আন্দোলনে চোখ হারিয়েছেন ৩৮৩ জন
কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে চোখে আঘাত ও গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ৪৯৫ জন। এদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন আবার অনেকে এখনো ৪০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানী শ্যামলীতে অবস্থিত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিউটে।
রোববার (১৮ আগস্ট) সকলে সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে এই তথ্য।
আন্দোলনে অংশ নেয়া এবং পথচারী সাধারণ মানুষ সহ গত ১৭ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত সর্বমোট ৭০৬ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিউটের পরিচালক ডা. গোলাম মোস্তফা।
আহতদের মধ্যে ৫৭৯ জন রোগীকে ভর্তি করানো হয় এবং ৪৮৭ জন রোগীর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিউট।
পরিচালক ডা. গোলাম মোস্তফা বার্তা ২৪ কে জানান, আহতদের মধ্যে দুচোখ পুরোপুরি নস্ট হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা অন্তত ১৭ জন। আর এক চোখ নস্ট হয়েছে ৩৬৬ জন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের। আহতদের বেশির ভাগ তরুন শিক্ষার্থী ও নানা পেশার মানুষ।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চাপে হিমশিম খেতে দেখা গেছে চিকিৎসকদের। তবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির কথাও জানান বার্তা ২৪ এই প্রতিবেদকের কাছে। তাদের অভিযোগ সরকার পতনের আগ মূহুর্ত পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলো অনেকে। তবে সরকার পতনের পর অনেকে চিকিৎসা পেলেও ততো দিনে কারো কারো চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে।
খুলনার সাব্বির, কুষ্টিয়ার জয়, মিরপুরের শরীফ, নরসিংদির রাফি সহ এমন অসংখ্য তরুনের এখন ঠাই হয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি এখন তাড়া করছে তাদের।
মিরপুরের বাসিন্দা দিনমজুর শরীফ ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে গিয়েছিলেন মিছিলে। কোনকিছু আন্দাজ করে ওঠার আগেই কয়েকটি গুলি এসে লাগে তার মাথা ও চোখে। চিকিৎসক বলছে বুলেটের আঘাতে তার ডান চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপারেশনের পরেও ডান চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো আর দেখতে পারবেন না শরীফ। বার্তা ২৪ কে শরীফ অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলনে অংশ না নিলেও বিজয় মিছিলে গিয়ে হঠাৎ কয়েক রাউন্ড গুলি এসে লাগে তার চোখে। তারপর মাটিতে লুটিয়ে পরলেও প্রথমে কেউ এগিয়ে আসেনি পুলিশের গুলির ভয়ে। শরীফ বলেন ৫ তারিখ মিরপুর মডেল থানার সামনে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ সদস্যরা। তার দাবি শুধু সে নিজেই নয় আরও অনেকেই অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পরেছিলো তার সাথে।
শরীফের মতোই আরেক টকবগে যুবক নরসিংদির রাফি। গত ১৫ই জুলাই চোখে আঘাত লাগলেও অসুস্থ শরীরে আবারও ৪ তারিখ যোগ দেন আন্দোলনে। ততোদিনে চোখের অবস্থা আরও গুরতর হয় রাফির। ক্ষতিগ্রস্ত চোখ নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু হাসপাতালে গেলেও তার চিকিৎসা না করতে অপারগতা প্রকাশ করে হাসপাতাল গুলো। তবে ৫ তারিখ হাসিনার পতনের পর চিকিৎসা পেলেও ততোদিনে চোখের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানায় চিকিৎসক। অশ্রুভেজা কন্ঠে এখন হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে একটাই চাওয়া দোষীরা যেনো রেহাই না পায়।
এদিকে সকালে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলায় অনেকের জীবন এখন বিপন্ন। তাই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তারা। এসময় তারা হাসিনার নিয়োগকারী হাসপাতাল পরিচালকেরও অপসারণের দাবি তোলেন।
রোগী আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করলে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিউটের পরিচালক ডা.গোলাম মোস্তফা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনে আহত প্রত্যেক আহতদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও চিকিৎসা প্রদানে কোন রকম টাকা বা ঔষধ কেনারও প্রয়োজন নেই রোগীদের। এছাড়াও তার দাবি আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোন রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফেরত পাঠানো হয়নি।