মাথায় রড পড়ে মৃত্যু: কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই চলছিলো পাইলিং

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাথায় রড পড়ে মৃত্যু: কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই চলছিলো পাইলিং

মাথায় রড পড়ে মৃত্যু: কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই চলছিলো পাইলিং

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ এলাকায় মাথায় রড পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে, সামনে এসেছে বাড়ি নির্মাণে চরম অবহেলার কারণে ওই পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। আবাসিক এলাকার ব্যস্ততম প্রধান সড়কের পাশে চলা নির্মাণ কাজে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না।

শনিবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময়ে মাথায় রড পড়ে মারা যান বায়ো ফার্মাার কর্তকর্তা মো. হাসান (৪৬)। তিনি একই এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণাধীন বাড়ির ২৮ মালিকের একজন পুলিশের পরিদর্শক। তার তত্ত্বাবাধায়নে নির্মাণ কাজ চলছিলো। তিন মাস ধরে নির্মাণ কাজ চলছিলো। পুলিশ পরিচয়ের প্রভাবে ব্যস্ত সড়কের পাশে কাজ চললেও কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়া হয় নি। এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

রোববার দুপুরে সাত মসজিদ হাউজিংয়ের প্রধান সড়কের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চলার পথে থেমে দাঁড়াচ্ছেন পথচারীরা। সবার মুখে রড পড়ে মৃত্যুর খবরটি নিয়ে আলোচনা। সাত মসজিদ হাউজিংয়ের ৬ নম্বর রোডে পূর্ব মাথায় প্রধান সড়কের পাশেই নির্মাণ কাজ চলছিলো। কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টণী নেই। ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত কোনো তথ্যও নেই। রাস্তায় রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত মেশন। দূর্ঘটনার পরের দিনও চলছিলো কাজ। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসায় কাজ বন্ধ করে চলে যান শ্রমিকরা। গা ঢাকা দিয়েছেন দায়িত্বরতরা।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্মাণাধীন ভবনটি রামচন্দ্রপুর খালের ওপর। খাল ভরাট বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাড়িটি নির্মাণ করছে ইরাদা বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ২৮ জন মালিক। তারাই এই জমির মালিক। ভবনের নির্মাণ কাজ দেখা শোনা করতেন পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান। তিনি কাফরুল থানার সাবেক ওসি। বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)তে কর্মরত।

তবে নির্মাণাধীন প্লাট ও ইরাদা বিল্ডার্সে নিজের শেয়ার থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর। তিনি বলেন, এখানে আমার কোনো জমির মালিকানা নেই। আমার কিছু আত্মীয় স্বজন এই জমির শেয়ার কিনেছেন তাদের বিষয়টি আমি দেখা শোনা করি।

একই এলাকায় নিহত হাসানের বাসায় গিয়ে জানা গেলো অসুস্থ মা মাসুমা খাতুন (৮২) ছাড়া কেউ নেই। কিছু সময় অপেক্ষার পর এলেন নিহতের মেজো ছেলে মাহিম। মাহিম জানালেন তারা তিন ভাই বোন। বড় ভাই ফাহিম মোহাম্মদপুরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপক্ষায়  আছেন। একই স্কুলের দশম শ্রেনিতে পড়েন মাহিম। বাবা ছাড়া তার দাদার পক্ষে আর কেউ ছিলো না। সর্বশেষ সেই বাবাও চলে গেলেন। এর বেশি আর কিছু বলতে চাইলেন না সদ্য বাবা হারা এই কিশোর।

বিষয়টি আরও পরিষ্কার করলেন নিহত হাসানের শ্যালক মো. সেলিম। তিনি বলেন, হাসান চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার জুইডন্ডী গ্রামের ফজল আহমেদের ছেলে। ১২ ভাই-বোনের মধ্যে ১১ জন আগেই বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন। ১২ ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র জীবিত ছিলেন হাসান। তার বাবা বহুদিন আগে মারা গেছেন। মা মাসুমা খাতুন প্যারালাইসড হয়ে ১০ বছর ধরে শয্যাশায়ী। অসুস্থ মাকে নিয়ে সাত মসজিদ হাউজিংয়ের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। আগে ভবনের পাঁচ তলায় থাকলেও মায়ের অসুস্থতার কারণে ভবনের তৃতীয় তলায় আসেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে গত এক বছর বসবাস করতেন।

সেলিম আরও বলেন, ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। গতকাল দুপুরে আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলো যে সবাইকে নিয়ে বাড়ি যাবে। তবে এভাবে বাড়ি যাবে এটা কখনো ভাবিনি।

এ দিকে মাথায় রড পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেছে নিহতের শ্যালক সেলিম। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, নিহতের শ্যালক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। অবহেলা জনিত মৃত্যু ধারায় মামলা হয়েছে। মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় একজন গ্রেফতার আছে।

নিহত হাসানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরিবার মরদেহ বুঝে নিয়েছে। বাসার পাশে যে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে নিহত হয়েছেন সেই মসজিদে তার প্রথম জানাজা শেষে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।