ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরে আজকে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের মধ্যে কতজন সত্যিকার অর্থে ছাত্র এমন প্রশ্ন রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ঢাকাস্থ মীরসরাই জাতীয়তাবাদী ফোরাম কর্তৃক 'গণঅভ্যূত্থান, গণপ্রত্যাশা এবং রাষ্ট্র সংস্কার' বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্রপ্রতিনিধিত্বের কথা যারা বলছে তাদের মধ্যে কতজন সত্যিকার ছাত্র প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরে আজকে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন, সরকারে ৩ জন আছেন, এছাড়া বিভিন্ন কমিটিতে সমন্বয়ক রয়েছেন, নাগরিক কমিটি রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী কমিটি রয়েছে। এই যে যারা সমন্বয়ক, নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী কমিটির রয়েছে, এবং যারা সরকারের ভিতরে যারা ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের সরাসরি প্রশ্ন করতে চাই, এই চারটি গ্রুপ যে রয়েছে তাদের মধ্যে কয় জন সত্যিকারের ছাত্র রয়েছে? তারা কি আসলেই আজকে ছাত্র? ছাত্রত্ব শেষ করেছে? ছাত্রত্ব পরবর্তী তারা চাকরি প্রত্যাশী ছিলো না? তাহলে আজকে যে আমরা ছাত্র-জনতা বলছি, এটা কেউ যদি প্রশ্ন করে, তাহলে এটা কত দোষে দোষিত সেই প্রশ্নই ত আসছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, রাজপথে যারা ছিল, যারা নিজেদের সাধারণ ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েছিল তাদের মধ্যে কি কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না? অবশ্যই ছিল। যারা সত্যিকারের ছাত্র রাজপথে ছিল তারা কি কেউ বিএনপির সদস্য ছিল না? এটা বুঝতে হবে। সত্যটা হল, তারা সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি বলে নিজেদের পরিচয় দেয়নি, তারা পরিচয় দিয়েছিল সাধারণ ছাত্র। এই সত্যগুলো বুঝতে না পারলে আমরা যে সংকটে আছি, সে সংকট থেকে কিন্তু বের হতে পারব না।
আব্দুল মঈন খান অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোন পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না। যে মুহুর্তে তারা পক্ষপাতিত্বে চলে যাবেন তখনই তাদের কার্যপদ্ধতি ব্যর্থ হয়ে যাবে। বলেন ড.
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, ছাত্ররা নাকি এই সরকারকে এপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, আমরা জানি না সারা দেশের মানুষ কী তাদের দায়িত্ব দেয়নি? ১৮ কোটি মানুষ কি দায়িত্ব দেয়নি? তারা কি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে? সেই আন্দোলনে ত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ গিয়েছিল। আমরা আবু সাইদ কে দেখেছি, তোমরা গুলি কর কিন্তু আমি আন্দোলন থেকে সরব না। যে ছেলেটি আন্দোলনকারীদের পানি খাইয়েছে তার কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না।
কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিন্তু এই সরকার আসেনি উল্লেখ করে বিএনপির এই জ্যৈষ্ঠ নেতা বলেন, এই সরকার কিন্তু একটি বিশাল দায়িত্ব নিয়ে এসেছে, সেই দায়িত্বটি কি? স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে বাংলাদেশকে রূপান্তর করতে হবে। এটা কিন্তু ছোটখাটো জিনিস নয়, আমি আনন্দিত তারা চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছেন। শুধু গ্রহণ করলে হবে না দায়িত্বটি তাদের সঠিকভাবে পালন করতে হবে। এটা শুধু তাদের জন্য না, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ জন্য।
তিনি আরও বলেন, জনগণের প্রতি যদি আমাদের আস্থা থাকে, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে বর্তমান সমস্যা সমাধানের একটি মাত্র উপায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। যত দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো ততই মঙ্গল। সংস্কারের কথা বলেন, ২০টি না কয়টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের সংস্কার করা না পর্যন্ত কোন সংস্কার কোন কাজে আসবে না।
নিজেদের সংস্কার আগে করতে হবে উল্লেখ করে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ভুল আমরা করেছি বিভিন্ন সময়, আমরাই এই দেশকে লুণ্ঠন করেছি বিভিন্ন সময়, আমার সংস্কার করতে হবে আগে। সেখানে বিচারিক প্রক্রিয়ায় করুন, কাউন্সিলের মাধ্যমেই করুন, অন্য কোন প্রক্রিয়ায় করুন, আমার মনে হয়, সেই বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত। ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র ধ্বংস করে দিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আমাদের সেই চরিত্র সঠিক করতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মুক্ত চিন্তা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার প্রমুখ।