চট্টগ্রামে বিক্ষোভ: ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে আহত ৩ পুলিশ, আটক ২০

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: চট্টগ্রামে বিক্ষোভ/ আনিসুজ্জামান দুলাল/ বার্তা২৪.কম

ছবি: চট্টগ্রামে বিক্ষোভ/ আনিসুজ্জামান দুলাল/ বার্তা২৪.কম

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে গিয়ে দেশব্যাপী গুম, খুন ও হত্যার প্রতিবাদের চট্টগ্রাম নগরী চেরাগিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে দেড় ঘন্টারও বেশি সময় অবস্থান নেন। পুলিশ দুই দফা কাঁদানে গ্যাস ও টিয়ারশেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ সমাবেশের আগে-পরে অন্তত ২০ জনকে আটক করে পুলিশ।

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চেরাগি মোড়-আন্দরকিল্লা এলাকায় এসব ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে দুপুর ১২টার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নগরীর জামালখান, গণি বেকারি মোড়, চেরাগী মোড় ও আন্দলকিল্লাহ সহ আশেপাশের এলাকায় পুলিশ ও বিজিবি অবস্থান নেয় এবং সেনাবাহিনী টহল দেয়। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন মোড়ে নতুন করে তল্লাশি চৌকি বসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 ছবি: চট্টগ্রামে বিক্ষোভকারীদের আটক করে পুলিশ / আনিসুজ্জামান দুলাল/ বার্তা২৪.কম

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল তিনটার দিকে সমাবেশের স্থান বদলে চেরাগী মোড় প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী জড়ো হন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নারী। শুরুতে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

বিজ্ঞাপন

একই সময় ওই এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমনের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মীরাও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অবস্থান নেয়। তখন তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে চলে যায়। এসময় তারা বেশ কয়েকজনকে ধরে পুলিশ হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাদের প্রিজন ভ্যানে ঢুকিয়ে নেয়।

পরে শিক্ষার্থীরা ওই প্রিজন ভ্যানকে ঘিরে রেখে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে গেলে তাতের সঙ্গে পুলিশের কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ওই প্রিজন ভ্যানটি শিক্ষার্থীদের ব্যারিয়ার ভেঙে চেরাগি মোড়ের দিকে চলে যায়। তখন পুলিশের সামনেই আন্দোলনকারীদের ওপর আরেক দফা চড়াও হন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

এরপর বিকেল চারটার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা কদম মোবারক মসজিদের সামনের সড়কে বসে পড়েন এবং তারা সেখানে 'আমরা ভাই মরলো কেন, জবাব চাই জবাব চাই, খুনি কেন বাহিরে, জবাব চাই' এধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। আধা ঘন্টার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের অবস্থান লক্ষ্য করে পরপর দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর পুলিশ লাঠিপেটা করে সবাইকে সরিয়ে দেয়।

বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন অলি-গলিতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। বাকিরা নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে গিয়ে অবস্থান নিলে সেখানে পুলিশ গেলে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে। কিছুক্ষণ পর অবশ্য বিক্ষোভকারীরা আন্দরকিল্লা থেকে চলে যান। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া নামে চট্টগ্রাম কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। তবুও তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের কয়েকজন ভাইকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।

ঘটনাস্থলে থাকা নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) আশরাফুল আলম জানান, সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে আমরা তাদের সরিয়ে দিই। এসময় তারা আমাদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে। আমাদের কোতোয়ালী থানার এসআই মোশাররফসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা যাচাইবাছাই করে দেখছি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তারা বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তবে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। ঘটনার সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে কোনো অ্যাকশনে দেখা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সোমবার বিকেলে তিনটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। তবে এদিন বিকেল তিনটার কিছুক্ষণ আগে কিন্তু সেখানে আগে থেকেই পুলিশ, বিজিবি অবস্থান নেয়ায় ওই সমন্বয়ক এক ফেসবুক পোস্টে বিক্ষোভের স্থান বদলে চেরাগি মোড়ে অবস্থান নিতে আন্দোলনকারীদের আহবান করেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত টানা চারদিন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯ জুলাই রাতে সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।