পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাবি

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাবি

পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাবি

ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন। রেজিস্ট্রারের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী, এক হও-লড়াই করো’, ‘পোষ্য নিয়ে টালবাহানা, চলবে না-চলবে না’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়৷

সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পোষ্য কোটা বাতিল সংক্রান্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনেন কয়েকজন শিক্ষার্থী৷ এঘটনার প্রতিবাদ জানাতে আসলে সেখানে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভে অফিসার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। বাবুল আশুলিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং প্রশাসন কর্তৃক বহিষ্কৃত কর্মকর্তা৷

বিজ্ঞাপন

এসময় শিক্ষার্থীদের- ‘দাবি মোদের একটাই, পোষ্য কোটার বাতিল চাই’, ‘হলে হলে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে,’ ‘সংস্কার না বাতিল, বাতিল বাতিল’, ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা বৈষম্য নিয়ে দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার মতো একটি অযৌক্তিক কোটা থাকতে পারে না। তবুও গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা সংস্কার করেছে। কিন্তু আজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈষম্যের পক্ষে অবস্থা নিয়েছে। আমরা পোষ্য কোটার বাতিল চাই।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে মাটি খুঁড়ে পোষ্য কোটার প্রতীকী কবর দেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেখানে উপস্থিত হন৷ এসময় উপাচার্যের সাথে রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়৷

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী আমি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। নেতা হিসেবে আমি অনেক বক্তৃতা দিয়েছি তবে উপাচার্য হিসেবে সবকিছু এত সহজে করা বা বলা যায় না৷

এদিকে দুপুরে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পোষ্য ভর্তি বিভাগীয় সকল শর্ত বাতিল করে পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার দাবিতে আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হলো। শুধু জরুরি পরিসেবাসমূহ আওতামুক্ত থাকবে তবে অন্দোলনের প্রয়োজনবোধে জরুরী সেবাসমূহ আওতাভুক্ত করা হবে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারিদেরকে সকাল ৯ টার সময় তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী সমিতি অফিসের সামনে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হলো৷

পোষ্য কোটার জন্য আগের সব সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্মকর্তা–কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, পোষ্য কোটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই এই সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। যত দিন পর্যন্ত পূর্বের সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহাল করা না হবে তত দিন পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।’

এর আগে গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অযৌক্তিক পোষ্যকোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে হওয়া আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটায় কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়। গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ হলো-

একটি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ অর্থাৎ ৪০ জন পোষ্য কোটার সুবিধা পাবেন। ভর্তির জন্য পাস নম্বর ৪০ শতাংশ (৩২ নম্বর) নির্ধারণ করা হয়েছে যা সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য। পূর্বে স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, সন্তান ও দত্তক নেওয়া সন্তানের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য থাকলেও এখন শুধুমাত্র শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুধুমাত্র গর্ভজাত বা ঔরসজাত সন্তান এই কোটায় ভর্তি হতে পারবে, এই কোটার নাম "পোষ্য" না হয়ে "সন্তান" হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের চাকরি জীবনে একবারই এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি তাদের একাধিক সন্তান থাকে, তাহলে কেবল একজন এই সুবিধা পাবে। কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী যে বিভাগে কর্মরত, সেই বিভাগে তার সন্তান ভর্তি হতে পারবে না৷

সন্ধ্যা ৬ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবন ছেড়ে চলে গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবস্থান করছেন। সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের কাছে ৪ ঘণ্টা সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷