হরতালে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকায় ভাটা

  • মেহেদী হাছান মাহীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম,ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: মো. মামুন হোসেন

ছবি: মো. মামুন হোসেন

ফুটপাতের চা দোকানদার মো. মামুন হোসেন। বিয়ে করেছেন পাঁচ মাস হয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর গাবতলীর খালেক সিটির ভাড়া বাড়িতে। বাবা ১৫ বছর আগে মারা গেলেও মা থাকেন গ্রামের বাড়ি বরিশালে। প্রথমে তিনি একটি সংস্থায় চাকরি করলেও সেখানে নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় অবশেষে ফুটপাতে চায়ের দোকান দিয়েছেন। চলমান অবরোধ-হরতাল পরিস্থিতিতে আয় রুজিতে ভাটা পড়েছে বলে জানান তিনি।

রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে গাবতলী বাস স্টেশনে বার্তা ২৪. কমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি নিজের এমন পরিস্থিতির কথা জানান।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েক দিন ধরে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। ব্যবসায়-বাণিজ্যে ও দৈনিক আয়-রোজগারে পড়েছে ভাটা। আয় রোজগার না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব মানুষকে। তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় উপার্জন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সরকার পদত্যাগের এক-দফা দাবি এবং তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার (১৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর  ষষ্ঠ দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। রোববার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। 

বিজ্ঞাপন

মো. মামুন হোসেন বলেন, হরতাল দেওয়ার কারণে তেমন কোনো মানুষ আসে না। বেচাকেনা খুবই খারাপ। সকাল সাতটা বাজে দোকান খুলেছি, এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই বিক্রি হয় নাই। হরতাল-অবরোধের আগে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি হলেও এখন প্রতিদিনই লোকসান হচ্ছে। দোকান খুললেই ৩৩০ টাকা চাঁদা দেওয়া লাগে। এখন বর্তমানে পাঁচশ টাকা বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে কোনো বেচাকেনা নাই। প্রতিদিনই লোকসান দিতে হচ্ছে। মানুষ এখন আর আগের মতো আসে না। মাস শেষে মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। দ্রব্যমুল্যের যে অবস্থা তাতে পরিবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি।

মামুন আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতালকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যেভাবে দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই। সরকার যদি দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দেক। সরকারের ভেতর একটা সিন্ডিকেট সরকার রয়েছে। তারাই মূলত দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির জন্যে দায়ী। তাই তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত।

ছবি: মো. রতন

অবরোধ-হরতালের কারণে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মো. রতন নামের একজন রিক্সা চালক। রাজধানীর গাবতলীর কুটুমবাড়ী এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। স্ত্রী, তিন ছেলে সন্তানসহ মোট পাঁচ সদস্য নিয়ে তার পরিবার।

রতন তার বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বার্তা ২৪.কমকে বলেন, প্রতিদিন গ্যারেজ থেকে রিকশা বের করলে মালিক পক্ষকে ১২০ টাকা করে দিয়ে দেওয়া লাগে। অবরোধ-হরতালের আগে দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা ইনকাম করতাম। আর এখন বর্তমানে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ইনকাম করতেও কষ্ট হয়। আগে মাছ খেতে পারতাম কিন্তু এখন ডাল ভাত খাওয়া লাগে।

তিনি বলেন,বর্তমানে ইনকামের চেয়ে খরচ বেশি। এখন হরতাল-অবরোধ না দেওয়াই ভালো। হরতাল-অবরোধ থাকলে আমরা ইনকাম করতে পারি না। পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাতে আমার অনেক কষ্ট হয়।