নওগাঁয় কলাপাতা কাটায় একই পরিবারের ৪ সদস্যকে বেধড়ক মারধর

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁয় কলাপাতা কাটায় একই পরিবারের ৪ সদস্যকে বেধড়ক মারধর

নওগাঁয় কলাপাতা কাটায় একই পরিবারের ৪ সদস্যকে বেধড়ক মারধর

নওগাঁ সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামে কলাপাতা কাটাকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের ৩ নারী ও এক শিশুকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী কয়েকজন ছেলের বিরুদ্ধে। 

গত রোববার (২৮ জুলাই) হরিপুর গ্রামে বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম এর স্ত্রী মোরশেদা (৪০), স্মৃতি আক্তার (২০), রুপালী (৩০), আলী হাসান (১০)। 

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হরিপুর রাস্তার পাশে ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য একটি কলাগাছ থেকে কয়েকটি পাতা কাটতে যায় মোর্শেদার ছেলের বোউ স্মৃতি আক্তার, প্রতিবেশী সিদ্দিকের স্ত্রী মেমী আক্তার গালাগালি শুরু করলে দুজনেই মধ্য কথা কাটাকাটি হয়।

কলাপাতা কাটায় একই পরিবারের ৪ সদস্যকে বেধড়ক মারধর

এমন সময় তার স্বামী মৃত ওমর শাহ এর ছেলে সিদ্দিক ঘটনাস্থলে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলে আবারো নিষেধ করেন গৃহবধু স্মৃতি আক্তার। কিন্তু উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে সিদ্দিকের আরো ৩ ভাই কামাল (৪৫), মোয়াজ্জিম (৬২), ইসলাম (৬০) গৃহবধূকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এ সময় এগিয়ে আসে মোর্শেদা ও তার মেয়ে রুপালী। কিন্তু তাদেরকেও মারধর করে শ্লীলতাহানি ঘটায় সিদ্দিক। 

বিজ্ঞাপন

এতে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে যায় ও মারাত্মক জখম হয়। এরপর আব্দুল, দুলাল, শিমুলসহ আরও অনেকে এসে সিদ্দিকের সাথে যোগ দিয়ে আবারো ইচ্ছামত ঘণ্টাব্যাপী মারধর করে মোর্শেদা, রুপালী, স্মৃতি ও শিশু আলী হাসানকে।

পরে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায় তাদের। এরপর টানা তিন দিন নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৪ জন। 

গৃহবধূ স্মৃতি আক্তার বলেন, আমরা কয়েকটা ছাগল পালন করি। এজন্য সেদিন বিকেলে কলাপাতা কাটতে হরিপুর রাস্তার ধারে যাই এবং ৩-৪ টা পাতা কাটি। এ সময় সিদ্দিকের বোউ এসে নিষেধ করে ও গালাগালি শুরু করে। আমি তাকে বলেছি, দয়া করে গালি দিয়েন না। দরকার হলে কাটা পাতাগুলো নিয়ে যান। এরপর তার স্বামী সিদ্দিক সেখানে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলে তাকেও নিষেধ করি। কিন্তু ক্ষিপ্ত হয়ে এসে আমার গায়ে হাত দিলে আমি চিৎকার করি। সে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারধর করে। আমার চিৎকার শুনে আমার শ্বাশুড়ি, ননদ ও তার ছেলে আসে। এরপর সিদ্দিক এর ৩-৪ জন ভাই ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এসে আমাদের সবাইকে বেধড়ক মারধর করে ও শ্লীলতাহানি করে। আমি এটার সঠিক বিচার চাই। 

মোর্শেদা বলেন, আমার ছেলের বোউকে একা পেয়ে কাপড় ধরে টান মেরে ছিঁড়ে ফেলে রাস্তায় মারধর করে। তখন আমি চিৎকার শুনে সেখানে যাই। আমার মেয়ে ও নাতো (নাতি) সাথে যায়। তখন তাদের আরো ভাইয়েরাসহ বেশ কয়েকজন এসে আমাদের সবাইকে মারধর করে এবং আমাদের শ্লীলতাহানি ঘটায়। আমার মুখে, চোখে ও গোপনাঙ্গে আঘাত করে। আমার নাতীর মাথায় আঘাত করে। সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। এসময় গ্রামবাসী এসে আমাদের উদ্ধার করে। আমাদের সাথে এর আগেও অনেক খারাপ আচরণ করেছে সিদ্দিক। চোখে ইচ্ছামত আঘাত করার কারণে এখনো ভালোভাবে দেখতে পারছি না। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের সাথে এটা অন্যায় হয়েছে। তাই এটার সঠিক বিচার চাই।  

রুপালী বলেন, আমাদের সবাইকে যখন বেধড়ক মারধর করে ও শ্লীলতাহানি ঘটায় তারা, তখন আমার ছোট্ট ছেলে সেখানে যায়। তখন তারা আমার ছোট্ট ছেলেটাকেও ছাড়েনি। তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে, তখন আমার মনে হয়েছে সেখানেই আমি মারা গেছি। আমার চোখে, পিঠে গলায় ইচ্ছামত মেরেছে তারা। আমরা অসহায় পরিবার, সামান্য কলাপাতা কাটার জন্য এমনভাবে কেন মারলো, সেটার বিচার দাবি করছি।

প্রতিবেশী মোছা: সফি বেগম ( ৫২) বলেন, গৃহবধূ স্মৃতি যখন কলার পাতা কাটে, তখন সিদ্দিক ও তার বোউ এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে। তখন আমি সিদ্দিকে বলি, ও ছোট মানুষ, কলার পাতা কাটা অপরাধই হলো। তবুও তোমরা এভাবে গালাগালি করিও না। আর তারা কোনোদিন কলার পাতা কাটতে আসবে না। আর যেগুলো পাতা কেটেছে সেগুলো তোমরা নিয়ে চলে যাও। এরপর আমি সিদ্দিকের বোউ এর পা ধরেছি, যদিও আমি বয়স্ক মানুষ। তবুও তারা মানেনি। ইচ্ছামত গৃহবধূ স্মৃতির চুল ধরে টানাটানি শুরু করেছে। এরপর তার শ্বাশুড়ি তার ননদ ও ছোট্ট ছেলেকে অনেক মেরেছে। 

বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫, ৬ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সালমা বলেন, আমার বাড়ি তাদের বাড়ির পাশেই, যখন মারামারি শুরু হয়েছে, তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না। যখন শেষ হয়, তখন চিৎকার শুনে সেখানে গেলে দেখতে পাই ভ্যানে হাসপাতালে যাচ্ছে তারা। কাপড় ছেঁড়া, মারধরের দাগ গায়ে পড়েছে শুনেছি ছেলেরা ধরে মেরেছে মোর্শেদা ও তার পরিবারকে। ছেলে হিসেবে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া অন্যায় হয়েছে। 

এ বিষয়ে সিদ্দিক বলেন, আমি দোকানে সেদিন বসে ছিলাম। এমন সময় একটা ভ্যানওয়ালা আমাকে খবর দেয়, আমার স্ত্রীর সাথে তাদের গন্ডগল চলছে। তখনি আমি সেখানে গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী কান্না করে আসতেছে। তখন আমাকে দেখে তারা ধুলাবালি নিয়ে ছিটানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। আমরা যেন না দেখতে পাই। তারা মেয়ে মানুষ হয়েও আমাদের মেরেছে। 

সিদ্দিের স্ত্রী মেমী আক্তার বলেন, আমি কলার পাতা কাটতে নিষেধ করেছি, এজন্য আমাকে মেরেছে। পরে আমার স্বামী আমাকে উদ্ধার করতে গেছে তাকেও মেরেছে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।