কোন পথে হাঁটবেন বিমানের এমডি মোকাব্বির?



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোকাব্বির হোসেন/ছবি: সুমন শেখ

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোকাব্বির হোসেন/ছবি: সুমন শেখ

  • Font increase
  • Font Decrease

গত রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোকাব্বির হোসেন। তিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব।

বর্তমান দায়িত্ব নেওয়ার আগে মোকাব্বির হোসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

২০০৭ সালে বিমান করপোরেশন থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে (পিএলসি) রূপান্তরের আগে দেশের আমলারাই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সাধারণত সরকারের একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাই এ পদে নিয়োগ পেতেন- এটাই ছিল দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। ২০০৭ সালে সর্বশেষ এমডি হিসেবে যুগ্ম সচিব ড. এমএ মোমেন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালিয়েছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ালাইন্স বিমানের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই এয়ারলাইন্স প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিমান একটি লোকসানি সংস্থার খাতায় নাম লিখিয়েছে। বিমানের লোকসান নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে অজস্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একপর্যায়ে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানের চক্র থেকে বের করতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। যদিও এর শতভাগ মালিকানা সরকারের হাতেই রাখা হয়। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। আর এজন্যই এ খাতে কাজ করা অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দেওয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রাও শুরু করে বিমান। ২০১৩ সালে এজন্য ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজসহ স্বনামধন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কাজ করা ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞ কেভিন স্টিলকে নিয়োগ দেওয়া হয় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে। তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নিয়োগ পেয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন সময় মতো ফ্লাইট ছাড়ার ওপর এবং অন টাইম ফ্লাইট ডিপার্চার প্রায় ৭০ শতাংশে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বিমানের মতো প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিক চেহারা মাত্র দুই বছরের মধ্যে বদলে ফেলা সম্ভব নয়। তাছাড়া তিনি যেসব জায়গায় হাত দিতে চেয়েছিলেন, তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের থেকে আসে নানা বাধা। আর তাই দুই বছরের মেয়াদে নিয়োগ হলেও মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাকে বিদায় নিতে হয়। এরপর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও এয়ার এরাবিয়া এয়ারলাইন্সের মতো খ্যাতনামা এয়ারলাইন্সে কাজ করা কাইল হেউডকে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও এক বছরের মধ্যে বিমান থেকে বিদায় নেন। এরপর আবার দেশীয় লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সর্বশেষ সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোসাদ্দেক আহমেদের বিরুদ্ধে পাইলট নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিমানের পরিচালনা পর্ষদ তাকে সরিয়ে দেয়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখন মূলধন সংকটে রয়েছে। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির মূলধনের চেয়ে ঋণ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় তার ঋণ নেওয়ার যোগ্যতাও হারিয়েছে। মূলত মূলধনের চেয়ে ঋণ বেশি হওয়ার কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এক হিসেব থেকে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরে বিমান ছয় বছরই লোকসান দিয়েছে। এ সময়কালে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। বারবার লোকসানের ফলে প্রতিষ্ঠানটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। টাকার অঙ্কে তা এক হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আর তিন বছরে লাভের পরিমাণ ৫৫৯ কোটি টাকা। লাভ থেকে লোকসান বিয়োগ করলে এ সময়কালে লোকসানের পরিমাণ ৯০০ কোটি টাকা।

লোকসানের বাইরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) বিমানের দেনার পরিমাণ ২৫০০ কোটি টাকার ওপরে। লোকসান ও দেনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি মূলধন সংকটে আবর্তিত। অবশ্য সর্বশেষ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে পাওনা হিসেবে ৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরেই বিমান লোকসান দিয়েছে ২০১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ওই অর্থ বছরে বিমানের আয় ছিল ৪ হাজার ৯৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আর ব্যয় ছিল ৫ হাজার ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ২০১৪-১৫ সালে ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লাভ করে বিমান।

২০১০-১১ অর্থ বছরে ২২৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে বিমান।

সামনে লোকসানের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসাই এখন বিমানের বড় চ্যালেঞ্জ। বিমানের বর্তমান এমডি মোকাব্বির হোসেন কি লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারবেন? আমলারা ব্যর্থ হওয়াতেই ২০০৭ সালে বিমানকে পিএলসি করা হয় এবং বাণিজ্যক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই এ পদে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ৩৫ বছর ধরে আমলারা যে প্রতিষ্ঠানটিকে চালাতে পারেননি, এটি নতুন করে বলার কিছু নেই। তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বলেই মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে এটিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করা হয়।

এখন প্রশ্ন, আবার কি বিমান সেই পুরনো পথেই হাঁটবে? প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে যোগদানের চার দিনের মাথায় গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের সভা কক্ষে তিনি প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ হয়েছিল। সেখানে তাকে দেখে টিপিক্যাল একজন আমলাই মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিমানের চতুর্থ বোয়িং উড়োজাহাজ উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, আরো দু’টি বোয়িং কেনার সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কথার বাইরে একটি কথাও বলেননি। বিমানের বর্তমান ডিজিএম পিআর তাহেরা খন্দকারের বিরুদ্ধে সহযোগিতামূলক আচরণ না করার যে অভিযোগ, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা একাধিক প্রশ্ন করলেও এমডি বারবার পেছনের তিক্ততা ফেলে সামনের দিকে তাকানোর কথা বলেন।

সত্যি বলতে একজন আমলা হিসেবে একজন যতটা দক্ষতার পরিচয়ই দেন না কেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালাতে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ লোকের কোনো বিকল্প নেই। যদি আমলা দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে তা লাভজনক সংস্থায় পরিণত করা যেত, তাহলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনেকশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), টেলিফোন শিল্প সংস্থাসহ (টেশিস) আরো যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা যুগ যুগ ধরে লোকসানি না হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতো। এখন দেখার বিষয় বর্তমান এমডি একজন আমলা হয়ে তার পুরনো সহকর্মীদের দেখানো পথে হাঁটবেন নাকি টিপিক্যাল আমলাতন্ত্রের খোলস থেকে বের হয়ে বিমানকে তিনি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পথে হাঁটতে পারবেন।

   

কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা, বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় নাজিরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারপিটসহ গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হয়েছে এক কিশোরী গৃহকর্মীকে। নাজিরা নামের ওই গৃহকর্মী এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত আনোয়ার হোসেনের বাসায়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঈদের দু’দিন পর কাজের বিনিময়ে এক প্লেট ভাত চাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অসহ্য যন্ত্রণায় এক গ্লাস পানি চাইলে বুকে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হয়। মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখে এই পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে আনোয়ার ও তার স্ত্রী।

ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নাজিরার দাদা তাকে সেখান থেকে গাইবান্ধায় নিয়ে আসেন। এরপর প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান।

জানা যায়, নাজিরা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব বালয়াপাড়ার বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ইশা খাঁ এবং অসুস্থ্য জোছনা বেগম দম্পতির কন্যা। অভাবের সংসারে কিছুটা ভার কমাতে গত রমজান মাসে প্লাবন নামের স্থানীয় যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠান বাবা-মা।

বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. শাহীন শাহ জানান, গত ১৭ এপ্রিল বুধবার নাজিরাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। তার ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ওই স্থানগুলোতে ইনফেকশন হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। তবে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভুক্তভোগী নাজিরা জানায়, কাজে যোগদানের পর থেকেই নানা অজুহাতে তাকে বেধড়ক মারধর করত গৃহকর্তা আনোয়ারের স্ত্রী। ঈদের দুইদিন কাজ শেষে খাবার চাওয়ায় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেন আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর ও গরম খুন্তি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেন তারা। খবর পেয়ে গত ১৩ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার দাদা ঢাকা থেকে আমাকে গাইবান্ধার বাড়িতে নিয়ে আসেন।

পরিবারের দাবি, দিনভর কাজের পর ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চেয়েছিলেন এক প্লেট ভাত, আর তাতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় গৃহকর্মী নাজিরার শরীরের বিভিন্ন অংশ।

নাজিরার মা জোছনা বেগম জানান, ঢাকা থেকে নিয়ে আসার পরদিন খুব অসুস্থ্য বোধ করলে নাজিরাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ এপ্রিল ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা।

বর্তমানে মেয়ের অবস্থা ভালো নয় জানিয়ে তিনি জানান, পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে রমজান মাসে প্লাবন নামের এক যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্লাবন বিমানবন্দরের উচ্চমান সহকারী আনোয়ার হোসেনের বাসায় তাকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখে। কাজে যোগদানের পর থেকেই আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নির্যাতন করতো নাজিরাকে। সর্বশেষ ঈদের পর স্বর্ণ চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গরম খুন্তি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়ার অভিযোগ করেন নাজিয়ার মা।

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উচ্চমান সহকারী আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে ওই কিশোরীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যুবক প্লাবনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিমানবন্দরে অফিস পিয়ন হিসেবে চাকরি করি। আনোয়ার স্যারের অনুরোধে তার বাসার কাজের জন্য আমার আত্মীয় নাজিরাকে গৃহকর্মীর কাজে ঢাকায় নিয়ে যাই। নাজিরা যখন কাজে যোগ দেয় এর পর থেকে আমাকে আনোয়ার স্যার আর তার সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। কোনো খোঁজখবর জানতে চাইলে তিনি গুরুত্ব দিতেন না।

প্লাবন বলেন, আমি নাজিরাকে দেখে মর্মাহত। গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সময় আমি তার সঙ্গে ছিলাম। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করছি। আনোয়ার স্যারকে ভালো মানুষ মনে করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

;

গাইবান্ধা কারাগারের অভিযুক্ত দুই কারারক্ষীকে বদলি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা কারাগারের অভিযুক্ত দুই কারারক্ষীকে বদলি

গাইবান্ধা কারাগারের অভিযুক্ত দুই কারারক্ষীকে বদলি

  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ও কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে ওই ঘটনায় তাদেরকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরকে বদলি করা হয়।

বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভিতরে কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামের সাথে মেঘনা খাতুন নামের এক নারী কয়েদির অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে ফেলায় মোর্শেদা খাতুন সীমা (৩৪), হাজতী নম্বর-৫০৮) নামের এক নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে, হাত-পা বেধে নির্যাতন করে অভিযুক্ত দুই কারারক্ষীসহ অন্যরা। শুধু তাই নয়, ওই নারী হাজতি সীমাকে কারাগারের নারী-পুরুষ উভয়ই মিলে বিবস্ত্র করে স্পর্শকাতর স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত, এমনকি কামড় দিয়ে ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে শরীরের গোশত।

এখানেই শেষ নয়, ঘটনা গোপন রাখতে দেখানো হয় জীবনণাশসহ সম্ভ্রমহানীর হুমকিও। অন্যথায় হত্যা করে হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আল্টিমেটামও দেয় সুবেদারসহ অভিযুক্তরা।

পরে এ ঘটনায় গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভিতরে নারী হাজতীর সাথে এমন লোমহর্ষক ঘটনার বণর্না তুলে ধরে অসুস্থ ওই নারী হাজতির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ১৬ এপ্রিল গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী হাজতির মা করিমন নেছা।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা প্রায় ৫ বছর যাবৎ গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আবদ্ধ রয়েছেন। কারাগারে অবস্থানকালে কিছুদিন পূর্বে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম এবং মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলে নারী হাজতি সীমা।

এতেই সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন তার (সীমার) উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং তারা প্রতিনিয়ত ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে কারাগারের ভিতরেই সীমাকে খুন-জখমে হত্যা করে আত্মহত্যা করে মৃত্য হয়েছে কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্য হয়েছে মর্মে ভয়-ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করতে থাকে। হাজতি সীমা খাতুন বারবার তাদেরকে (সুবেদার আশরাফুল-মেঘলা) ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বলবেনা মর্মে জানানোর পরেও সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন আতঙ্কিত হয়ে কারাগারের ভিতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া এসবের একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল সীমাকে জিম্মি করতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্তসহ হাত এবং পড়নের কাপড় ধরে টানা-হেচড়াসহ একাধিকবার শ্লীলতাহানী ঘটায়। পরে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দিয়েও আশরাফুলের মনোবাসনা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়ে সুবেদার আশরাফুলসহ তার সহযোগীরা হাজতী সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে নেয়। অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার নষ্ট করে ভেঙ্গে দেয়।

এতসবের পরে যখন হাজতি সীমা এসব ঘটনা জেল সুপার সাহেবকে বিচার দিবে মর্মে জানায়, তখন সুবেদার আশরাফুল প্রকাশ্যভাবে জেলার সাহেব তার লোক, সে (সুবেদার) নিজের টাকা খরচ করে জেলারকে এই কারাগারে বদলি করে এনেছেন বলে জানিয়ে জেলার তার (সুবেদারের) কোন বিচার করতে পারবেনা বলে ভয়-ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করে। এসবের এক পর্যায়ে চলতি বছরের গত ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা, আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা পরিকল্পিতভাবে জেলা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে অতর্কিত সীমার মাথায়, কোমড়ে বুকে, পিঠে, দুইপায়ের হাটুসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাথারী ভাবে মারধর করে। মহিলা কয়েদি মেঘলা ভুক্তভোগী সীমার ডানহাতের দাপনায় কামড় দিয়ে মাংস ছিড়ে নেয়।

শুধু তাই নয়, সুবেদার আশরাফুল, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাগণ কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরে প্রবেশ করে সীমাকে টেনে-হেচড়ে বের করে মহিলা ইউনিটের বারান্দা হতে সেলের ভিতরে নিয়ে হাজতি সীমার দুইহাতে হ্যান্ডকাপ ও দুই পা রশি দিয়ে বেধে বিবস্ত্র করে লাঠি দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থান (দুই উরু), পায়ের পাতায় পেটাতে থাকে। এ সময় নির্যাতনকারীরা এসবের কোনও ঘটনা কারাগারের বাহিরে প্রকাশ হলে সীমাকে মারপিটে হত্যা করে হৃদরোগ মৃত্যু হয়েছে বলে চালাবে মর্মে আবারো হুমকি দেয়।

এছাড়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্যাতিতা হাজতির মা ও অভিযোগকারী করিমন নেছা একাধিকবার হাজতি মেয়ের সাথে দেখা করতে গাইবান্ধা কারাগারে আসলেও মেয়ের সাথে সাক্ষাত করতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে হাজতী সীমা খাতুনের গাইবান্ধা আদালতে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাত পান মা করিমন নেছা। এদিন সীমা মায়ের কাছে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন দেখায়।

পরে অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে গত ১৬ এপ্রিল জেলা কারাগারে ঘটনা তদন্তে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো: মশিউর রহমান।

জানতে চাইলে এদিন তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে গতকাল বিষয়টি তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব। এর পরেই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর এবং নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুনকে ঠাকুরগাঁও কারাগারে বদলি করেছে কারা প্রশাসন।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।

;

ইউএস-বাংলা ইতিহাস স্থাপন করে আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করেছে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ইউএস-বাংলা ইতিহাস স্থাপন করে আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করেছে

ইউএস-বাংলা ইতিহাস স্থাপন করে আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করেছে

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থা হিসেবে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করে ইতিহাস স্থাপন করেছে। আজ ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার বাংলাদেশ এভিয়েশন তথা বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ইতিহাসের এক অনন্য নজির স্খাপন করেছে। বর্তমানে দুবাই, শারজাহ এর পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৃতীয় গন্তব্য আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করেছে ইউএস-বাংলা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদার কারনে দেশের অন্যতম এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা আবুধাবীতে ঢাকা থেকে সোম, বুধ, বৃহস্পতি ও শনিবার এবং চট্টগ্রাম থেকে মঙ্গল, শুক্র ও রবিবার বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে আবুধাবীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আবুধাবীর স্থানীয় সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে অবতরণ করবে।


আবুধাবী থেকে স্থানীয় সময় রাত ১০টা ১০মিনিটে ছেড়ে মঙ্গল, বুধ, শুক্র ও রবিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সোম, বৃহস্পতি ও শনিবার চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে অবতরন করবে।

আজ ইউএস-বাংলার উদ্বোধনী ফ্লাইট হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে আবুধাবীর উদ্দেশ্যে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে ১৭৪ জন যাত্রী নিয়ে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ যাত্রা করে। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রার পূর্বে ঢাকা থেকে বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ আবুধাবীতে স্থানীয় সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে। এবং আবুধাবী থেকে স্থানীয় সময় আজ রাত ১০টা ১০মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করবে এবং ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।


বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত দু’দেশের বন্ধনকে আরো বেশী সুদৃঢ় করবে। আবুধাবী ফ্লাইট যাত্রার পূর্বে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ যাত্রীদের বিদায় জানান।

দুবাই, শারজাহ ছাড়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গন্তব্য মাস্কাট, দোহা, প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মালে, পর্যটক বান্ধব অন্যতম গন্তব্য ব্যাংকক ও চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর গুয়াংজু, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা ও চেন্নাইতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

এখানে উল্লেখ্য আজ ১৯ এপ্রিল থেকে ঢাকা থেকে চেন্নাই রুটে অতিরিক্ত চারটি ফ্লাইটসহ সপ্তাহে মোট ১১ টি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে।

;

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ঋণ আর নয়, এখন তাদের ক্ষতিপূরণ দেবার পালা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ঋণ আর নয়, এখন তাদের ক্ষতিপূরণ দেবার পালা

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ঋণ আর নয়, এখন তাদের ক্ষতিপূরণ দেবার পালা

  • Font increase
  • Font Decrease

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সম্মেলনের প্রাক্কালে সারাবিশ্বে নাগরিক সমাজ তাদের ঋণ ব্যবস্থার সমালোচনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করছে আজ ১৯ এপ্রিল। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এছাড়াও আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় সারাবিশ্বে একযোগে টুইটারে প্রতিবাদ বার্তা প্রকাশ করবে বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ। তাদের মূল দাবি, জনগণের ওপর আরোপিত অনৈতিক ঋণ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ, বিশ্বের দরিদ্রদের প্রতি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দেনা রয়েছে।

এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি), বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও সিপিআরডি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান এবং সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ। সভায় বক্তব্য রাখেন, জয় বাংলা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লাভলি ইয়াসমিন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের ইকবাল ফারুক, বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আরা রুমি, সিপিআরপি’র শেখ নূর আতাইয়া রাব্বি, এবং বাংলাদেশ ভুমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি: ফয়েজ আহমেদ খান।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ঋণ প্রস্তাব করা হচ্ছে। এসমস্ত সমস্যার জন্য আমরা কোনো অংশে দায়ী নই। তাহলে এর জন্য আমরা কেন ঋণ গ্রহন করব? এর জন্য যারা দায়ী, তাদের উচিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আরা রুমি বলেন, উন্নত দেশ জার্মানি যেখানে ঋণের সুদ দেয় গড়ে মাত্র ১.৫%, আমেরিকা দেয় ৩.১%,  সেখানে আফ্রিকার দেশগুলো গড়ে সুদ দেয় ১১.৬%, এশিয়ার দেশগুলো ৬.৫%। যত দরিদ্র দেশ, তাদের সুদের হার তত বেশি। এর কারণ, পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর ঋণ না দেয়ায় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে তারা উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করছে।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো ঋণ শোধ করে মূলত তাদের রপ্তানী আয় থেকে। গত এক দশকে তাদের সেই সক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছে। ২০১০ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ ছিল তাদের রপ্তানীর ৭১%, যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১১২%। অর্থাৎ, ইতিমধ্যে আয়ের তুলনায় অনেক বেশি ঋণ তারা ইতিমধ্যে করে ফেলেছে এবং ঋণ করেই যাচ্ছে।

সভা সঞ্চালনাকালে কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই তাদের সম্পদ শেষ করে ফেলছে। বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা ১৩৯টি দেশ তাদের রাজস্ব বাজেটের ৩৫% ব্যয় করে এই ঋণ পরিশোধ খাতে। নিম্ন আয়ের দেশ ও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের ব্যয় হয় যথাক্রমে ৫৭.৫% এবং ৪৪.৫%। তিনি বলেন, আমরা দরিদ্র জনগণের উপর আরোপিত এই গণঋণ প্রত্যাখ্যান করছি, কারণ দারিদ্রের পেছনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দায় রয়েছে। ঋণ নয়, তাদের উচিত ঐতিহাসিক দেনা পরিশোধ করা।

আজ সকাল দশটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে, আজ সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় এক যোগে টুইটারের মাধ্যমে যে প্রতিবাদের ঝড় তোলা হবে, তাতে সর্বস্তরের সকল মানুষকে অংশগ্রহনের আহ্বান জানানো হয়।

;