অভিভাবকহীন প্রবাসী পরিবার টার্গেট থাকত রাজীবের
মোহাম্মদপুরের সুলতান হিসেবে খ্যাত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। রাজীব নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে হলেও কাউন্সিলর হওয়ার পর তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়।
যেখানে ৬ বছর আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে তিনি মাত্র ৬ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সস্ত্রীক একটি বাসায় থাকতেন। কাউন্সিলর হবার পর রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় রাজীবের। আজ সেই হাউজিংয়ে তার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার নামে রয়েছে একাধিক বাড়ি। গাড়ির প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকায় বিদেশি একাধিক ব্র্যান্ডের গাড়িও রয়েছে রাজীবের গ্যারেজে।
চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও দখলদারিত্ব করে রাজীব বিশাল এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তবে রাজীবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে 'দখলদারিত্ব'। বলা হয় মোহাম্মদপুর এবং এর আশপাশের এলাকায় কোনো বাড়ি বা জমির ওপর রাজীবের চোখ পড়লে সেই জায়গা বা বাড়ি যেকোনো ভাবেই হোক না কেন দখল নিতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দখলদারিত্বের ক্ষেত্রে রাজীবের টার্গেটের শীর্ষে থাকত অভিভাবকহীন প্রবাসী পরিবার। যেসব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রবাসে থাকতেন এবং যাদের বাড়ি ও জমি রয়েছে; সেসব পরিবারের সম্পত্তি দখলের জন্য টার্গেট করত রাজীব। বাড়িতে শক্ত কোনো অভিভাবক না থাকায় এবং পুরুষ সদস্যরা প্রবাসে থাকায় পরিবারের মহিলাসহ অন্যান্য সদস্যদের সহজেই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পত্তি দখলে নিতেন রাজীব। অভিভাবক না থাকায় এসব জমি বা বাড়ি তার দখলে আনতে খুব বেশি শ্রম দিতে হতো না বলে প্রবাসীদের পরিবারকে টার্গেট করতেন রাজীব।
আরও জানা গেছে, এইসব অভিভাবকহীন প্রবাসীদের সম্পত্তির খোঁজ করার জন্য রাজীবের একটি বিশাল গ্যাং রয়েছে। কাউন্সিলর নির্বাচন পাসের পর স্থানীয় বস্তির ছেলেদের দিয়ে এই গ্যাং তৈরি করেন রাজীব। গ্যাংয়ের সদস্যরা মোহাম্মদপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ও এর আশপাশের এলাকার প্রবাসীদের জমি ও বাসা বাড়ির খুঁজে এনে রাজীবকে দিতেন। পরে রাজীব প্রবাসীদের এসব সম্পত্তি দখলের জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিতেন।
কোনো সময় নামমাত্র মূল্য পরিশোধে করে, আবার অনেক সময় জোর করে দখল নিতেন প্রবাসীদের এসব জায়গা-জমি। আর এসব বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ ভুক্তভোগীরা নিতে চাইলে, তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিতেন রাজীবের গ্যাং সদস্যরা। তাই কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও করত না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কাউন্সিলর রাজীবের ওঠা বসা ছিল। তাই তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছুই বলত না। তবে আমরা বিভিন্ন সময় শুনেছি এবং দেখেছিও সে অনেক প্রবাসীদের জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে। নামমাত্র মূল্যে প্রবাসীদের বাড়ি বা জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতো রাজীব। এছাড়া জোর করেও অনেক জায়গা জমি সে দখল করেছে।
রাজীবের দখলদারিত্বের প্রকৃত তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে না থাকলেও তিনি অনেক বাড়ি বা জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজীবের দখলদারিত্বের অভিযোগের বিষয়ে র্যাব-১ সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, মোহাম্মদপুর ও এর আশপাশের এলাকায় রাজীবের বিরুদ্ধে দখলদারিত্বের অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষে এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।
আরও পড়ুন: কে এই ভিআইপি কাউন্সিলর রাজীব!