রতিদিন তার আয় হচ্ছে ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা। এতে সংসার খরচের পাশাপাশি মাসে মোটা অংকের টাকা সঞ্চয় হচ্ছে তার।
শুধু লোকমান হোসেনই নন। কাওরান বাজারে মাছ কেটে এমন জীবন বদলেছে এখানকার ১ হাজারের বেশি পরিবারের৷ দারিদ্রতা কাটিয়ে মাছ কেটেই স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তাদের জীবন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও এই মানুষগুলো ছিল দারিদ্র্য সীমার নিচে। শুধু মাছ কেটেই এখন তাদের পরিবারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বেকারত্ব ঘুচেছে অনেকের।
এছাড়া নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন এ পেশায়। মাছ কেটেই সংসারের খরচ চালাতে বড় ভূমিকা রাখছেন। বাসা-বাড়ির কাজ কিংবা গার্মেন্টস পেশার থেকে কম কষ্টেই বেশি আয় হচ্ছে বলছেন তারা।
লোকমান হোসেন বলেন, ‘আগে রিকশা চালাতাম। কষ্টে দিন যাইত। এখানে ৫ বছর থেকে মাছ কাটি। ভালোই দিন যায়। মাসে ভালো টাকাও জমে।’
সুরাইয়া বেগম নামের একজন বলেন, ‘এই পেশায় ঝামেলা নাই। গার্মেন্টস বা বাসা বাড়ির কাজের থেকে অনেক ভালো। খরচ বাদ দিয়েও ৪-৫'শ টাকা জমে।মাছ কাটায় ফিরছে পরিবারের সচ্ছলতা, ঘুচছে বেকারত্ব
এদিকে মাছ কাটার এই যোগ্যে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। অল্প টাকায় মাছ কাটার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন ব্যস্ত শহরের বাসিন্দারা। সুবিধা ভোগীরা বলছেন, মাছ কিনে সাথে সাথে কাটার সুযোগ থাকায় বেঁচে যাচ্ছে সময়।
প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেন ইমরান হোসেন। দুই হাজার টাকার মাছ কিনে কাওরান বাজারেই কেটে নিচ্ছিলেন তিনি। এসময় বার্তা২৪.কমের কথা হয় ইমরানের সাথে।
তিনি বলেন, ‘আসলে এটা আমাদের জন্য অনেক ভালো। মাছ কেটে নিচ্ছি কেনার সাথে সাথে। এতে সময় বেঁচে যাচ্ছে। বলতে পারেন পরিবারের বড় একটা ঝামেলার সমাধান হচ্ছে।’
আরমান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অল্প টাকাতে এখানে মাছ কেটে নিতে পারছি। এতে যেমন আমাদের কাজ সহজ হচ্ছে, তেমনি এখানে যারা মাছ কাটছেন তাদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। তারা সকালে মাছ কাটলে বিকেলে অন্য কাজ করতে পারেন। এতে তাদের একাধিক পেশায় আয় করে অর্থনৈতিক মুক্তি মিলছে।’