রংপুরে বৃদ্ধা রাবেয়ার হত্যাকারীকে ৫ মাসেও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ
রংপুরে চাঞ্চল্যকর বয়োজ্যেষ্ঠ রাবেয়া হত্যাকাণ্ডের ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আসামিকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। এনিয়ে হতাশা আর উৎকণ্ঠায় ভুগছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
ঘটনাটি ঘটেছে বদরগঞ্জ দামদোরপুর বালুয়া পাড়া গ্রামে। ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, আসামিদের সন্দেহ করে নিহত রাবেয়া'র ছেলে খাদিমুল ইসলাম বাদী হয়ে তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে।
বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করার পরেও তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করছে না বদরগঞ্জ থানা পুলিশ। এ নিয়ে ওই এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দামদোরপুর বালুয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে খাদিমুল ইসলামের সাথে পার্শ্ববর্তী গোপালপুর ভোট মাড়াই পাড়ার বাসিন্দা মনবার আলীর মেয়ে মুন্নি আক্তারের সাথে প্রস্তাবে বিয়ে হয় গত বছরেই। খাদিমুল ঢাকায় কর্মরত থেকেই তাদের সংসার চালিয়ে আসে। এদিকে বিয়ের পর থেকেই খাদিমুলের বৃদ্ধা মা-রাবেয়া বেগমের সাথে ছেলের বউ মুন্নি আক্তারের সাথে প্রায় সময়ই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জুলাই অযাচিতভাবে মুন্নি তার মা তাহেরা বেগমকে তাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে নিহত রাবেয়া বেগমের সাথে অতর্কিত ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি করে এবং রাবেয়া বেগমকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি দেন। এসময় খাদিমুলের বৃদ্ধ বাবা শহিদুল্লাহ ও তার ভাগনে পারভেজ তাৎক্ষণিক ঝগড়া মিটিয়ে দেয়।
এবিষয়ে নিহত রাবেয়া বেগম ওই রাতেই মুন্নির বাবাকে নালিশ জানার জন্য আনুমানিক সাড়ে আটটায় নিজ বাড়ি থেকে ছেলের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। তখন থেকেই রাবেয়া নিখোঁজ হন। সেই সময় থেকে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘটনার পরের দিন সকালে মুন্নির বাড়ি ঘেঁষে পুকুরে বৃদ্ধা রাবেয়ার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী।
এঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করলেও অজানা কারণে নেয়া হয়নি মামলা। নিহত বৃদ্ধা রাবেয়ার শরীরে, চোখে আঘাত, নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখেন এলাকাবাসী। তা সত্ত্বেও বদরগঞ্জ থানা পুলিশ কী কারণে মামলা নিলেন না, তা নিয়ে ওই এলাকার জনমনে বাঁধে নানান প্রশ্ন।
এবিষয়ে নিহত রাবেয়া'র ছেলে খাদিমুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার মা যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তা নিশ্চিত হয়ে থানায় মামলা করতে যাই, থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে আমি নিজে বাদী হয়ে আমার স্ত্রী মুন্নি আক্তার ও আমার শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৫ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। যা বর্তমানে তদন্ত চলমান রয়েছে। এই মামলা দায়ের করার পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং উল্টো তারাই আমাকেসহ আমার পরিবারের লোকজনকে জড়িয়ে আদালতে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে।
এবিষয়ে নিহত রাবেয়া'র স্বামী বৃদ্ধ শহিদুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, একদিকে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ প্রশাসনের নীরব ভূমিকা অপরদিকে ছেলের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অব্যাহত থাকা হুমকি ধামকি আমার পরিবারটিকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
তিনি ন্যায় বিচার চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজ ও ময়নুল ইসলাম জানান, রাবেয়া নিখোঁজ রাতেই অভিযুক্ত মুন্নি আক্তার তার বাপের বাড়ি থেকে ভেজা কাপড় চোপড়ে ফিরেন। এবং পরদিন মৃত রাবেয়ার মরদেহ অভিযুক্তদের বাড়ি ঘেঁষে ভরা বিলের পানিতে ভেসে থাকা প্রমাণ করে এ হত্যাকাণ্ডের পিছনে অভিযুক্তদের হাত থাকতে পারে।
তবে এবিষয়ে অভিযুক্ত মুন্নি আক্তার প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার দিন আমি শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম এবং ওইদিন সন্ধ্যায় আমার ননদদের সাথে শাশুড়ির টাকা পয়সা নিয়ে ঝগড়া হয়। আমি উভয় পক্ষকে থামাতে গিয়ে তারা আমাকে আমার ঘরের ভিতরে বন্ধ করে রেখেছিল, পরে কী হয়েছে তা জানি না। তবে গভীর রাতে ভেজা কাপড় চোপড়ে শ্বশুর বাড়িতে ফেরার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থ বলে এড়িয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত মনবার আলী, তাহেরা বেগম ও আব্দুর রউফ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তারা। তবে রাবেয়া বেগম যে' হত্যাকাণ্ডের শিকার তা নিশ্চিত করেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মনবার আলী ও অপর আসামি আব্দুর রউফ এরা উভয়ে মামলাবাজ। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানো এদের পেশা।
এবিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আতিকুর রহমান জানান, ওই সময়ে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল প্রখর।
তাছাড়া আমি এই থানায় যোগদান করেছি চলতি মাসে। তারপরেও বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখবো।