বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে আড়াইশ কোটি টাকার রাবার ড্যাম
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
বরেন্দ্র অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে দীর্ঘদিন ধরে থাকা পানির তীব্র সংকট সমাধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর রাবার ড্যামের পাশে সদর উপজেলার বারোঘরিয়া এলাকায় ফসলী জমির পাড় ঘেঁষেই মহানন্দা নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অপরিকল্পিতভাবে রাবার ড্যামের ১০০ মিটারের মধ্যেই চলছে এই বালু উত্তোলন।
জানা গেছে, বাড়িতে বাড়িতে পানি সরবরাহ করা ব্রতী নামের একটি বেসরকারি সংস্থার পানির উৎস ঠিক রাখার কথা বলে অপরিকল্পিতভাবে এই বালু উত্তোলনে হুমকিতে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম প্রকল্প। এছাড়াও মহানন্দা সেতু ও নদীর পাড়ে থাকা ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা। বেসরকারি সংস্থা ব্রতীকে প্রথমে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলেও স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেয় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এরপরেও বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
স্থানীয়দের দাবি, রাবার ড্যামের এতো কাছাকাছি বালু উত্তোলন করায় হুমকিতে পড়বে এই প্রকল্পটি। পাশাপাশি ভাঙনের কবলে পড়বে নদীর ধারে থাকা কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি। বারবার অভিযোগ দিয়েও বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের৷ আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যাম ও ফসলী জমি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
কাউসার আলী নামের এক শিক্ষক বার্তা ২৪.কমকে বলেন, আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষার পর জেলাবাসী দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম পেয়েছে। এই প্রকল্পকে ঘিরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহার করতে শতকোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামের এতো কাছে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে স্থাপনাটি হুমকিতে পড়বে। তাই প্রশাসনের নিকট আবেদন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রেহাইচর গ্রামের যুবক আরিফুল ইসলাম বার্তা ২৪. কমকে বলেন, এখন যেখানে রাবার ড্যাম প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আমাদের ধান চাষাবাদের জমি ছিল। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা দিয়ে এতো বড় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আশেপাশে নদীর দুই ধারে রয়েছে শতশত বিঘা ফসলী জমি। কিন্তু এসবকে বিবেচনায় না নিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল রাবার ড্যামের পাশেই বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এনিয়ে কথা বলতে রাজি হননি ব্রতীর কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তবে সেখানকার এক কর্মকর্তা জানান, ব্রতীর পানি সরবরাহের জন্য শুষ্ক মৌসুমেও যাতে পানি থাকে তাই জেলা প্রশাসনকে একটি আবেদন করা হয়েছিল। পরে এর অনুমতি পাওয়া যায়। কিন্তু ব্রতীর নামে অনুমোদন হলেও বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় কিছু লোকজন। মহানন্দা নদীর কোথায় কি পরিমাণ বালু উত্তোলন হবে, এবিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় গত ২৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় রাবার ড্যাম ও ফসলী জমি রক্ষার কথা ভেবে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, প্রথমে অনুমোদন দেয়া হলেও বিভিন্ন অভিযোগ ও রাবার ড্যামের ক্ষয়ক্ষতির কথা ভেবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়৷ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি বালু উত্তোলন হয়, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন জানান , একটি বেসরকারি সংস্থার আবেদনের পর অনুমতি পেলে বালু উত্তোলন শুরু হওয়ার পর অভিযোগ পেলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে তা বন্ধ করা হয়। কারন অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম ও ফসলী জমির কোন ক্ষয়ক্ষতি হতে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। রাবার ড্যামের মতো বড় প্রকল্প ও ফসলী জমি ক্ষতি করে বালু উত্তোলন করলে নেয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা।
উল্লেখ্য, মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। ৩৫৩ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যাম প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা।