‘অকারণে’ আটকে আছে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ
হাতিরঝিলে অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ৬ মাস আগে। গত ১৬ এপ্রিল ভবন মালিকদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার পর বিভিন্ন ফ্লোরসহ প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ভবনটি ভাঙার কাজে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। এর সঠিক ব্যাখ্যাও নেই মন্ত্রণালয় বা রাজউকের কাছে।
বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে ২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ভবন ভাঙার কাজের জন্য উপযুক্ত দরদাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তার ছয় মাস পার হয়ে গেলেও ঠিকাদার চূড়ান্ত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
সেই সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছিলেন, আমাদের দেশেই এমন প্রযুক্তি আছে যার দ্বারা এক ঘণ্টার ভেতরে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে স্তূপ আকারে ওই জায়গায় বসে পড়বে।
মন্ত্রী আরও বলেছিলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যববহার করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কার্যাদেশ দেওয়া হবে এবং তিন মাসের মধ্যে সরানো হবে ভবনের ধ্বংসস্তূপ।
মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে ভবন ভাঙার কাজের বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও, ছয় মাসেও সেই কাজের অগ্রগতি নেই।
শ ম রেজাউল করিম এও বলেছিলেন, ভবন ভাঙায় যদি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান না পাওয়া যায় তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া গেলে আমরা নিজেরাই ভাঙব। ভাঙার ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ এখন কী অবস্থায় আছে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এটি একটি বড় ভবন। এই ভবন ভাঙতে বিপুল পরিমাণ টাকা লাগবে। সব কিছুর ব্যবস্থা হচ্ছে। কিছু ধাপ পার হয়ে এগোতে হয়। তাই সময় লাগছে।
তিনি বলেন, দুটি বেইজমেন্টসহ ১৬তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনায় আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। সেটা প্রায় চূড়ান্ত। আশা করি দ্রুত কাজটি শুরু হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমরা দরদাতা প্রতিষ্ঠান মোটামুটি চূড়ান্ত করেছি। তাদের কাছে ভাঙার পদ্ধতি জানতে চেয়েছি। তারা আমাদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিলেই পরবর্তী ধাপে যাব। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। একটু সময় লাগছে।
প্রসঙ্গত, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে ২০০৬ সালে নির্মাণ করা হয় বেইজমেন্টসহ ১৬তলা বিজিএমই ভবন। যা উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর পরিপন্থি।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএ’র ওই ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়।
রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সবশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।