বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পরিবর্তন, আশ্বিন এখন ৩১ দিনে
দীর্ঘদিন চেষ্টার পর বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করেছে বাংলা একাডেমি। এতে ৩০ দিনের আশ্বিন মাস এখন ৩১ দিন হয়ে গেল। বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে ৩১ দিন হিসাবে আশ্বিন মাস গণনা শুরু হয়েছে। চলতি ১৪২৬ বঙ্গাব্দে এবারই প্রথম আশ্বিন মাস ৩১ দিন ধরা হলো।
বাংলাদেশে ইতিহাসের স্মরণীয় দিনগুলোর ক্ষেত্রে বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির তারিখ ভিন্ন হতো। গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী অনেক বছর আগের একটি দিন বাংলা মাসের যে তারিখে পড়ত, এখন তা ভিন্ন তারিখে পড়ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে অসঙ্গতি। বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিতে তারিখ সমন্বয় করে ফিক্সড (অভিন্ন ও স্থায়ী) করতেই বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির তারিখের গড়মিলের কয়েকটি উদারহণ দিয়ে বাংলা একাডেমির একটি সূত্র জানায়, বাঙালি জাতির গৌরবময় বিজয় দিবস ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল পহেলা পৌষ। অথচ বিগত কয়েক বছর বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় দিনটি পড়ত ২ পৌষে। ভাষা আন্দোলনের দিনটি নিয়েও ছিল দুই বর্ষপঞ্জিতে অসঙ্গতি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল ৮ ফাল্গুন। অথচ সেটি ৯ ফাল্গুনে পড়ত। এসব অসঙ্গতি দূর করতেই পরিবর্তন আনা হলো বাংলা বর্ষপঞ্জিতে।
সূত্রটি আরো জানায়, এখন থেকে ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনে। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিতে লিপইয়ারে ফাল্গুন হবে ৩০ দিনে। আগামী ২০২০ ইং অধিবর্ষ (লিপইয়ার) হওয়ায় সামনের বছরই আমরা পাচ্ছি ৩০ দিনের ফাল্গুন মাস। এতোদিন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস পূর্ণ হতো ৩১ দিনে। নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আশ্বিনও ৩১ দিন হিসাবে গণনা করা হবে। আর কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও চৈত্র মাস হবে ৩০ দিনে।
নতুন পঞ্জিকা অনুযায়ী এখন থেকে বিজয় দিবস ১৯৭১ এর মতোই ১৬ ডিসেম্বর হবে পহেলা পৌষে, স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ হবে ১২ চৈত্রে আর একুশে ফেব্রুয়ারিও ৮ ফাল্গুনেই পড়বে। সেই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ৮ মে পড়বে ২৫ বৈশাখে এবং নজরুলের জন্মদিন ২৫ মে পড়বে ১১ জ্যৈষ্ঠে।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ এর দশকে শুরু হয় বাংলা দিনপঞ্জির বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্কার। ভারত সরকার গঠিত পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান ছিলেন জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। মেঘনাদের সংস্কারের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে বাংলা ও গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জির সমন্বয় করে বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি। তবে মেঘনাদ সাহার প্রস্তাবিত পঞ্জিকা ভারত গ্রহণ না করায় দুই বাংলায় দুই রকম দিনপঞ্জি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার ছিল সময়ের দাবি। এটি সংস্কার করা বাঙালিদের একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করে বাংলা একাডেমি।