থানায় হামলা করে আসামী ছিনতাইয়ের চেষ্টা, ৯ জন গ্রেফতার
বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের হামলায় পুলিশের ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান নুরুসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নুরুজ্জামান ও নাজমুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫ রাউন্ড গুলিসহ দুটি বিদেশী পিস্তল, ফেন্সিডল, গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের ফেলে যাওয়া ৩৬টি মটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
রবিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলা চালানো হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাঝিড়া বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সেখান থেকেও পুলিশের উপর হামলা করা হয় বলে পুলিশ সুপার জানান। তিনি জানান আহত ৮ জনের মধ্যে দুইজন উপপরিদর্শক (এসআই) রয়েছেন।
পুলিশ যে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা হলেন- শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু, রহিমাবাদ বি-ব্লক এলাকার সাদ্দাম হোসেন রবিন, একই এলাকার রমজান আলী ও আমিনুল ইসলাম, খলিশাকান্দি গ্রামের সাইদুর রহমান খোকন ও বোরহান উদ্দিন, মাঝিড়া মধ্যপাড়ার সেরাজুল ইসলাম, কাটাবাড়িয়া মধ্যপাড়ার মিতুল এবং সাজাপুর নতুন পাড়ার ওহাবুজ্জামান নাইম। তারা সকলেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা কর্মী।
থানা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ দুটি বার্মিজ চাকুসহ আড়িয়া বাজার এলাকা থেকে আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এসময় সেখানেই মিঠুনকে ছাড়িয়ে নিতে নেতাকর্মীরা পুলিশের সাথে হাতাহাতি করে ব্যর্থ হয়। পুলিশ মিঠুনকে থানায় নেওয়ার পর হাজতে আটকে রাখে।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে থানায় প্রবেশ করে। তারা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে থানা হাজতে থেকে গ্রেপ্তার মিঠুনকে ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা চালায়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঘটনার সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) এবং অধিকাংশ পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্য সেসময় থানায় অবস্থান করছিলেন। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ওপরে হামলা চালানো হয়। এতে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা থানায় ফিরে তাদেরকে ধাওয়া দিলে
হামলাকারিরা ৬টি মটরসাইকেল ফেলে দ্রুত থানা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর তারা মহাসড়কের মাঝিড়া বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতাকর্মী সমবেত হয়ে পুনরায় থানার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ও র্যাব তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে আরো দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের ধাওয়ায় নেতাকর্মীরা ৩০ টি মটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে গেলে পুলিশ সেখান থেকে নূরুজ্জামানসহ ৯জনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে নূরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহযোগি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের বাড়ি থেকে একটি ম্যাগজিনে ভরা ৮ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল এবং ৩ বোতল ফেন্সিডিল ও এক কেজি গাঁজা এবং নূরুজ্জামানের বাড়ি থেকে একটি ম্যাগজিনে ভরা ৭ রাউন্ড গুলিসহ অরো একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, নাজমুল হাসান অভিযানের খবরে পলিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেফতার নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৮টি এবং মিঠুনের বিরুদ্ধে ৪টিসহ অন্যান্য প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে এবং থানায় হামলার অভিযোগে দায়ের করা ৩টি মামলার মধ্যে আদালতে অস্ত্র ও থানায় হামলার দু’টি মামলায় ৭দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হবে।