টেকনাফে ১৪ বছরের স্কুল ছাত্রকে অস্ত্রসহ আটক দেখালো পুলিশ, সমালোচনার ঝড়
কক্সবাজারের টেকনাফে ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রকে অস্ত্রসহ আটক করার দাবি করেছে পুলিশ। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার হ্নীলা দরগাহ পাড়া থেকে তাকে আটক করা হয়। যদিও শিশুর পরিবারের দাবি শিশু থেকে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। অন্যের অস্ত্র শিশুর নামে দেখিয়ে তাকে আটক দেখানো হয়। শিশুকে অস্ত্রসহ আটকের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে।
আটক হওয়া স্কুলছাত্রের নাম তৌসিফুল করিম রাফি। আমাদের হাতে আসা জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর। যদিও পুলিশ উল্লেখ করেছে ১৬ বছর। সে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা রেজাউল করিম হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
এদিকে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাফির পরিবার। আমাদের হাতে আসা রাফির বাবা রেজাউল করিমের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের বাড়িতে পুলিশ কিছু না পেয়ে আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে ভয়ভীতি দেখায়। তারপর আমার ছেলেকে গুলি করার হুমকি দিয়ে স্থানীয় মো. সেলিমসহ কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মিলে অস্ত্র দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়েছে।’
মামলার এক নং সাক্ষী মাওলানা জামাল হোসেনের দাবি, তাকে মসজিদে যাওয়ার পথে আটকে একটি ঘরে ডুকিয়ে জোর পূর্বক সাক্ষী বানায়। তিনি এই শিশুর হাতে অস্ত্র দেখেন নি।
মামলার দুই নং সাক্ষী সুফাইদা আক্তারের বলেছেন, পুলিশ তার বাড়ি থেকে অস্ত্র পেয়েছে দাবি করেছেন এবং পরবর্তীতে এই শিশুকে নিজের বাড়ি থেকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে এবং অস্ত্র তার বলে ভিডিও স্টেটমন্টে নেন।
হ্নীলা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মাদ রায়হান তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, রাফি অসম্ভব মেধাবী । ২০২২ সালে গুলফরাজ হাশেম ফাউন্ডেশন বৃত্তি পরীক্ষায় সাধারণ বৃত্তি লাভ করে। এবছর সপ্তম শ্রেণিতে প্রতিভার আলো, ড.গাজী কামরুল ইসলাম মেধা বৃত্তি এবং হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতো। আমার কাছে প্রাইভেটে পড়ে। গতকাল সবাই বার্ষিক পরীক্ষা দিলো, রাফি ছাড়া। আমার ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি চাই। প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতি একটা মেধাবী ছেলের জীবন তছনছ করে দিলো।
হ্নীলা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সোহেল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে লিখেন, ‘তাওসীফুল করিম রাফি ছাত্র হিসেবে খুবই মেধাবী। একটু শ্যায় টাইপের। বড়দের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। মুখে অলওয়েজ হাসিঁ থাকে। সবে মাত্র কৈশোরে পা দিল। তার সাথে এটা বড় অবিচার হয়ে গেল। জানি না কিভাবে সে এই ট্রমা কাটিয়ে উঠবে। রাফির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি ।’
বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গিয়াস উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, বুধবার রাতে অভিযান চলাকালীন পুলিশ দেখে ২ জন পালিয়ে যেতে চাইলে রাফিকে ধরে ফেলে তারা। তারপর তার ডান হাতে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ৪০ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করার দাবি করেন ওসি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাউকে হয়রানি করার কোন উদ্দেশ্য নেই। একজন শিশুর সাথে তো আমাদের কোন শত্রুতা থাকতে পারে না। তার বাবা তাকে দিয়ে অস্ত্রটা বহন করিয়েছে। যেটা জেনুইন ঘটনা সেটাই আমরা করেছি। রাফি বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে, তার বাবা তাকে দিয়ে বহন করিয়েছে। নিরীহ মানুষ কোনদিন আমাদের কাছে হয়রানির স্বীকার হবে না।