‘বাওয়া স্কুলের সামনে এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বাওয়া স্কুলের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না। আমি সিডিএকে বলেছি, সিডিএর চেয়ারম্যানকে এবং এখানে সিটি নিয়ে যারা পরিকল্পনা করে তাদেরও। নগর পরিকল্পনা নিয়ে যারা ভাবেন তারাও এই র্যাম্পের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নগরের যানজট নিরসনকল্পে মতবিনিময় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, আমার মনে হয় এই জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো একজনের লাভের জন্য আমরা আমাদের সিটিতে যানজট করতে পারি না। এটা ওই সময়কার একজন ব্যবসায়ীকে খুশি করার জন্য, তার হোটেলের ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য একটা র্যাম্প সেখানে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তার হোটেলের যাত্রীরা খুব দ্রুত বিমানবন্দর চলে যাওয়ার জন্য। আমি সেদিন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান মহোদয়ের সামনে স্পষ্ট বলেছি। যারা সাংবাদিক ছিল তারা হয়তোবা আমার কথা শুনেছেন। আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সামনে আমি স্পষ্ট বলেছি যে, পেনিনসুলার যে মালিক তার খুশি করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। এখানে জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সেটা করা হয়েছে।
নগর যানজট মুক্ত করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য যত্রতত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে যানজট কমানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। ব্যাটারি রিকশাগুলোর জন্য যে সব অবৈধ চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো বন্ধে আমি আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেটদের বলেছি। তবে আমি বিআরটিএসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলবো।'
তিনি বলেন, কর্ণফুলী সেতুর পাশে যে যানজট হচ্ছে সেটার জন্য আমরা ডিসি মহোদয়কে একটা জায়গা ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। আশা করি এই জায়গাটা বেশি বড় না হলেও ওইখানকার যে গাড়িগুলো আছে, আমরা হয়তোবা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারবো। আশা করছি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী সেতুর পাশে বাস টার্মিনাল অথবা বাস স্টেশন চালু হবে। আর বহদ্দারহাটে একটা বাস টার্মিনাল থাকলেও আসলে পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। সেখানে টয়লেট ফ্যাসিলিটিস আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেখানে লাইটিং ফ্যাসিলিটিস বোধ হয় কম আছে। এগুলো যদি আমরা আরেকটু নিশ্চিত করতে পারি তাহলে নাগরিকদের সুবিধা হবে।
মেয়র বলেন, নগরের যানবাহনের যোগাযোগ ব্যবস্থা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হলে যত্রতত্র বাসসহ যেকোনো যানবাহন দাঁড়াতে পারবে না। যাত্রী ছাউনি, বাস স্টপেজ যেখানে থাকবে সেখানে দাঁড়াতে হবে। এই জায়গায় আমাদের কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়ানোর কারণে কেবল যে যানজট বাড়ছে তা নয়, বরং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এ অব্যবস্থাপনা।
সভায় ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য চট্টগ্রাম শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা। একটি শহরকে শৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন। তবে চট্টগ্রামে সড়ক আছে মাত্র ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান সমস্যা পার্কিং সংকট। অতি দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে পার্কিং প্লেস নির্ধারণ করা জরুরি। আনফরচুনেটলি দেখা যায় রাস্তার পাশে বিভিন্ন যে কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, মার্কেটগুলো আছে তারা তাদের যে পার্কিংগুলো আছে সেই পার্কিংগুলো অকুপাইড করে রেখেছে অন্য কাজে, এগুলো উন্মুক্ত করা দরকার। এক্ষেত্রে সিডিএর নিজস্ব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার মতো ম্যাজিস্ট্রেট আছেন।
আমাদের সিটি করপোরেশনও আছে। যে সব জায়গায় যত পার্কিং থাকার কথা সিডিএর কাছে নিশ্চয় প্ল্যানে আছে। ওগুলো যদি অকুপাইড হয়ে থাকে এগুলো উন্মুক্ত করলে দেখা যাবে যে মার্কেটকেন্দ্রিক যে গাড়িগুলো আসে সেগুলো বেশিরভাগই মার্কেটের নিচে পার্কিংয়ের সুযোগ পাবে। একটা মার্কেটে যদি দোকান থাকে ধরে নিলাম ১০০টা পার্কিং প্লেস আছে, ৫০টা কিন্তু আনফরচুনেটলি দোকান মালিকরা নিজেদের গাড়ি রেখে দেন। তাহলে যারা ক্রেতা তারা গাড়িগুলো রাখবে কোথায়? চাপ থাকে কখন? অফিস আওয়ার, স্কুল আওয়ার। চট্টগ্রাম শহরের বড় বড় স্কুলগুলো মেইন স্পটে। যার কারণে এখানে যানজট হয়। আপনি দেখবেন ওই সময়ের পরে কিন্তু রাস্তায় খুব একটা চাপ নেই। কিন্তু তারপরও আপনি চাপ পাবেন মোড় কেন্দ্রিক। দেখা যায় আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের কারণে এই চাপ তৈরি হয়। এজন্য বাসগুলো কিছু কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসা দরকার।
এসময় বক্তব্য দেন- চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান, বিআরটিএর পরিচালক মো. মাসুদ আলম, ট্রান্সপোর্ট প্রফেসনালস অ্যালাইয়েন্সের সিইও ড. মোহাম্মদ নুরুল হাসান, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী প্রমুখ।