বাসার মালিকের সাথে মনোমালিন্য, ব্যবসায়ের অর্থ যোগান দিতে খুন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ। রাজধানীর হাজারীবাগে এলাকায় বসবাস করতেন নিজস্ব বাসায়। সেই বাসার একটি ফ্ল্যাটে মেস করে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করত হত্যাকারী দুই আসামি। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ভিকটিমের স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন সময় মনোমালিন্য হতো তাদের। একইসঙ্গে রাত ১০টার পর গেট বন্ধ হলে বাসায় প্রবেশ করা নিয়ে বাধতো দ্বন্দ্ব। এতে ভিকটিম ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয় তারা।

এরই মাঝে অন্যের অধিনের চাকরি না করে নিজস্ব রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করে আসামিরা। নিজেদের ব্যবসার টাকা যোগান দিতে বাড়ির মালিক এর বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডাকাতি করতে গিয়েই হত্যা করা হয় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদকে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত 'ধানমন্ডিতে চাঞ্চল্যকর চিকিৎসক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও গ্রেফতার' প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- খুলনার ডুমুরিয়া থেকে মো.নাইম খান (২২) ও মো.জাহিদুর রহমান রিফাত (২০)। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মো. আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওন (২২)।

বিজ্ঞাপন

এসময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাসুদ আলম বলেন, ভিকটিম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ বছরের অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাংলাদেশে আসতেন। গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানার পশ্চিম ধানমন্ডির রোডের একটি বাসার ২য় তলায় রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জন দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করে। প্রবেশের পর ভিক্টিম ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদের সাথে দুষ্কৃতকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ পাশের কক্ষ থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে একজন দুষ্কৃতকারী তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে ডা.এ কে এম আব্দুর রশিদের বুকে একাধিকবার আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।

তিনি বলেন, এসময় তার স্ত্রীর চিৎকারে দুষ্কৃতকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত ডা. আব্দুর রশিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের চাচাতো ভাই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে, ঘটনার পূর্বের বিভিন্ন সময়ে উক্ত বাসায় মেস হিসেবে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরে ২৯ নভেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর বাজার এলাকা থেকে নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাতকে গ্রেফতার করা হয়। হাজারীবাগ থানার অপর একটি টিম ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে গ্রেফতার করে।

ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত নাইম খান ও জাহিদুর ভিকটিমের বাসার একটি ফ্ল্যাটে মেস করে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করত। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ভিকটিমের স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন সময় তাদের মনোমালিন্য হতো। এতে তারা ভিকটিম ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাত বাড়ির মালিক এর বাসায় প্রবেশ করে টাকা পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনাসহ উক্ত টাকা পয়সা ব্যবহার করে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৫ নভেম্বর, রাত আড়াইটার দিকে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে সাথে নিয়ে ভিকটিমের বাসার সীমানা প্রাচীর টপকে টাকা পয়সা লুট করার জন্য বাসায় প্রবেশ করে। এসময় ভিকটিম ডা. আব্দুর রশিদ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য উঠলে গ্রেফতারকৃতদের উপস্থিতি টের পান। ডা. আব্দুর রশিদ তাদের বাধা দিতে গেলে তার সাথে গ্রেফতারকৃতদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো চাকুর আঘাতে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ভিকটিম নিহত হন।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।