রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগেই গত কয়েকদিন মৃদু তাপপ্রবাহের পর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কমেছে তাপমাত্রা। এ অবস্থায় দেশের ১৩টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে৷ তাই সেসব এলাকার নদীবন্দরে তোলা হয়েছে সতর্ক সংকেত।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাংগাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারদেশে রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
শনিবার সকাল থেকে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
উজানের ঢল ও টানা দুদিনে বৃষ্টিতে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে তিস্তার পানি। পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এদিকে পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। হঠাৎ দুদিনের বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষের স্বাভাবিক কর্মজীবনে বিপর্যয ঘটছে। ভারী বর্ষণের কারণে বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃষ্টি পাচ্ছে, অপরদিকে পানি বৃষ্টি পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।
ডিমলা পূর্বছানতাই এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রহমান বলেন, হঠাৎ করে গত দুইদিনের পানিতে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। আশপাশের খালবিল নদীতে পানি বৃষ্টি পাচ্ছে। পানি বাড়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বৃষ্টি পাচ্ছে এ কারণে ব্যারাজের ৪৪ টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে এসময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩২১ জন।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৫, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৮৮, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৮, খুলনা বিভাগে ১৫ জন রয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২৮ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর সিলেট ও রংপুর বিভাগে কোনো শনাক্ত রোগী নেই।
এদিকে গত এক দিনে সারা দেশে ১১১৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬২০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২৭ হাজার ৭০৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৪৩ জনের। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।
বাজারে আগাম সবজি কিনতে আসা মাহবুবুর রহমান বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি দেখেই রুচি হলো, দাম মূখ্য নয়। আয়ের সঙ্গে ব্যয় হবে, খেতে হবে। এজন্যই ২০০ টাকা কেজিদরে শিম, সঙ্গে ফুলকপি নেয়া হলো। বাঙালির খাদ্য তালিকায় কিছু কিছু সবজি আছে মাছের সঙ্গে রান্না হলে বেশ মজাদার। সেই স্বাদ নিজে এবং পরিবারের মুখে তুলে দিতেই দাম ভাবলাম না।
অপরদিকে আগাম সবজির দাম শুনে হাত সরিয়ে নেয়া ক্রেতা মোতালেব বলেন, রুই মাছ, ফুলকপি আর শিম দিয়া আনদিলে খুব স্বাদ নাগে। চোখোত পড়িল দাম শুনিয়্যা হাউতাম খানু। শিম যদি ২০০ টাকা, ফুলকপি১২০ টাকা হয়, মাছ কিনিম কি দিয়া আর বাকি খরচ করিম কি? এইজনতে এ্যালা নেওয়া খাবার নয়। আরও দিন গেইলে দামো কমবে,বাজারোত ভর্তি হইবে নতুন তকাই।
আগাম সবজির দাম চড়া নিয়ে ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, শীত মৌসুমের আগুর সবজি বাজারে আসছে এজন্যই দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। এই সবজির চাহিদা সব শ্রেণির ক্রেতাদের নয়৷ এক শ্রেণির ক্রেতারা এই সবজি চড়া দামেও বেশি কিনে থাকে। এখনো বাজারে পর্যাপ্ত যোগান নেই, চাহিদাও কম সবমিলিয়ে দামটা বেশি৷ শীতের সাথে সাথে সবজির উৎপাদন বাড়বে, চাহিদা ,যোগান সবমিলিয়ে দাম কমবে।
পাহাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপচে পড়ছে। গত একমাসে লাগাতার বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে টইটুম্বুর রাঙামাটি জেলার কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে এখন পূর্ণ যৌবন বিরাজ করছে। হ্রদের চারদিকে সবুজায়নে বেষ্টিত পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে দুচোখ জুড়িয়ে যায়। জেলার অন্যতম আইকন হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে আছে গত প্রায় দেড় মাস। এই সেতু ঘিরে গড়ে উঠা শতাধিক ভাসমান দোকানিরা এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন। পর্যটক না থাকায় এসব তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদের তীরে বেঁধে রাখা হয়েছে কয়েকশো দেশিয় ইঞ্জিন বোট।
সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ আঞ্চলিক দলগুলোর নানা অপতৎপরতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা রাঙামাটির পর্যটন খাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বন্যা, সর্বশেষ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে পাহাড়ের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে নিজেদের পুঁজি ভেঙ্গে জীবন রক্ষা করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে এসব অঞ্চলের পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়িরা। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবসেও রাঙামাটিতে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি।
পাহাড়ে অস্থিতিশীলতার কারণে পার্বত্য চট্রগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। বিভিন্ন সময়ে হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় উত্তপ্ত এসব অঞ্চলে পর্যটক আসা কমেছে জ্যামিতিক হারে।
সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে মামুন (৩০) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ে। পরবর্তীতে এ সংঘাতে পার্বত্য জেলা সমূহের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। এতে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পর্যটন জেলা রাঙামাটিও। এছাড়াও গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। সব মিলিয়ে দেশের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।
রাঙামাটি পর্যটনের ট্যুরিস্ট বোট চালক মো. আলমগীর বার্তা২৪.কমকে বলেন, এক মাস ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে ঝুলন্ত সেতু। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবং পাহাড়ে সংঘর্ষের কারণে কোনো পর্যটক নেই। ফলে আমরা খুবই কষ্টে আছি। প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ব্রিজটি ডুবে যায়। পর্যটন কর্তৃপক্ষ যদি ব্রিজটি সংস্কার করে, তাহলে সেটি আর পানিতে তলিয়ে যাবে না।
টেক্সটাইল দোকানিরা জানান, ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ায় অনেক পর্যটক এসে ফিরে গেছে। তাদের কোনো পণ্যের বেচা-বিক্রি নেই। প্রতি বছরই সেতুটি ডুবে যায়। ফলে ব্যবসায় লোকসান হয়। যদি সেতু থেকে পানি নেমে যায় তাহলে পর্যটকরা আসতে শুরু করবে, বেচা-কেনা শুরু হবে।
এদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ঘোষণায় মেঘের বাড়ি খ্যাত সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে তিনদিন পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সময় পার হয়ে গেলেও সেখানে পর্যটকের সমাগম আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সাজেকে ১২৭টি রিসোর্ট এবং ১১৬টি রেস্টেুরেন্ট রয়েছে। ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেক কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, গত দুই-তিন মাসে রাঙামাটিতে তেমন কোনো পর্যটকের আগমন ঘটেনি। আবাসিক হোটেলগুলোতেও বুকিং নেই। কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
রাঙামাটি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, গত ২৩ আগস্ট থেকে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু পানিতে নিমজ্জিত। এখনো সেতুর পাটাতন পানিতে ডুবে আছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে সেতুর পাটাতনের পানি শুকিয়ে যাবে। আবারও পর্যটকরা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
এদিকে ‘পর্যটন শান্তির সোপান এই প্রতিপাদ্যে’ বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করেছে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৭শে সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল। পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য এলাকাকে আধুনিক পর্যটন নগরীতে পরিণত করতে পারলে পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে। তাই সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পাহাড়ের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়।