কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলায় বইছে উৎসবের আমেজ। শত বছরের পুরোনো এই মেলায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। প্রতিবারের মতো এবারও মেলার অন্যতম আকর্ষণ বিশাল মাছের বাজার, যেখানে উঠেছে ২৫-৩০ কেজি ওজনের বড় বড় মাছ। এই মেলার আরেকটি রীতি হলো জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে বড় মাছ নিয়ে যাওয়া, যা মেলার অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে।

চারপাশে আনন্দময় পরিবেশ। নাগরদোলায় ঘুরছে শিশু-কিশোররা, নানা রকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কাঠের আসবাব, কসমেটিকস, গ্রামীণ তৈজসপত্র, সার্কাস, মৃত্যুকূপ, পুতুল খেলা; সব মিলিয়ে এক জমজমাট আয়োজন। মেলায় বিন্নি খৈ, বাতাসা, জিলাপিসহ হরেক রকমের মিষ্টান্নের দোকানও রয়েছে। হাজারো দর্শনার্থী এসেছে কিশোরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে।

মেলার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বিশাল মাছের হাট। এখানে পাওয়া যাচ্ছে বোয়াল, কাতল, রুই, চিতল, বাঘাইড়সহ নানা জাতের মাছ। ২৫ কেজির কাতল, ৩০ কেজির বোয়াল দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। অনেকে ছবি তুলছেন, কেউবা দরদাম করছেন। মাছ বিক্রেতা আলী আহমেদ জানান, ২৫ কেজির কাতল মাছের দাম চাচ্ছেন ১,৮০০ টাকা কেজি, তবে ক্রেতারা ১,২০০ টাকা দাম হাঁকছেন। তিনি আশা করছেন, আগামী কয়েকদিনে বিক্রি বাড়বে।

মেলায় আসা জামাই আহমদ রুবেল বলেন, “১৫ হাজার টাকার রুই মাছ কিনেছি, শ্বশুরবাড়িতে নেওয়ার জন্য। মেলা উপলক্ষে বড় মাছ কেনা একটা ঐতিহ্য।”

মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা সপ্তাহব্যাপী চলে। এটি শুধু কেনাবেচার জায়গা নয়, পারিবারিক মিলনমেলা হিসেবেও পরিচিত। প্রতিবাড়িতে নতুন জামাই ও আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার রীতি রয়েছে। এলাকার মানুষ সারা বছর ধরে এই মেলার জন্য টাকা জমায়। স্থানীয়দের মতে, কুড়িখাই মেলা তাদের জীবনের বড় আনন্দের উপলক্ষ।

যদিও মেলার কেনাকাটা নিয়ে উচ্ছ্বাস রয়েছে, তবে অনেকেই অভিযোগ করছেন, এবারের জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলায় জায়গা পেতে বেশি টাকা খরচ হওয়ায় পণ্যের দামে তার প্রভাব পড়ছে।

মেলা কমিটির সভাপতি ও কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইদুল ইসলাম জানান, “মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং করা হবে।”

হযরত শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) এর সমাধির পাশে বসা কুড়িখাই মেলা শুধু কেনাবেচার জন্য নয়, বরং এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সময়ের পরিক্রমায় এই মেলা হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে বড় গ্রামীণ উৎসব।

পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিনসহ তিনজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের এ ঘটনাটি মঙ্গলবার(১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ঘটে।

আহত অন্য দুজন হলেন, পৌর জামায়াতের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন এবং জামায়াত কর্মী গাজী মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির। গুরুতর আহত অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য আজ মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের শেষ দিন। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে জামায়াত সমর্থিত জেলা ‘ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ৯টি পদে প্রার্থী দেওয়া হয়।

জামায়াতপন্থি আইনজীবী রুহুল আমিন অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ৬টি পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি করলেও সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
তিনি আরও বলেন, "জামায়াত ৯টি পদেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বিএনপির সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি। যখন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, তখনই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বাধা দেন এবং আমাদের ওপর হামলা চালায়।"

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাহউদ্দিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "জামায়াত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতিতে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।"

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম মোজাম্মেল হক তপন বলেন, "এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আগে আওয়ামী লীগে ছিলেন। এখন তিনি জামায়াতের কাঁধে ভর করছেন। এতে আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে, এবং জামায়াতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।"

জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. মোহসীন উদ্দিন বলেন, "জেলা জামায়াতের আমির নিজে উপস্থিত থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। এছাড়া তিনটি পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি না করার অভিযোগও সঠিক নয়।"

এই সংঘর্ষের ঘটনায় আইনজীবী মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের দিনও যদি দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বজায় থাকে, তাহলে সমিতির পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে দেখা গেল থানার ওসি,আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএনপি নেতা কর্মীদের। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেছে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাব্বুল হোসেনকে। উদ্‌বোধনী খেলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যায়।

জানা যায়, সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার জে.কে পোল্লাডাঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন মাঠে পোল্লাডাঙ্গা স্বর্ণকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা পরিষদের আয়োজনে ‘স্বর্ণকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০২৫’ এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্‌বোধনী খেলার সভাপতি হিসেবে খেলার উদ্বোধন করেন ভোলাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিনুর রহমান।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দলদলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক (চুটু) ও জে.কে পোল্লাডাঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ি কোম্পানি কমান্ডার মো. আবু হানিফ।

অনুষ্ঠানে যুবদল নেতা সামিরুল ইসলাম গাজীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উপস্থিত ছিলেন, ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আতাউর রহমান (মাস্টার), সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাব্বুল হোসেন, দলদলী আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যরা।

উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে সামিরুল ইসলাম গাজী বলেন, ‘খেলা মানে আনন্দ। দলমত নির্বিশেষে এ টুর্নামেন্টটিকে শেষ করার জন্য অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, এখন কোনো দলীয় সরকার নাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ আপনারা সার্বিক সহযোগিতা করে এ টুর্নামেন্টকে উঠানোর জন্য সুযোগ দিবেন।’

বক্তব্য জানতে ভোলাহাট থানার ওসি মো. শাহিনুর রহমানের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মাহাবুব হাওলাদার (৪৫) নামে এক ট্রলার চালককে হত্যার ১২ দিন পর সন্ধ্যা নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, তারই ভাতিজা সুজনসহ ৬ জন মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

গত ৩১ জানুয়ারি রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি খেয়াঘাট থেকে ট্রলারসহ নিখোঁজ হন মাহাবুব হাওলাদার। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। পরদিন তার ভাই জামাল হোসেন অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

পুলিশ তদন্ত করে মঙ্গলবার সকালে নিহতের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম ও তার ছেলে সুজনকে আটক করে। পরে সুজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার মামাতো ভাই রিয়াদসহ আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তে জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি সুজন ও তার সহযোগীরা যাত্রীবেশে মাহাবুবের ট্রলারে ওঠে। মাঝনদীতে পৌঁছালে তারা তাকে হত্যা করে লাশ পাথরের সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়। এরপর ট্রলারটি বিক্রি করে দেয়।

বরিশাল বাবুগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, মূলত ট্রলার ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই সুজনের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে তার বাবা শহিদুল এতে জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।