জাহাজ মেরামতের পর বিল পরিশোধ নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ
জাহাজ মেরামতের পর বিল পরিশোধ নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ করেছেন থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।
বুধবার (১৩ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-র সাগর-রুনি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
শহিদুল ইসলাম অভিযোগে জানান, একটি অসাধু চক্র তাদের মুন্সীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে একটি জাহাজ ঠিক করার পর তার বিল পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। বিলের জন্য বারবার তাগিদ দিলে এক পর্যায়ে বিল না দিয়ে কৌশলে ডক থেকে জাহাজটি সরিয়ে নেয়।
উপরোন্তু, ওই জাহাজ অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ডক থেকে খোয়া যাওয়ার অজুহাত তুলে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাদের প্রতারণা থেকে উদ্ধার পেতে ইতোমধ্যে তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছে অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের ২২ মে জনৈক মিলন হাজী, রফিক এবং আবুল হোসেন নামের তিন ব্যক্তি 'টি- টেকনাফ' নামে একটি পুরনো অয়েল ট্যাংকার মেরামতের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার নয়ানগরে অবস্থিত থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে নিয়ে আসেন।
মেরামতের পর ২৩ জুলাই থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে ৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার বিল দাখিল করে। তখন তারা বিল প্রদান করেনি এবং জাহাজও ডেলিভারি নেয়নি।
এরপর আরো ৫ মাস পর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি রফিক নামে এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই সময় পর্যন্ত পাওনা ১১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বিল তাকে দেওয়া হয়। তিনি সেই বিল গ্রহণও করেন।
রফিক নিজে উপস্থিত থেকে জাহাজটি আনডকিং করে পানিতে বার্থিং করে রাখেন। সেদিন তিনি জাহাজটি ডেলিভারি নিতে চান এবং দুই দিন পর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিলের অর্থ পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পানিতে বার্থিংরত জাহাজে তিনি (রফিক) তার নিজস্ব দুইজন স্টাফ সার্বক্ষণিক পাহারারত অবস্থায় রেখে চলে যান।
তারপর থেকে জাহাজের মালিক পক্ষ এখন পর্যন্ত থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের কোনো বিল তিনি পরিশোধ করেননি। পাওনা বিলের অর্থ পরিশোধের জন্য রফিককে বারংবার তাগিদ দিলেও সে টাকা পরিশোধ করেনি।
উপরোন্তু, এবছরের এপ্রিল মাসের শেষদিকে সন্ধ্যার পর পানিতে বার্থিংরত টি-টেকনাফ জাহাজটি নেওয়ার জন্য দুটি টাগবোট জাহাজটির পাশে ভিড়লে শিপইয়ার্ডের লোকদের নজরে আসে এবং তখন শিপইয়ার্ড থেকে জাহাজটি নিতে বাধা দিলে টাগবোট দুটি চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম আরো জানান, জাহাজটি শিপইয়ার্ডের দক্ষিণ পাশের শেষপ্রান্তে মেঘনা নদীতে জাহাজ মালিক পক্ষের ২-৩ জন স্টাফের তত্ত্বাবধানে বার্থিং অবস্থায় ছিল।
এরপর ১৬ মে বার্থিং চার্জসহ সর্বমোট প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিল ফের রফিককে দেওয়া হয় এবং তিনি তা গ্রহণও করেন। এরপরও তারা কোনো বিল প্রদান না করে টালবাহানা শুরু করেন। এভাবে পানিতে বার্থিং থাকা অবস্থায় গত ১৯ মে সকাল থেকে টি-টেকনাফ অয়েল ট্যাংকার জাহাজ মালিকের ২-৩ জন স্টাফসহ উক্ত স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি শিপইয়ার্ডে যারা জাহাজ মেরামতের জন্য আনেন তাদের জানালে তারা জাহাজ এবং স্টাফদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
এই পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক তথ্য সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরে অসাধু চক্রটিকে আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, জাহাজটি বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) ২৯ মে স্থানীয় গজারিয়া থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।