জনবল সংকটে বন্ধ বোকাইনগর স্টেশন, ধসের ঝুঁকিতে ভবন

বোকাইনগর রেল স্টেশন
জনবল সংকটে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বোকাইনগর রেলওয়ে স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। একসময় ট্রেন চলাচল ও যাত্রীদের আনাগোনায় স্টেশনটি মুখরিত থাকলেও করোনাকাল থেকে স্টেশনে লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
স্থানীয়রা জানান, অযত্নে-অবহেলায় জৌলুস হারিয়ে ব্রিটিশদের নির্মিত একসময় জমজমাট স্টেশ্নটি এখন জ্বরাজীর্ণ। দ্রুত সংস্কার না হলে যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়তে পাড়ে। স্টেশনটি সংস্কার করে লোকাল ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী স্টেশনের নাম বোকাইনগর। স্টেশনটি চালু হয় ১৯১৮ সালে। চালুর পর থেকে এই স্টেশনটি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ স্থানীয়দের যাতায়াত ও মালপত্র বহনের অবলম্বন হয়ে উঠে। প্রথম দিকে ভালোভাবে চললেও পরে জনবল সংকটে ধুঁকতে থাকে স্টেশনটি। ২০০৪ সাল থেকে জনবল না থাকায় স্টেশনটির দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়। এরপর থেকে স্টেশনটিতে ট্রেনের টিকিট বিক্রি ও মালপত্র বুকিং বন্ধ হয়ে যায়। তবে স্বাভাবিক থাকে ট্রেন চলাচল।
প্রতিদিন এই স্টেশন হয়ে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল সহ পাঁচটি ট্রেন চলাচল করত। এরমধ্যে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করতো ময়মনসিংহ-ভৈরবগামী লোকাল ট্রেনগুলো। করোনাকালীন সময় থেকে ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বোকাইনগর স্টেশন থেকে যাত্রীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই স্টেশন হয়ে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী মেইল ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস চলাচল করলেও ট্রেনগুলো যাত্রাবিরতি দেয় না।
বোকাইনগর ইউনিয়নের বাসাবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বাবলু বলেন, নব্বই দশকে জমজমাট ছিল বোকাইনগর স্টেশন। ভৈরব-কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এই ট্রেনে অঞ্চলে এসে কৃষি পণ্য নিয়ে যেত। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবি, কৃষকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এই স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ট্রেনে যাতায়াত করত। পরবর্তীতে স্টেশনের দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতিতে দাঁড়াত এখানে। কিন্ত করোনাকাল থেকে লোকাল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় এখানে আর কোন ট্রেন থামে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথের একটি লোকাল ট্রেন প্রতিদিন ভোরে ভৈরব থেকে যাত্রা করে সকাল নয়টায় ময়মনসিংহ পৌঁছাত। কিন্ত এখন ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথের লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রীদের বিকল্প পথে যাতায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে বোকাইনগর স্টেশনের টিনশেড ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ভেঙে পড়ছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। দরজা-জানালা ভাঙা থাকায় ভবনের ভেতর মলমূত্র ত্যাগ ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে স্থানীয়রা। আলোকসজ্জা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা নামতেই ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় স্টেশনের প্লাটফরমে।
বোকাইনগর ইউনিয়নের বালুচড়া গ্রামের কৃষক আবুল ফজল বলেন, ব্রিটিশদের নির্মিত বোকাইনগর স্টেশনের ভবনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে। এক সময়ের জমজমাট স্টেশনটিতে সন্ধ্যার নামার পরপরই ভুতূড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। আমাদের দাবি লোকাল ট্রেন চালুর পাশাপাশি স্টেশনে জনবল নিয়োগ করে পুনরায় চালু করা হোক।
বোকাইনগর স্টেশনটি ডি ক্যাটাগিরির। চালু থাকাকালীন স্টেশনে তিনজন বুকিং মাস্টার, একজন পোর্টারম্যান ও একজন সুইপার ছিল। জনবল সংকটে স্টেশনটি বন্ধ থাকলেও কিছু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গৌরীপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম বলেন, ভৈরব-ময়মনসিংহ সেকশনে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল সহ পাঁচটি ট্রেন চলাচল করত। করোনাকালীন সময়ে এই রুটে লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ও মেইল ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস চলাচল করলেও বোকাইনগরে এই ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে জনবল নিয়োগ ও ট্রেন চলাচল চালু করলে স্টেশনটি চালু হতে পারে।