গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে চরবাসী

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে চরবাসী

গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে চরবাসী

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে চরের বাসিন্দারা চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই উঁচু জায়গা না পেয়ে পানির মধ্যে গবাদি পশু বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ করে ভূমিহীন কৃষিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য এ দুর্ভোগ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

বাঘা উপজেলার পদ্মা নদীর বুকে ১৫টি চর রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ বাসিন্দাই ভূমিহীন। এই জনগোষ্ঠী বছরের বিভিন্ন সময় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনযাপন করছে। তারা শুকনো মৌসুমে কৃষিকাজ এবং বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে তারা সব সময়ই ঝুঁকিতে থাকে। চরের নিচু এলাকা এবং ফসলি জমি প্লাবন থেকে রক্ষার জন্য কোনো বাঁধ না থাকায় কৃষি উৎপাদন সম্পূর্ণ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞাপন

চরবাসী জানিয়েছে, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চরের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, এমনকি বাড়িঘরও ডুবে গেছে। এ অবস্থায় অনেকেই তাদের গবাদি পশু ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে চেষ্টা করছেন। তবে উঁচু স্থানের অভাবে অনেকে গরু-ছাগল পানির মধ্যেই বেঁধে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। চরখিদিরপুর থেকে প্রায় ৫০০টি গরু নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মেহেরচন্ডীর ফ্লাইওভারের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।

তারা বলছেন, পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি পদ্মার ভাঙনও চরম আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে পদ্মার ভাঙনে বাঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি চরের প্রায় সহস্রাধিক বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাট-বাজার, বিজিবি ক্যাম্প ও হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরের মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলেপাড়া গ্রামে তীব্র ভাঙনের কারণে মানুষ আতঙ্কে আছেন।

আলমগীর হোসেন নামের একজন বাসিন্দা বলেন, চরে বেশ কয়েকদিন ধরে পানি উঠছে। ফসল সব ডুবে গেছে। আমাদের আটজনের মালিকের ৫০০ গরু নিয়ে এখানে অবস্থান করছি। এছাড়া আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

পানির বৃদ্ধি এবং ভাঙনের ফলে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর বয়ারমারি গ্রামের আসগর আলী। তিনি বলেন, প্রতিবছরই আমাদের গ্রাম পদ্মায় ভাঙে। এরই মধ্যে ১৫ বিঘা কৃষিজমি হারিয়েছি। বাড়ি সরিয়েছি ছয়বার। এবারও নদীর ভাঙন বাড়ির কাছে চলে আসায় আমরা এ পারের মাছমারা গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, পদ্মা নদীর পানি গত এক সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার ঘাটে নৌকা ভিড়তে দেখা যাচ্ছে। সেখানে চরের বাসিন্দারা নৌকায় গরু-ছাগল, ধান, আসবাবপত্রসহ নিজস্ব সম্পত্তি নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। চরের বিভিন্ন গ্রামে প্লাবনের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দফতরের তথ্যমতে, রাজশাহীর ৯ হাজার ৬৮১ বিঘা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ হাজার ৮৫৭ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পদ্মার পানি বেড়েছে, তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন পানি কমতে পারে।