শিশু নির্যাতনে ‘রেড মার্কে’ সিলেট অঞ্চল!
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের শিকার পাঁচ বছর বয়সী তুহিন। নিজ বাড়ির উঠানে ডালিম গাছে ঝুলে থাকা শিশু তুহিনের মৃতদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। শুধু সুনামগঞ্জের তুহিন নয়, এমন বর্বরোচিত হত্যার শিকার হচ্ছে আরও অগুণতি শিশু।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্য বলছে, সারা দেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। তালিকায় এরপরই আছে সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী ও মুন্সীগঞ্জ।
সিলেট অঞ্চল তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও সবচেয়ে নির্মম ও পাশবিক কায়দায় শিশুদের হত্যা করা হয়েছে এই অঞ্চলে।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে হত্যাকারীরাই সেই নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারা দেশে চরম ক্ষোভ ও আলোচনার সঞ্চার হয়।
এ ঘটনায় দেশব্যাপী মানুষ ফুঁসে উঠলে মাত্র ১৭ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসি ও সাতজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বাহুবল উপজেলার জাকারিয়া আহমেদ শুভ, মনির মিয়া, তাজেল ও ইসমাঈল হোসেন। নিখোঁজের ৫ দিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামের ইচাবিল নামক স্থানে মাটিচাপা অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
তবে শুধু সিলেট অঞ্চলেই নয়, সারাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৩৯৯ শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। এমন তথ্য দিচ্ছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
তবে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানী শহর ঢাকাতে কোটি মানুষের বসবাস। অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের মতো ঢাকায় শিশুরাও নিষ্ঠুরতার শিকার বেশি হচ্ছে। কিন্তু সিলেট অঞ্চলে শিশুদের ওপর নির্যাতন বা হত্যার পেছনে কতিপয় মানুষের বিপুল পরিমান বিত্তবৈভব, সামাজিক কুসংস্কার আর নেতিবাচক আচরণ দায়ী।
শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন মো. মাহবুব উল আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বিচার হয় না বলেই শিশুদের ওপর নৃশংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু এলাকা আছে অপরাধপ্রবণ। ওই সব এলাকায় যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায় তবে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। এটা সিলেট অঞ্চল হোক কিম্বা অন্য কোন জায়গায়।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অপরাধ যেখানেই হোক না কেন প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত বিচার হলে অপরাধীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। এতে শিশুদের ওপর নিষ্ঠুরতা কমে আসবে।
সিলেট অঞ্চলে শিশু নির্যাতনের ঘটনা কেন এত বেশি ঘটছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, শুধু সিলেট অঞ্চল নয়, যেকোন সময় যেকোন জায়গায় অপরাধের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে কিনা সেটা আসল কথা। এই অঞ্চলে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, সেটা আগেও পায়নি।