পাইকারিতে ‘পানির’ দর শীতের সবজির, খুচরায় চড়া

  • সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ কসেরপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাইকারিতে ‘পানির’ দর শীতের সবজির, ছবি: বার্তা২৪.কম

পাইকারিতে ‘পানির’ দর শীতের সবজির, ছবি: বার্তা২৪.কম

শীতের আগমনী বার্তা প্রকৃতিতে দেখা গেলেও চট্টগ্রামে বাজারগুলোতে শীতের সবজি মাস খানেক আগে থেকেই সরব। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকারি বাজারে সবজির দাম কমেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে সেই মূল্যছাড়ের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি পাইকারিতে অনেকটা ‘পানির’ দরে বিক্রি হলেও নগরীর অন্যান্য কাঁচাবাজারে খুচরায় দেড় থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে সরবরাহ বাড়লেও ভোক্তারা সেই সুবিধা পুরোপুরি পাচ্ছেন না। নগরীর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, অক্সিজেন, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়িসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারির দেড় থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে নানা সবজি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের চৈতন্য গলিতে পাইকারি আড়তে শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩০ টাকায়। অথচ নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সেই শিম খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, পাইকারি দামের তুলনায় খুচরা দামে আড়াই থেকে তিনগুণেরও বেশি পার্থক্য।

অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও পাইকারি ও খুচরা দামের বিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। ফুলকপি পাইকারিতে ২০ টাকা, খুচরায় ৫০ টাকা। বাঁধাকপি পাইকারিতে ২০ টাকা, খুচরায় ৪০ টাকা। বেগুন ও চিচিঙ্গা পাইকারিতে ২৫ টাকা, খুচরায় ৫০-৬০ টাকা। শসা পাইকারিতে ৩০ টাকা, খুচরায় ৬০ টাকা। ঢেঁড়স পাইকারিতে ৪০ টাকা, খুচরায় ৮০-১০০ টাকা। মুলা পাইকারিতে ১৫ টাকা, খুচরায় ৩০ টাকা। লাউ পাইকারিতে ১৫ টাকা, খুচরায় ৩৫ টাকা। কাঁচামরিচ পাইকারিতে ৩৫ টাকা, খুচরায় ৮০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া পাইকারিতে ২০ টাকা, খুচরায় ৫০ টাকা এবং পটল পাইকারিতে ২০ টাকা, খুচরায় ৬০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের কয়েকজন আড়তদার জানান, প্রতিবছর এই সময়ে যেরকম সরবরাহ থাকে, এবারও তেমনই আছে। আগের তুলনায় সবজির সরবরাহ বেড়েছে, এবং দামও বেশ কম। তবে আলুর দাম কিছুটা বেশি রয়েছে। নতুন আলু বাজারে আসায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর দামও কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মুনাফার নিয়ম মানছে না খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২০২১ সালের কৃষিপণ্য বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মুনাফা করার অনুমতি থাকলেও বাস্তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছেন। এছাড়া বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ীর দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নিয়মও মানা হচ্ছে না, যা ভোক্তাদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।

ভোক্তারা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে এমন মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে নগরবাসীর অভিযোগ, বাজার তদারকির অভাবেই খুচরা ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, পাইকারি দামের সঙ্গে খুচরা দামের ব্যবধান কমিয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে।

সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মুনাফার চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন ও চড়া দামে সবজি বিক্রির বিষয়ে নগরীর ২ নম্বর গেইট ও অক্সিজেন এলাকার একাধিক সবজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সবজি ব্যবসায়ী জানান, বাড়তি পরিবহন খরচ, শ্রমিক ও কর্মচারীর মজুরি, বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়া সব মিলিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার টাকার খরচ মেটাতে হয় তাদের। তাই এসব খরচ যোগ হয় সবজির দামে। তাতে বাড়ে দাম।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইনে মুনাফার সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও এটি কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নেই। কাঁচাবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে রশিদ ব্যবস্থার প্রচলন, তদারকি বাড়ানো এবং কৃষকদের সরাসরি বিপণনে যুক্ত করা জরুরি।