‘গৃহস্থলে ৪৬.৯৪ শতাংশ গৃহকর্মী শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত’
এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এডুকোর একটি নমুনা জরিপ/বেইজলাইন সার্ভেতে দেখা গেছে ৪৬.৯৪ শতাংশ গৃহকর্মী গৃহস্থলে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে এডুকো আয়োজিত ঢাকা শহরের গণপরিবহনে এবং গৃহকর্মী কাজে নিয়ােজিত শিশুদের নিয়ে করা একটি নমুনা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই নমুনা জরিপটি ঢাকা শহরের ১৫টি থানায় করা হয়। এই তথ্যটি উপস্থাপন করেন জরিপের কনসালটেন্ট শরিফউদ্দিন খান ।
এতে তিনি দেখান যে ৩৫.৫১ শতাংশ শিশু এর ফলে মানসিক ব্যাধিতে ভুগে ও ৬৮.৪৯ শতাংশ শিশু প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম মৌখিক শাস্তির শিকার হচ্ছে। তাছাড়া ১৭.১৪ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
জরিপে আরো উঠে এসেছে, গণপরিবহন সেক্টরে কাজ করা ৬৮.৪৯ শতাংশ শিশুরা প্রতিনিয়ত চালক এবং যাত্রীদের কাছে মৌখিকভাবে অপমানের শিকার হচ্ছে। ৬৪.০৪ শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৩৬.৯৯ শতাংশ শিশু মানসিক রোগে ভুগছে।
বেজলাইন সার্ভে দেখা গেছে, বর্তমানে ঢাকা শহরের ৩১টি সড়কে এক হাজার ৬৪২ জন শিশু লেগুনা বা গণপরিবহনে কাজ করে যাচ্ছে। যার মধ্যে আনুমানিক এক হাজার ৬৪ জন শিশু হেলপার হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া ৮৩.৬৫ শতাংশ গৃহকর্মী এবং ৬৯.৩৮ শতাংশ পরিবহন সংস্থায় কর্মরত শিশুরা যাদের অধিকাংশের বয়স ৮-১৩ এর মধ্যে।
সার্ভেতে আরও দেখা গেছে, শিশুশ্রমে নিয়ােজিত শিশুদের অভিভাবকরা শিশুশ্রম সংক্রান্ত আইন সর্ম্পকে কোন ধারনা নেই। যদিও অধিকাংশ মালিক এই সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে ধারনা রাখেন।
শিশুশ্রমিকদের শিক্ষার ব্যাপারে দেখা গেছে, ৫৮.৭৩ শতাংশ গৃহকর্মী এবং ৮২.৬৫ শতাংশ গণপরিবহন কর্মী কোনদিন স্কুলে যায়নি। ৯৬.৪৩ শতাংশ গৃহকর্মী এবং ৯৯.৩২ শতাংশ গণপরিবহন কর্মী কারিগরি শিক্ষাও পায়নি।
শিশুশ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যাপারে সার্ভেতে দেখা গেছে, গৃহকর্মে নিয়ােজিত এবং পরিবহন ক্ষেত্রে নিয়মিত ৮৩.২৭ শতাংশ শিশুদের কোন চিকিৎসার সুযােগ দেওয়া হয় না। তারা যখন অসুস্থ হয় নিজেদের খরচে লােকাল ফার্মেসি থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. আজিমউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘শিশুশ্রম নিরসনে আমরা যেভাবে কাজ করতে পারি, তা হলো শিশুশ্রম এর উপরে যেসব লিগ্যাল আইন আছে সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন করা। এতে শিশুশ্রম অনেকটাই কমে যাবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবুল হক বলেন, ‘শিশুশ্রমিক সব বন্ধ করা যাবে না বা বন্ধ করা উচিত হবে না। কারণ একজন কাঠমিস্ত্রির ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি, সে যদি তার বাবার পেশায় থাকতে চাই তাহলে সেই শিশু শ্রমিককে আমাদের বন্ধ করা উচিত হবে না। শিশুশ্রম বন্ধের ব্যাপারে আমাদের ঘর থেকে শুরু করতে হবে। আমাদের বাসার গৃহকর্মীদের সঙ্গে আমরা কি ধরনের আচরণ করি সেটিও মাথায় রাখতে হবে। তাই আগে নিজেদের ভিতরে পরিবর্তন আনতে হবে শিশুশ্রম বন্ধের ব্যাপারে।’
এডুকোর কান্ট্রি ডিরেক্টর জনি এম সরকারসহ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।