ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দেশের একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ শস্য সরিষা আবাদ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল ফরিদপুর জেলায়। কিন্তু নতুন করে ভোক্তারা সরিষার তেলের ব্যবহার বাড়ানোর ফলে চাহিদা বেড়েছে সরিষা তেলের। সচেতন মানুষ মধু খাওয়াও বাড়িয়েছে। তেল ও মধুর চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে সরিষার আবাদ। দাম ভালো পাওয়ায় নতুন করে চাষাবাদ বাড়িয়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।
সরেজমিনে সদর উপজেলার আদমপুর, চরমাধবদিয়া তুলাগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। ভোরের কুয়াশা, সকালের মিষ্টি রোদ, বিকালের শীতের স্নিগ্ধতার মাঝে দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষা ফুল এক অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে মাঠগুলোতে।
এ বছর চাষাবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় সরিষার উৎপাদন হবে ৫ থেকে ৬ মণ। গড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি হলেও চাষিরা লাভবান হবেন।
জেলায় বারি-১৪, বারি-১৫ এবং বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। বীজ ছিটানোর ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে বারি জাতের সরিষা ঘরে তোলা যায়। আর বিনা জাতের সরিষায় সময় লাগে ১১০ দিন। স্বল্প সময়ে ফসল ঘরে তুলতে চাষিরা বারি জাতের সরিষাই বেশি চাষ করছেন।
ফরিদপুর সদরের ডোমরাকান্দি এলাকার কৃষক আযম শেখ বলেন, সরিষা চাষ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলাম। গত ৪/৫ বছর ধরে সরিষার তেল খাওয়া বেড়ে গেছে। তাই সরিষা বিক্রিও বাড়ছে। দামও ভালোই পাচ্ছি। আর সরিষা চাষে তেমন কষ্ট নেই পরিচর্যা কম করতে হয় বলে খরচও কম হয়। সার ওষুধও বেশি লাগে না বলে জানান ওই কৃষক।
তুলাগ্রামের কৃষক হামিদ মিয়া বলেন, সয়াবিন তেলের চেয় সরিষা তেল খাওয়া ভালো। আগে আমরা সরিষার তেলই খাইতাম। মাঝখানে সবাই সয়াবিন তেল খাওয়া শুরু করে। ইদানিং আবার মানুষ সরিষার তেল খাচ্ছে বেশি। তাই সরিষা বেশি লাগতেছে বেশি। তিনি বলেন অন্য ফসলের সঙ্গে সরিষাও চাষ করা যায়। সরিঝা চাষে ঝুঁকিও কম। আর দাম বেড়ে গেছে সরিষার। তাই নতুন করে সরিষা বেশি চাষবাদ করছি।
সরিষা তেল ব্যবসায়ী নয়ন খান বলেন, মানুষ দিনে দিনে সচেতন হচ্ছে। সয়াবিন তেল আসলে সয়াবিন তেল কি না তা নিয়ে আমাদের মনে সংশয় রয়েছে। এছাড়া বাজারের সয়াবিন তেল রান্নায় ব্যবহার করে অনেকে রোগে আক্রন্ত হচ্ছেন। তাই সচেতন মানুষেরা সয়াবিনের পরিবর্তে অনেকে সরিষার তেল ব্যবহার করছে। আগের তুলানায় সরিষার তেল বিক্রি বেড়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে এবার সরিষার আবাদ বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল সরকারের তরফ থেকে। তাই সরিষা চাষ বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তৈরি করা হয় নতুন শস্যবিন্যাস। উদ্বুদ্ধ করা হয় চাষিদের। গত মৌসুমে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় উদ্বুদ্ধ হন চাষিরা। এ কারণে চলতি মৌসুমে বেড়েছে সরিষার আবাদ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৬শ ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হবে ১৮ হাজার ৯শ ৫০ মেট্রিকটন। সরিষা থেকে ৭ হাজার ৫শ ৮০ মেট্রিক টন তেল উৎপাদন সম্ভব হবে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় সরিষা চাষাবাদ বেড়েছে। তবে গতবছর শস্য মৌসুমে বৃষ্টি থাকায় আমাদের চাষাবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তা নাহলে আরো সরিষা চাষাবাদ হতো। আমরা সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যাতে কৃষকে উৎপাদন বাড়ে। সরিষার জমিতে সালফার জাতীয় সার ও জিংক সার ব্যবহার করতে বলেছি তাতে ফলন বাড়বে। পাশাপাশি ক্ষেতে মৌমাছি পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি এতে পরাগয়ান ভালো হবে, বায়োপ্রোডাক্ট হিসেবে মধুও পাবো।
তবে সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও প্রনোদণা ও কৃষি বিভাগের জোরালো তদারকির দাবি চাষিদের।