‘জন্মের দায়ে কেউ যেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, নারী, পুরুষ বা হিজড়া হয়ে জন্ম নেওয়া- এতে তার নিজের কোন দায় নেই। কাজেই জন্মের দায় দিয়ে কাউকে যেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না করি। পরিবারের বন্ধনটা আরও যেন মজবুত করি।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘হিজড়া শব্দকোষ’ ও ‘রূপান্তরিত মানুষের গল্প’ প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের সহযোগিতায় সুইডেন দূতাবাস ও সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন প্রকাশনা দুটি প্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় জাদুঘরের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামসুজ্জামান খান, ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী, বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ারের পরিচালক সালেহ আহমেদ। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন ড. সেলিনা হোসেন।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতাটাকে কাজে লাগাতে চাই। যার যার জায়গা থেকে সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। আসুন পারিবারিক বন্ধনটাকে আরও মজবুত করি। পরিবারের ভেতরে থেকে বোধ তৈরি করি আমাদের সন্তানরা যেন আমাদের বুকে থাকে। সে ছেলে না মেয়ে, নাকি হিজড়া, যেহেতু আমাদের কারো জন্মের দায় নিজের না, সুতরাং কাউকে জন্মের দায় দিয়ে যেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না করি।
তিনি বলেন, মানবিক মূল্যবোধের আসলে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, যে অবক্ষয় তৈরি হয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার।
হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করার অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নাসিমা বেগম বলেন, ২০১২ সালের শুরুর দিকে আমি যখন সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিজি ছিলাম তখন বিষয়টি আমার গোচরে আসে।
হিজড়াদের সুরক্ষায় আইন সম্পর্কে বলেন, আইন বা নীতি পরিবর্তনশীল। মানুষকে মানুষ হিসেবেই চিন্তা করা উচিত। তখন দাবি ছিল হিজরা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। গেজেট হয়েছে এখন একটা আইন হওয়া উচিত। আমাদের আগে ভারত, পাকিস্তানে হিজড়াদের সুরক্ষায় আইন হয়েছে। কাজেই আমাদের দেশে না হওয়ার কোনো কারণ নাই।
শামসুজ্জামান খান বলেন, বই দুটি আমাদের সমাজের ‘ট্যাবো’র জায়গাটায় নতুন করে চির ধরাবে, ভাঙন ধরাবে। ফলে আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তভুক্তিমূলক উন্নয়ন হবে।
সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক স্বীকৃতির জন্য পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি। যাতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একই জনগোষ্ঠীর মানুষকে দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করে।