ইমেজ সংকটে ডিএনসিসি
একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। কখনো পরিবারের সদস্যদের অপকর্ম আবার কখনো কাউন্সিলররা নিজেরাই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি ডিএনসিসি ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান আটকের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এই পাগলা মিজানই প্রথম না। এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্যানেল মেয়র ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফার ছেলে রফিকুল ইসলাম রুবেল ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তখন প্যানেল মেয়র বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন এ কাউন্সিলর।
কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও নীরব মেয়র আতিকুল ইসলাম। জানা গেছে, কোনো কাউন্সিলরই মেয়রের পরামর্শ কিংবা নির্দেশনা শোনেন না। বরং মেয়র তাদের ম্যানেজ করে চলছেন। আগামী নির্বাচন যেহেতু আসন্ন, তাই কারও সঙ্গে বিবাদে না জড়িয়ে বরং ‘আপস করে চলি’ নীতিতে চলছেন মেয়র। দেশের বাইরে থাকায় এই বিষয়ে মেয়রের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: মিজানের বাসায় অস্ত্রসহ ৬ কোটি টাকার চেক
অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে উত্তরের আরও বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে মিরপুর অঞ্চলের কয়েকজন কাউন্সিলর রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে মার্কেট দখল, জায়গা দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের এমন কাণ্ডে ডিএনসিসি'র ইমেজ সংকটের কথা স্বীকার করেন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, 'যাদের নিয়ে মেয়র কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে যদি অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে বা কেউ গ্রেফতার হন তাহলেতো সেটা লজ্জার। সবকিছু ওই প্রতিষ্ঠানের ওপরই বর্তায়।'
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এরইমধ্যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বেশকিছু কাউন্সিলর। তাদের মধ্যে কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান এখন রিমান্ডে রয়েছেন। অন্যদিকে আরও কয়েকজন কাউন্সিলর তালিকায় রয়েছেন। এসব কাউন্সিলরের নিয়ে ইমেজ সংকটে সিটি করপোরেশন।
জানা যায়, ক্ষমতায় থেকে জমি দখল, মার্কেট দখল, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত কাউন্সিলরগণ। যে সকল কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তাদের বিষয়ে মেয়র কী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তার একটি সুস্পষ্ট আইনি ব্যাখা রয়েছে।
অভিযুক্ত কাউন্সিলরদের বিষয়ে আইন কী বলে- স্থানীয় সরকার আইনের (সিটি করপোরেশন)-২০১৯ ধারা ১৩ (খ) বিধি অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হন তাহলে তাকে অপসারণ করার ক্ষমতা রয়েছে। আইনের ব্যাখায় অসদাচারণ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহারকে উল্লেখ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী বিধি নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি ও ইচ্ছাকৃতভাবে অপশাসনকে বোঝানো হয়েছে।
আইনের ১৪ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে করপোরেশনের মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে। তবে কাউকে অপসারণ করা হলে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উক্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণের আদেশটি স্থগিত থাকবে।
আইনের (৬) উপ বিধিতে বলা হয়েছে, আইনের অন্যান্য বিধানে যাই থাকুক না কেন অপসারিত কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কার্যকালের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আইনে যেভাবে আদেশ দেওয়া আছে সেভাবেই হবে। কোনো কাউন্সিলর অনুপস্থিত থাকলে মেয়র তার পার্শ্ববর্তী কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দিতে পারবেন।'
আরও পড়ুন: পাগলা মিজান ৭ দিনের রিমান্ডে