অবসরপ্রাপ্তদের মৃত্যুর পরও পেনশন পাবেন স্বামী বা স্ত্রী
সরকারি চাকরি শেষে শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া (সমর্পণ) অবসরপ্রাপ্তদের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী বা বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তানরাও পেনশন সুবিধা পাবেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনটির গত ২৮ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশন পুনঃস্থাপিত হয়ে থাকলে তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী বা বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) পুনঃস্থাপিত পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এছাড়া তাদের চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রাপ্যতার বিষয়ে অর্থ বিভাগের ২০১৭ সালের ৩ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুসরণীয় হবে।
শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম গত বছর উল্লেখিত সুবিধা পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করে। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরামের নেতারা এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন পেনশন পুনঃস্থাপনের আবেদন করে। এছাড়া একই সুবিধা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আলাদাভাবে আবেদন করেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জানা গেছে, এ সুবিধার আওতায় আসবেন প্রায় ২০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। এ জন্য সরকারের পেনশন খাতে অতিরিক্ত ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবরের অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্তের পর তাদের পেনশন পুনঃস্থাপন করা হবে। প্রচলিত পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসরণ করে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের নতুন পেনশন সুবিধাদি নির্ধারণ করা হবে। আর পেনশন পুনঃস্থাপনের সুবিধা ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা যেতে পারে। তবে ওই তারিখের আগের কোনো বকেয়া আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শতভাগ’ পেনশন বিক্রি বা প্রথা চালু হয়। আর ২০১৭ সালের ৩০ জুন এ পদ্ধতি বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি একই বছরের ১ জুলাই থেকে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের বিধান চালু করা হয়। দীর্ঘ ২৩ বছরে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশনের একশ’ ভাগ টাকা তুলে নিয়ে অবসরে গেছেন। বর্তমানে এসব চাকরিজীবী বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী দুটি উৎসব বোনাস, বাংলা নববর্ষ ভাতা ও মাসিক চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন।
শতভাগ পেনশন উত্তোলনের পর ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে- এমন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৩৮ জন। এই প্রস্তাবটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হলে তাদের পেনশনবাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পেনশন সুবিধাভোগীরা ইনক্রিমেন্ট পাবেন। ফলে ওই হিসাবে প্রস্তাবিত সুবিধার আওতায় ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য সরকারের আরও অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। ফলে এ সুবিধা দিতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা।