মতিঝিল-ফকিরাপুলের ক্লাবগুলোতে তালা
ফুটবল কিংবা ক্রিকেট ক্লাবের আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে তোলা রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার ক্লাবগুলোতে এখন ঝুলছে তালা।
প্রধান ফটকের পাশাপাশি সবকয়টি ক্লাবের গেইটে র্যাব-পুলিশের অভিযানের পর থেকে ক্রিকেট-ফুটবলে খ্যাতনামা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে তালা ঝুলছে। একই কারণে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাব এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবেও তালা ঝুলছে।
এখানকার ক্লাবগুলোতে সর্বশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর জুয়া খেলা হয়েছে। ওইদিন ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযানের পর থেকেই এসব ক্লাবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ক্লাবগুলোতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ক্লাবগুলোর কর্মচারীদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা ওয়ান্ডার্সক্লাব এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে দিয়ে দেখা গেছে—ক্লাব দুটোর সামনের রাস্তাটি বিভিন্ন রঙের লাইটিংয়ে সাজানো। তবে ক্লাব দুটির সব কয়টি প্রবেশ পথে তালা দেওয়া।
একই অবস্থা দেখা গেছে, আরামগবাগ ক্রীড়া সংঘেও। এ ক্লাবে দুপুর ৩টার দিকে অভিযান চালিয়ে কিছু নগদ টাকা, জুয়ার চিপস এবং ক্যাসিনোর সামগ্রী জব্দ করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ক্লাবটির সভাপতি ৯ ওয়ার্ডের কমিশনার একে মমিনুল হক সাঈদ।
মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলী নোমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমরা আশ্চর্য হয়েছি যে, খেলাধুলার জন্য প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে জুয়ার আসর বসত। মতিঝিল থানা থেকে ৩-৪ গজ দূরে এমন জায়গার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ছিল এটা আমাদের কাছে অবাক বিষয় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এসব জায়গায় আমরা আসতাম না কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঢুকতে হাইকোর্টের অনুমতি লাগত।’
একই সময়ে মহামেডান, দিলকুশা এবং ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ক্লাবগুলো থেকে নগদ অর্থ, মদ, জুয়া এবং ক্যাসিনোর সব ধরনের সরঞ্জাম জব্দ করেছে পুলিশ। প্রতিটি কক্ষে সাজানো রয়েছে সরঞ্জাম।
জুয়ার কাগজপত্রাদি যাচাই করে দেখা গেছে, সর্বশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর জুয়া খেলা হয়েছিল ক্লাবগুলোতে। এ কারণে গত দুদিন ক্লাবগুলোতে তালা ছিল, আর তাতে রুমগুলো থেকে এক ধরনের গুমোট গন্ধ বের হচ্ছিল।
আরামগবাগ ক্রীড়া সংঘ এবং দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম কম থাকলেও ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে ছিল বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম। এখান থেকে পুলিশ, নগদ এক লাখ টাকার বান্ডেল ও সীসার সরঞ্জাম জব্দ করেছে।
এছাড়াও নেশা জাতীয় অনেক দ্রব্যাদি জব্দ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ক্লাবটির সভাপতি মহানগর দক্ষিণের যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন সম্রাট।
ঠিক তার পাশেই অবস্থিত মোহামেডান ক্লাবে তালা ভেঙে দুপুর ৩টার দিকে মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোনালিসা বেগমের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৯ ওয়ার্ড কমিশনার এই ক্লাবের সভাপতি। দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ।
অভিযানটি পরিচালনা করেন মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন। অভিযান শেষে আবারও সবকয়টি ক্লাবে তালা দেওয়া হয়। আর সরঞ্জাম আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সার্বিক বিষয়ে মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন জানান, ক্লাবের ভেতরের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে এখানেও নিয়মিত ক্যাসিনো বসত।
রাজধানীর এসব ক্লাবে ক্যাসিনো কতদিন ধরে চলছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আসা মাত্রই অভিযানে এসেছি। কতদিন ধরে চলছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত এসব বিষয় তদন্ত করে দেখব।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। পরে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: গুলশানের লাইফস্টাইল হেলথ ক্লাবে অভিযান, আটক ১৯
আরও পড়ুন: যাদের নিয়ন্ত্রণে চলত মতিঝিলের ক্লাবপাড়া!