মানিকগঞ্জে কমেনি গরু-মহিষ-খাসির মাংসের দাম!
রাজধানীর বাজারগুলোতে গরু-মহিষ-খাসি ও ছাগলের মাংসের দাম কিছুটা কমলেও মানিকগঞ্জে তার প্রভাব নেই। গরুসহ এসব মাংস বিক্রি হচ্ছে পুরাতন বাজরদর অনুযায়ী। এতে করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। অপরদিকে ঢাকার দাম অনুযায়ী মাংস ক্রয়ের দাবি সাধারণ ক্রেতাদের।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন মাংস বাজার ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলে। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবদা গেইট এলাকায় গরু ও মহিষের মাংস ৬৮০ টাকা, খাঁসির মাংস ১১০০ এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৯০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
প্রতিটি মাংসের দোকানে এসব মাংসের দাম নির্ধারণ করে লিখে ঝুলিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। তবে ভোক্তাদের অনেকেই এই দামে মাংস ক্রয়ে নারাজ। অনেকেই আবার ঢাকার বাজারদর নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এক দেশ, এক রেট এর দাবি ভোক্তাদের।
তবে জেলা শহরের বিভিন্ন দোকানে ৬৮০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হলেও মফস্বলের দোকানগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে। এসব দোকানগুলোতে ভোক্তা সংরক্ষন অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনার দাবি ক্রেতাদের।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অবদা গেইট এলাকায় মাংস নিতে আসা রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, সকালে টিভির খবরে দেখলাম ৫৯০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন দোকানে। ঢাকার চেয়ে মানিকগঞ্জে দোকান ভাড়া ও শ্রমিকের মূল্য থেকে শুরু করে সব জিনিষের দাম কম। অথচ এখানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে একদাম ৬৮০ টাকা করে।
এসময়ে ফিরোজ মাহমুদ নামের এক তরুন ক্রেতা বলেন, মানিকগঞ্জের মাংস ব্যবসায়ীদের নিকট জিম্মি ক্রেতারা। এসব বিষয়ে প্রশাসনিক নজরদারি প্রয়োজন। তাহলেই ঢাকার বাজারদর অনুযায়ী মানিকগঞ্জেও মাংস ক্রয় করতে পারবে সাধারণ ক্রেতারা।
মানিকগঞ্জের অবদা গেইট এলাকার মাংস ব্যবসায়ী মো: সাগর আলী বলেন, ৬৮০ টাকা কেজি করে গরুর মাংস বিক্রিতে লোকসান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখানে ভেজাল বা অসুস্থ গরু বিক্রির কোন সুযোগ নেই। ঢাকার ব্যবসায়ীরা কিভাবে ৫৯০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করছে সে বিষয়ে তার ধারণা নেই বলে জানান তিনি।
ভান্ডারি গোস্তা বিতানের পরিচালক মো: কামরুল ইসলাম বলেন, গতকাল শুক্রবার দুইটি গরু এবং একটি মহিষ জবাই করে ৬৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেন তিনি। শ্রমিকের পারিশ্রমিকসহ সকল খরচ বাদে তার ২৬ হাজার টাকা লোকসান হয়। সেখানে ৬৫০ টাকা কেজিদরে মাংস বিক্রি করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। ঢাকা কিভাবে এই দামে মাংস বিক্রি হয় তার বিষয়ে তার বুঝে আসে না বলেও জানান তিনি।
মানিকগঞ্জে বিভিন্ন মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮টি, কাঁচাবাজারে চারটি ও দুধবাজারে চারটি মাংসের দোকান রয়েছে। প্রতিদিনই এসব দোকানগুলোতে ২/৩টি করে গরু ও খাঁসি জবাই হয়। তবে মহিষ ও ভেড়া খুব কম সময়েই জবাই হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিয়মিত এসব দোকান তদারকি করেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এছাড়াও উপজেলা শহরগুলোতে ২/৩টি করে মাংসের দোকান রয়েছে। মফস্বলের কিছু কিছু এলাকাতে মাংসের দোকান থাকলেও নিয়মিত ওই সব দোকান গুলোতে গরু জবাই হয় না। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোর চেয়ে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দ্বিগুন গরু জবাই ও বিকিকিনি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গরু-খাসি-মহিষ-ভেড়ার মাংস বিক্রির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, গরুর মাংস বিক্রির বিষয়ে মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ীদেরকে ৬৫০ টাকা করে বিক্রি করতে বলা হয়েছিলো। তবে ওই দামে প্রতিদিনই তাদের লোকসান গুনতে হয় বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
যে কারণে তারা এখন ৬৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফের আলোচনা করে গরুসহ অন্যান্য মাংসের একটি নির্দিষ্ট বাজারদর নির্ধারণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।