ওসির অনিয়ম, মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করল স্থানীয়রা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দিতে এসে অফিসার ইনচার্জের (ওসি) হুমকির শিকার হয়েছেন এক ভুক্তভোগী। ওসির এমন হুমকির ঘটনায় মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দারা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে ওসির অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় মোহাম্মদপুর থানার সামনে বাসিন্দারা অবস্থান নিয়ে এ দাবি জানায়।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের খবর শুনে মোহাম্মদপুর থানার ওসি বৃহস্পতিবার সকালেই জরুরী ৫ দিনের ছুটি নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। 

জানা যায়, ৫ আগষ্টের পর যাত্রাবাড়ী থেকে পালিয়ে আসা এক আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আক্তার বাবু মোহাম্মদপুর এলাকায় এসে আশ্রয় নেয়। এ এলাকায় এসে তার পূর্বপরিচিত এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করছিলেন। হঠাৎ করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে উল্টা ওই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেয় ওসি।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও, আরও জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলার আসামি খাল দখল করে গড়ে তোলা সিলিকন সিটির এমডি সারোয়ার খালিদ কে গ্রেফতারের পর মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাত্র একটি মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পাশাপাশি, বসিলা গার্ডেন সিটির শামীম কোম্পানী থেকে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা নিয়ে শামীম কে গ্রেফতার না করে বসিলা ব্রিজ পাড় করে দিয়ে আসেন তিনি। এদের পাশাপাশি, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল ও চুয়া সেলিম কে গ্রেফতারের পর তাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন তিনি। এমন নানা অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা থানার সামনে অবস্থান নেয়।

ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তা আলমগীর কবীর জানান, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যাত্রাবাড়ীর এক আওয়ামী লীগ নেতা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। সে এক সময় আমার সাথে ব্যবসা করতো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী অনেক হত্যা মামলা হওয়ায় এ এলাকায় আমার প্রতিষ্ঠানে এসে দেখভাল করবে বলে আমাকে অনুরোধ করে। আমি তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সে ওসির সাথে মিলে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের পাঁয়তারা করে। এ বিষয়ে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ আমাকে কোন সহায়তা না করে উল্টা তদন্তকারী অফিসার এএসআই হাসান আমার সাথে দেখা করে ১ হাজার পাঁচ'শ টাকা নেয়। এরপরও আমাকে আইনি কোন সহায়তা না করার পর এ বিষয়ে আমি স্থানীয় বাসিন্দারা সহ থানায় ওসি'র সাথে কথা বলতে গেলে ওসি ওই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ১৫-২০ জন বাসিন্দাদের সামনে জোরে চেঁচামেচি করে আমাকে বলে, ৫-১০ হাজার টাকা দিলে এ এলাকা কিশোর গ্যাং কুপিয়ে ফেলে যায়। কিন্তু আপনাকে এখনও কোপায় নাই কেন তা বুঝতেছি না। চেঁচামেচি করে এমন হুমকি স্বরূপ কথা যদি ওসির মতো একটি দায়িত্বশীল লোক বলে তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব। ওসির বক্তব্যে স্পষ্ট যে এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে তার আঁতাত রয়েছে। তাদের দিয়ে সে বিভিন্ন অপকর্ম করায়।

এ ঘটনায় থানার সামনে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন বলেন, ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন আইনি সহয়তা পায়নি। কারণ, ওসি আওয়ামী লীগ নেতা ও বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে মিশে এ এলাকায় অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এমন অপরাধপ্রবণ এলাকায় দায়িত্বশীল একটি জায়গায় বসে থানায় আইনি সহায়তা চাওয়া ভুক্তভোগীকে কিভাবে ৫-১০ হাজার টাকায় কিশোর গ্যাং দিয়ে কুপিয়ে আহত করার ভয় দেখায়?

থানার সামনে আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, এলাকায় ওসি এসে বাসিন্দাদের জন্য কাজ না করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও চাঁদাবাজদের সাথে মিলে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। ভুক্তভোগীরা থানায় সেবা নিতে এসে উল্টা হয়রানির শিকার হচ্ছে। থানায় একটি অভিযোগ দেওয়ার পর তদন্তকারী অফিসার ও ওসি মিলে মিশে তাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে অপরপক্ষ থেকে টাকা খেয়ে কোন আইনি সহায়তা না দিয়ে উল্টো হয়রানি করে। একজন দায়িত্বরত ওসি যদি সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়ে বলে, ৫-১০ হাজার টাকা হলে কুপিয়ে রেখে যায়। আপনাকে এখনও কোপায় নাই কেন? এমন কথা একজন ওসি কিভাবে বলতে পারে। এমন অযোগ্য ও সন্ত্রাসীদের সহায়ক ওসিকে দ্রুত অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাসিন্দারা থানার সামনে অবস্থানের পর ওসি'র সাথে কথা বলতে থানায় প্রবেশ করেন। এ সময় পাভেল নামে একজন নিজেকে ওসির ঘনিষ্ঠ দাবি করে বাসিন্দাদের হুমকি দেন। এর আগে গতকাল রাতে ফোন করে ওসির বিরুদ্ধে না যেতে হুমকি দেওয়া হয়। যা নিয়ে বাসিন্দারা সরাসরি ওসির সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখেন ওসি তার রুমে নেই। সে আজ সকালে বাসিন্দাদের থানার সামনে স্থানীয়দের অবস্থানের কথা শুনে জরুরী ছুটি নিয়ে থানা থেকে চলে গেছে।

এ সময় বাসিন্দারা থানায় তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তারেক সেকান্দার এর সাথে অবস্থানরত বাসিন্দারা ওসির নানা অপকর্মের বিষয়ে কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয় এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এ সময় পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের লিখিত অভিযোগ তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানাবেন। পুলিশের এ কর্মকর্তার এমন আশ্বাসের পর ওসি'র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন বাসিন্দারা।