ঈদ কেনাকাটায় নারীদের আধিপত্য!
বর্তমান সময়ে ঈদ কেনাকাটায় শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায় নারীদের। এ নিয়ে সমাজে প্রচলিত আছে নানা মুখরোচক কথাও। তবে নারীরা কি শুধুই স্বইচ্ছায় বা ভাল লাগা থেকেই কেনাকাটায় বের হন নাকি এর পেছনে কাজ করে পারিবারিক দায়িত্ববোধও? কিই বা ভাবছেন তারা? এসব জানতে বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে বেড়িয়েছেন বার্তা২৪.কম এর প্রতিবেদক।
শুক্র ও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ কেনাকাটায় একক আধিপত্য নারীদের। কেউবা সন্তানদের নিয়ে আসছেন আবার কেউ একাই আসছেন কেনাকাটা করতে। আবার কেউবা স্বামীকে নিয়ে আসলেও তারা শপিংয়ের চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকছেন শপিং ব্যাগ ও বাচ্চাদের সামলানোতেই।
এই যেমন গত শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে দেখা মেলে এক দম্পতির। স্বামী অনেকটায় বিরক্ত হয়ে বলছেন, টাকা যা লাগবে বলে দিও কিন্তু আমি আসতে পারবো না। এমন বিরক্তির কারণ কি জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, সপ্তাহে একদিন অফিসের ছুটি পাই, তারপর সে দুপুর থেকে এখন সন্ধ্যা হতে চললো কিন্তু কেনাকাটা শেষ হচ্ছে না। আমার মনে হয় মেয়েদের শপিং মেয়েরা করায় ভাল। তাই আমি আর আসতেছি না কেনাকাটায়।
এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলেছে আমাদের আশেপাশে তবুও এমন কাটফাটা রৌদে, সংসারে কাজ শেষ করে, রোজা রেখে নারীরা আসছেন শপিংমলে নতুন দায়িত্ব নিয়ে। পুরুষদের এক রকম অনীহা ও পরিবারের দিকে তাকিয়ে, সন্তানদের কথা চিন্তা করে এমন তপ্ত রৌদ মাথায় নিয়েও দ্বিধায় ভুগছেন না তারা। বরং সমাজের নানা কটু ও বাকা কথা মাথায় নিয়েও বের হচ্ছেন কেনাকাটায়। নিজের কষ্টের কথা চিন্তা না করে হাসি ফুটাচ্ছেন পরিবারের সবার মুখে।
তেমনই একজন ঝর্ণা বেগম। দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে থাকেন মিরপুরে। স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সপ্তাহে ছুটি পান একদিন শুক্রবারে তাই তাকে বিরক্ত না করে সন্তানদের নিয়ে মিরপুর ১০ নাম্বারে আসছেন কেনাকাটা করতে। সন্তানদের সাথে সাথে তাকে স্বামীসহ শশুর-শাশুড়ী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও কিনতে হবে কাপড় চোপড়। তাই এই তপ্ত রোধেও করতে হচ্ছে কেনাকাটা।
আপনি একাই আসছেন, স্বামীকে নিয়ে আসেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, সে একদিন ছুটি পায়, সারা সপ্তাহ তো তাকে কাজই করতে হয়। তাই আর তাকে বিরক্ত করিনি। কিন্তু সে না আসলেও বছরে এক ঈদে তো কেনাকাটা করতেই হয়। সন্তানরা আছে, শশুর-শাশুড়ী আছে, বাবার বাড়ি, শশুড়ী বাড়ির আত্মীয়স্বজন আছে। সবার জন্যই তো কেনাকাটা করতে হয়। তাই একটু কষ্ট হলেও আসছি, কিছু কেনাকাটা করছি, আরও কিছু বাকি আছে। দেখি আজ যদি সব কেনাকাটা শেষ না করতে পারি তাহলে আরও একদিন আসতে হবে।
ধানমন্ডি থেকে নিউমার্কেটে ঈদ কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী সুরাইয়া জাহান বার্তা২৪.কম কে বলেন, যদিও এখন অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে তবুও আমরা পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা থেকে বের হতে পারছি না। মেয়েরা ঘর থেকে বের হউক সেটা এখনো অনেকে চায় না। সেই না চাওয়া থেকেই তাদের এমন টিপ্পনী। অথচ নারীদের ঘরও সামলাতে হয় আবার নিজের বাড়ি, শশুড় বাড়ি সব নারীদেরই সামলাতে হয়। তবে তিনি মনে করেন, সেখান থেকে এখন অনেকটায় বের হয়ে আসছে পুরুষরা। এখন অনেক পুরুষ নিজেদের সাথে তাদের স্ত্রীদেরও সমগুরুত্ব দিচ্ছে।
এ নিয়ে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করা ফরহাদ হোসেনের সাথে নিউমার্কেটে কথা হয় বার্তা২৪.কম প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, নারীরা আগে ঘরে বন্দী থাকলেও এখন কিন্তু পুরুষদের সাথে সাথে সব সেক্টরেই সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। সেটা ঘর হউক বা অফিস। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, নারীদের বাকা চোখে দেখার লোকও সমাজে এখনো আছে। তবে সেখান থেকে বের হতে কিছুটা সময় লাগবে। সবার মাঝে শিক্ষার প্রসারের মধ্য দিয়ে সমান তালে আগাবে নারী ও পুরুষ এমনই আশা প্রকাশ করেন ফরহাদ।