৬ দফা দাবিতে বৈষম্যহীন কারা মুক্তি আন্দোলনের বিক্ষোভ
ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারা দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় আটককৃত দল-মত, দলীয়-নির্দলীয় নির্বিশেষে সব মাজলুম কারাবন্দীদেরকে আদালত কর্তৃক বৈষম্যহীনভাবে জামিন প্রদান ও সব মিথ্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যহীন কারা মুক্তি আন্দোলন।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জুমার নামাজের পরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে আয়োজিত এক সমাবেশে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মুফতি শফিকুল ইসলাম এ দাবি জানিয়েছেন।
এসময় তারা সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি পল্টন মোড়, প্রেস ক্লাব, কদম পোয়ারা, এবং মৎস্যভবন মোড় হয়ে ড. ইউনুসের বাসভবন যমুনা হয়ে আবারও বায়তুল মোকাররমের সামনে এসে শেষ হয়।
বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মুফতি শফিকুল ইসলাম বলেন, সব বন্দী করা আলেমদেরকে মুক্তি দিতে হবে। যাদেরকে এই হাসিনা সরকার আয়নাঘরে বন্দী করে রেখেছে। তাদেরকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। যদি তাদেরকে মুক্তি না দেওয়া হয় তাহলে আমরা মনে করবো এখনো দেশে জুলুমের শাসন মুক্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। আগামী সোমবার আইন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করব। যতদিন পর্যন্ত আমরা কারাবন্দীদেরকে মুক্ত করতে না পারবো, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসাইন বলেন, আজকের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। যে জালিম সরকার গত ১৫ বছর ধরে এদেশ পরিচালনা করেছে, তারা মূলত ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।
যেসব আলেম এখনো কারাগারে রয়েছে তাদেরকে তিনদিনের ভেতরে মুক্ত করতে হবে।
বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের উপদেষ্টা মুফতি আজহারুল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এখনো আলেমদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এখন আলেমদের মুক্তির ক্ষেত্রে এখনো বৈষম্য হচ্ছে। অনতিবিলম্বে কারাবন্দী আলেমদেরকে মুক্তি দিতে হবে। হাসিনা এবং দোসরদেরকে এদেশের জনগণ আর দেখতে চায়না।
এসময় সমাবেশে তারা ছয়টি দাবি তুলে ধরে বলেন, সরকারের কাছে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন এর ৬ দফা দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই সরকার অনতিবিলম্বে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিবেন। আমরা সরকারকে চাপে ফেলতে কোনো অন্যায় দাবি করছি না। আমরা আশাবাদী লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ের আকুতিগুলো সরকার মেনে নিবেন।
তারা আরও বলেন, সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাহেব একজন সৎ, মানবিক ও জ্ঞানী মানুষ। আমার বিশ্বাস উনি আন্তরিকভাবে আমাদের দাবি গুলো মেনে নেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। আমাদের দাবিগুলো হলো-
আওয়ামী দুঃশাসনে আটককৃত সব নিরপরাধ মাজলুম কারাবন্দীদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।
আদালত কর্তৃক জামিন ও বিচারের ক্ষেত্রে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বন্দীদের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন আচরণ করতে হবে।
আওয়ামী সরকার কর্তৃক সকল মিথ্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে, বিশেষ করে ধার্মিক মুসলিমদের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
কারাগারে বন্দী দশায় সকল বন্দীদের জন্য বৈষম্যহীন মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বন্দিদশায় প্রত্যেক বন্দিকে মাসে অন্তত একবার হলেও তার জীবনসঙ্গিনীর সাথে কমপক্ষে ৩ঘন্টা সময় নিরাপত্তার সাথে একাকিত্ব যাপনের সুযোগ করে দিতে হবে।
২০১৩ সালের হেফাজত ও ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কোনো ধরনের অপরাধীকে রাষ্ট্র কর্তৃক গুম অথবা ক্রসফায়ার দেয়া যাবেনা। বিগত দিনে যারা গুম ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে। ইতিপূর্বে যাদের গুম করা হয়েছিল তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সকল গুমখানা বা আয়নাঘর গুলো খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে ধ্বংস করতে হবে।